# মো. জাহিদুল ইসলাম, গোদাগাড়ী প্রতিনিধি………………………………………..
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে লাম্পি স্কিন রোগের (এলএসডি) প্রকোপ বেড়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে গরু। এতে চরম আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন কৃষক ও খামারিরা। তবে আতঙ্কিত না হয়ে খামারিদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, লাম্পি স্কিন রোগ আক্রান্ত হয়ে উপজেলায় গত ১০ দিনে কিছু গরু চিকিৎসা নিয়েছে। এছাড়া টিকা দেওয়া হয়েছে প্রায় ১ হাজার। আক্রান্ত গরুর চিকিৎসার জন্য পশু হাসপাতালে নেওয়া হলে তার তথ্য প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে থাকে। তবে স্থানীয় পশু চিকিৎসক বা ভেটেরিনারি ওষুধের দোকানে চিকিৎসা নেওয়া হলে তার তথ্য প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে থাকে না। তবে উপজেলায় কী পরিমাণ গরু আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে তার কোনো তথ্য নেই এ দপ্তরে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাম্পি স্কিন ভাইরাসজনিত রোগ। এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। প্রথমে গরুর চামড়ার ওপরে টিউমার জাতীয় উপসর্গ ও বসন্তের মতো গুটি গুটি উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর দু-একদিনের মধ্যেই গরুর শরীর জুড়েই গুটি গুটি হয়ে ঘায়ে পরিণত হচ্ছে। এ সময় গরুর শরীরে ১০৪-১০৬ ডিগ্রি তাপমাত্রার জ্বর দেখা দেয় এবং খাওয়া ছেড়ে দেয়। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে এবং ক্ষতস্থান পচন ধরে। এ রোগে আক্রান্ত হলে পশু দুর্বল হয়ে ওজন কমে যায়, দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়।
উপজেলার পাকড়ী ইউনিয়নের মোহনপাড়া গ্রামের সেতারা বেগম তার চার মাসের বকনা বাছুর লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়। শরীরে কয়েকটি গুটি (ফোলা) দেখা যায়। এরপর গ্রাম্য চিকিৎসকে দেখানোর পর কিছু ইনজেকশনসহ ওষুধ দেয়। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বকনা বাছুর ১০ দিন যাবত লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত থাকার পর শনিবার (৫আগস্ট) সকালে মারা যায়।
তিনি আরো বলেন আমার দুইটি গাভী গরু আছে কিযে হয় বুঝতে পারছি না। একই গ্রামের আতাউরের একটি মারা যায়। পাশ্ববর্তী গ্রাম ইয়াজপুর জামতরা গ্রামেও আরো তিনটি গরু মারা গেলেও উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের এখনো ঘুম ভাঙ্গেনি।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন প্রাণীসম্পদ হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসা ও ওষুধ পাচ্ছেন না তারা। গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিশালবাড়ীর আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে কালুর ৯০ হাজার টাকার গরু লাম্পি স্কিন (এলএসডি) রোগে আক্রান্ত হয়েছিল ডা. রিপা রাণীর নিকট চিকিৎসা করে সাড়ে ৩ হাজার টাকার ইনজেকশন ও ওষুধ সেবন করান পরদিন তার গরুটি মারা যায়।
ফকিরপাড়ার লুথুর ছেলে আবু ৮০ হাজার টাকা মূল্যের আক্রান্ত গরু নিয়ে বুধবার সাড়ে ১১ টার সময় গোদাগাড়ী পশু হাসপাতালে যান। ডা. রিপা রাণীর নিকট দেখা করেন কিন্তু তিনি গরুর কোন চিকিৎসা না দিয়ে বাইরে কাজ আছে বলে বেরিয়ে যান। চিকিৎসা না পেয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসে হোমিও চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
গত ২ আগস্ট বুধবার এলএসডি আক্রান্ত ৩ টি গরুর ও অন্য রোগে আক্রান্ত ২ গরুর চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন গোগ্রাম ইউনিয়নের বসন্তপুর শিয়ালা গ্রামের হাজেরা বেগম প্রতিবেদককে বলেন, তাকে যে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়েছেন ৪/৫ হাজার টাকার দামী ওষুধ ও ইনজেকশন। ব্যবস্থা পত্র পেয়ে তার চোখেমুখে কালো মেঘ নেমে আসে। অফিস থেকে সুধুই মিকচার ছাড়া কিছুই দেয়া হয়নি।
গোগ্রাম ইউনিয়নের হুজরাপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মাষ্টার বলেন,আমার ভাই শাহজামালের একটি গরু লাম্পি স্কিন (এলএসডি) রোগে আক্রান্ত হয়েছে কোন চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেনা। এলাকায় ব্যাপকহারে গবাদিপশু আক্রান্ত হচ্ছে। তবে তিনি অভিযোগ করেন যে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্ত একটি লিফলেট ধরিয়ে দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করছেন।
ভেটোনারী সার্জন ডাঃ রিপা রাণীর নিজে ওষুধের রেজিষ্টার লিখার কথা থাকলেও তিনি না লিখে তিন মাসের প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ২ জন বাইরের ব্যক্তিকে দিয়ে এখাতাটি লেখা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দিয়ে হাসপাতালে বসিয়ে রেখে ইনজেকশন পুশ করা হচ্ছে, তারা একই সিরিঞ্জ তারা একাধিক আক্রান্ত গরুর গায়ে ইনজেকশন পুশ করছেন। এতে লাভের চেয়ে বেশী ক্ষতি হচ্ছে।
পৌর এলাকার মেলাপাড়ার সাহাবউদ্দিন জানান, পশু হাসপাতালে এসেও ঘুরে যাচ্ছি ডাক্তার পাচ্ছি না । এখানে নাকি কোনো ডাক্তার নেই। এ অবস্থায় গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। গোদাগাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ রিপা রানী দাস বলেন, বসন্তের (পক্স) একটি জাত ভাইরাসের মাধ্যমে এ রোগ ছড়াচ্ছে। এ রোগে আক্রান্ত হলে অনেকেই স্থানীয়ভাবে গরুর চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে সুস্থ না হওয়ায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে নিয়ে আসছে। চিকিৎসা নিয়ে আক্রান্ত গরুগুলো সুস্থ হচ্ছে। যারা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছে সেসব হয়তো মারাও যাচ্ছে। যা আমাদের জানা নেই।#