নাজিম হাসান,রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি: রাজশাহীতে একটি মাদ্রাসায় দফায় দফায় এক শিক্ষার্থীকে নির্মম শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদ্রাসার একটি টর্চার কক্ষে জুহায়ের তাজিম (১৬) নামের ওই কিশোর শিক্ষার্থীকে পর পর দুইদিন কয়েক দফায় বেধড়ক পেটানো হয়। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিক আঘাতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ হয়েছে। জুহায়ের তাজিম রাজশাহী মহানগরের কয়েরদাঁড়া খ্রিস্টানপাড়া মোড় এলাকার মাইনজ ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের হিফজ মাদ্রাসার শাখার শিক্ষার্থী।
মাদ্রাসার স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ রহমানের বিরুদ্ধে এ অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিত শিক্ষার্থী তাজিম জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌর সদরের মুগনি শাহ্ এর ছেলে। এ ঘটনায় তাজিমের মা জাকিয়া সুলতানা রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মাদ্রাসাটির পরিচালক আইরিস পারভীন এবং স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে এজাহার দায়ের করেছেন।
এতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৩ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ রহমান তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার ছেলেকে নির্মমভাবে শারীরিক নির্যাতন করেছেন। তিনি আমার ছেলের দুই হাত এবং দুই পায়ের উরু ও নিতম্বে বেত, পর্দার পাইপ ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এর ফলে আমার ছেলে মারাত্মকভাবে শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতির শিকার হয়েছে। এই ঘটনাটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক আইরিশ পারভীনকে জানানো হয়। তবে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। বরং তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ রহমান শুধু আমার ছেলেকেই নয়, মাদ্রাসার আরও অনেক শিক্ষার্থীকে প্রতিনিয়ত শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করে চলেছেন। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ইশতিয়াক, ইসমাইল এবং আবু সাঈদসহ অনেকেই নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্যাতিত শিক্ষার্থী তাজিমকে ভয়াবহ নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ রহমান আমার বিরুদ্ধে একটি নোংরা অভিযোগ আনেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে শ্রেণি কক্ষ থেকে তিনি আমাকে ডেকে নেন। এরপর একটি ছোট নির্জন কক্ষে নিয়ে যান। বেত, পর্দার পাইপ এবং লাঠি দিয়ে আমাকে বেধড়ক পেটান। পরের দিনও তিনি আমাকে একইভাবে মারধর করেছেন। কক্ষটি মাদ্রাসার টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত। এখানেই অন্য শিক্ষার্থীদেরও প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মসানসিকভাবে নির্যাতন করেন স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর।
তাজিমের মা জাকিয়া সুলতানা বলেন, ১৪ সেপ্টেম্বর আমরা বার বার ফোন দিলেও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ফোন ধরেনি। পরের দিন সন্ধ্যায় আমার ছেলে মাদ্রাসা থেকে গোপনে চলে আসে। এসময় তাকে আসতে বাধা দেন পরিচালক আইরিস পারভীন এবং স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ। পরে একরকম জোর করেই আমার ছেলে মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে আসে। ছেলে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যথা। খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। পরিবারের সদস্যদের সাথেও কম কথা বলছে। তাকে নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় পড়েছি। তার ওপর যারা নির্যাতন চালিয়েছেন, তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় জোর দাবি জানাচ্ছি।
নির্যাতনের অভিযোগ সম্পর্কে স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ রহমানকে ফোন দেয়া হয়। না ধরলে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা এবং থানার এজাহার দায়েরের বিষয়টি জানিয়ে মেসেজ দিলে তিনি সাড়া দেন। তিনি লেখেন,অভিযোগ কবে, কে করেছে, একটু বিস্তারিত বলবেন প্লিজ। এরপর তিনি আর কোনো উত্তর দেননি। ফোন দেয়া হলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে অভিযোগ সম্পর্কে তার পরিপূর্ণ বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কিশোর তাজিমকে নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আইরিস পারভীন বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। আমার বাবা-মা অসুস্থ থাকার কারণে আমি বাসায় ছিলাম। এসময় স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ তাজিমকে মারধর করেছেন। এর আগেও তিনি শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করেছেন। তাকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি আমার কথা না মেনে আবারও নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। ইমতিয়াজকে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিয়েছি। আমি অনুতপ্ত এবং লজ্জিত। যেসব শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাদের পরিবারের কাছে আমি ক্ষমা চেয়েছি।
নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।#