ক্যাপশন: ভোলাহাটে মুকুলে মুকুলে ছেঁয়ে যাওয়া আম গাছ।
# ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি……………………………………..
ঋতুরাজ বসন্তের শুরু হয়েছে চারদিকে। পলাশ শিমূলের পাশা-পাশি বাংলা ভাষাভাষী বাঙ্গালি জাতির অন্যতম প্রিয় ফল আম। আর আমের মৌসূমের সাথে সাথে মুকুলও এসেছে গাছে গাছে কল্পনাতীত। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হওয়ার আশা করছে আমচাষী ও আম ব্যবসায়ীরা। শীতের শেষে প্রকৃতিতে যেনো নানা রঙ্গের আগুন লেগেছে ফাগুনের। শীতের খোলস ছাড়িয়ে নবরূপে সেজেছে বৃক্ষরাজি। শুষ্ক আবহাওয়ায় চারিদিকে নজর কেড়েছে সবুজের সমারোহে। আর সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সোনালী রঙ্গের আমের মুকুল। এ যেনো সৃষ্টিকর্তার এক চমৎকার সৃষ্টি।
আমের মুকুলের মৌ-মৌ গন্ধে মুগ্ধ হয়ে উঠেছে আমের রাজধানী নামে খ্যাত ভোলাহাট উপজেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের আমচাষীরা। গত কয়েকদিন দেখা গেছে, ভোলাহাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের বাসা-বাড়িতে, রাস্তার পাশে এবং বাগানে রোপণ করা আম গাছগুলোতে ফুটেছে আমের অজস্্র মুকুল। শুধু বাসা-বাড়িতেই নয়, অনেকে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেছেন আম বাগান। এছাড়া অফিস-আদালত কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আম গাছেও দোলা দিচ্ছে আমের মুকুল আর মুকুল। প্রত্যক্ষ করা গেছে, শুধু ভোলাহাট উপজেলাতেই নই, এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা, বিরাটকায় শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আমগাছগুলিতে সর্বত্রই আম গাছে প্রচুর ফুল ও আমের মুকুল এসেছে। যা দেখলে দর্শনার্থীদের মন জুড়িয়ে যাবে।
আমচাষীগণ এবারের আমের মৌসূমে বিভিন্ন ধানের জমিতেও এই আমগাছ রোপন করেছে, যাতে তাদের আমের ফলন আশাতীত ফলন ভাল পাওয়ার প্রত্যাশায়। আর যে ধরণের আমের মুকুলের সমারোহ, এতে করে কল্পনাতীত ফলন পাবে বলে আমচাষীরা আশাবাদী। প্রকৃতির খেয়ালে স্বর্ণালিরূপ ধারণ করেছে আবহমান গ্রাম-বাংলা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রতিটি উপজেলায় দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিটি আমগাছে প্রচুর ফুল ও মুকুল ধরার দৃশ্য। প্রকৃতির বিরূপ মনোভাব আর পরম করূণাময়ের অশেষ রহমত থাকলে এবারের আমের মৌসূমে আর্থিকভাবে প্রচুর মূনাফা কুড়াবে আমচাষী ও আম ব্যবসায়াীগণ বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় সচেতনমহল।
আম ফাউন্ডেশন, ভোলাহাট-এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুনসুর আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, এবারের আম মৌসূমে যেভাবে ফুল-মুকুল এসেছে, তাতে করে বাম্পার আমের ফলন হবে। সেই সাথে আমের ব্যাপারে যারা যারা জড়িত আছে, তারা আর্থিকভাবে প্রচুর মুনাফা অর্জণ করবে। আর বড় সমস্যা হলো আবহাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে অবশ্যই আমচাষী ও আম ব্যবসায়ীগণ লাভবান হবে। আমাদের উপজেলার গর্ব এবং বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশের আমের কদর রয়েছে। সেই সাথে ভোলাহাটের ঐতিহ্য ও খ্যাতনামা নির্দলীয়-নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান, আম ফাউন্ডেশন এবারের আমের মৌসূমে কোটি কোটি টাকার মুখ দেখবে বলে আমি আশাবাদী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সুলতান আলী বলেন, আমগাছে যদি আমচাষী ও আম ব্যবসায়ীরা আমাদের অফিসে যোগাযোগ করে, তাহলে আমরা পরিপূর্ণ সেবা দিতে কুণ্ঠাবোধ করবো না। ভোলাহাট উপজেলার সর্বত্রই আমফলের জন্য মুকুলে মুকুলে ছেঁয়ে গেছে প্রতিটি ছোট-বড় আমের গাছ। এ সময়ে আমচাষীদের আমাদের সাথে বা আমার মাঠকর্মীর সাথে আমের মৌসূম পর্যন্ত যোগাযোগ করলে আমগাছের পরিচর্চার ও রক্ষানাবেক্ষণ করতে হবে সকল আমি ও আমার কর্মকর্তাগণ অবশ্যই সঠিক পরামর্শ দিবে বলে আমি নিশ্চিত আশাবাদী। বিরূপ আবহাওয়া যদি আমগাছগুলোর ক্ষয়ক্ষতি না করে তাহলে আমরা এবারের আমের মৌসূমে ভাল ফলাফল পাবো বলে তিনি আশাপোষণ করেন।
আমচাষীদের পরামর্শের ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এবারের আমের মৌসূমে আমাদের উপজেলায় ৩ হাজার ৬’শ ৬২ হেক্টর জমিতে আম আবাদ হবে। এবারের আমের মৌসূমে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, যেভাবে মুকুল এসেছে তাতে করে আমরা আশাবাদী ৯২% হতে ৯৩% আমের মুকুল এসেছে। আর সে সাথে রোগ-বালাই, পোকা-মাকড়ও নেই। সবদিক দিয়েই আমের জন্য এবারের মৌসূম নি:সন্দেহে আমচাষীরা লাভবান হবে।
কৃষি বিষয়ক যেকোন পরামর্শের জন্য আমার অফিসে আসতে পারে। আর আমচাষীদের জন্য আমার পরামর্শ যে, আমের এখন ফুলফুটা অবস্থায় আমগাছে কোন প্রকার কীটনাশক স্প্রে করা যাবে না। আমের দু’টি সময় থাকে, ১টি আমের গুটি অপরটি হলো মার্বেল অবস্থা। এ অবস্থায় কীটনাশকের বেশী আইটেম না দিয়ে, ১টি ছত্রাকনাশক ও ১টি কীটনাশক প্রয়োজনবোধে স্প্রে করতে পারে। যদি আমের গুটি ঝড়ে পড়ে তাহলে গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে, যদি রস না থাকে। তারপরেও যদি গুটি ঝড়ে পড়ে তাহলে ইউরিয়ার দ্রবণ স্প্রে করতে হবে গাছের উপরে। সেই সঙ্গে আমের মুকুলের বয়স ৪০ থেকে ৫০ দিন বয়সের হবে, তখন মাছিপোকার আক্রমন থেকে বাঁচার জন্য ব্যাগিং করার পরামর্শ দিচ্ছি। তাহলে আমচাষীদের আমের ফলনটা আরো ভাল হবে বলে তিনি আশাবাদী।#