বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায় এবারেও চাহিদার তুলনায় কোরবানিযোগ্য পশু বেশি আছে। তবে গত দুই বছরের তুলনায় পশুর চাহিদা ও সংখ্যা দুটোই কমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পশুর বেশি দাম ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে চাহিদা ও সংখ্যা কমেছে। খামারিরা বলছেন, পশু পালনের খরচ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। তারা বলছেন, পশু খাদ্যের দাম গত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন বেড়েছে। বিদ্যুৎ বিলসহ নানা খাতেও বাড়তি খরচ যোগ হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে কোরবানির পশুর বাজারে।
ইতিমধ্যে হাটে পশু কিনতে গেছেন এমন ক্রেতাদের ধারণা, গত বছরের চেয়ে পশুর দাম এবারও বেশি। জানা যায়, উপজেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা আছে ২৮ হাজার ৩৮২টি। আর কোরবানির জন্য পশু আছে ৩১ হাজার ৪৬৩টি। যা গত বছরের চেয়ে এবার ১৩হাজার ৬৬১টি পশু কম। এবার কোরবানিযোগ্য পশু বেশি আছে ৩হাজার ৮১টি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, উপজেলায় খামারের সংখ্যা (নিবন্ধিত- অনিবন্ধিত) ৮৭৩টি। ২০২৩ সালে- কোরবানি যোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজার ১১১টি। এর মধ্যে- ২ হাজার ২৪৮টি ষাড়, বলদ-১৩২টি, গাভী-৪৪৬টি, মহিষ-১৩টি, ছাগল-৩৭ হাজার ৬১টি, ভেড়া-৪ হাজার ২১১টি।
কোরবানি পশুর চাহিদা ছিল-৩৯ হাজার ২৫৬টি। উদ্বৃত্ত ছিল ৪ হাজার ৮৫৫টি। ২০২৪ সালে কোরবানি পশুর সংখ্যা ছিল-৪৫১২টি। চাহিদ ছিল ৩৯ হাজার ৮৭১টি। উদ্বৃত্ত ছিল ৫ হাজার ২৫৩টি। মোট পশুর মধ্যে ছিল-গরু ২হাজার ৮০৭টি,(ষাড়-১৯৬৬,বলদ-১২৪গাভী/বকনা-৭১৭)।মহিষ-১৫টি,ছাগল ৩৮হাজার ৫২০টি, ভেড়া- ৩হাজার৭৮২টি। ২০২৫ সালে-কোরবানি যোগ্য পশুর সংখ্যা-৩১ হাজার ৪৬৩টি। গরু- ৩ হাজার ৬৯২ টি, (ষাড়-২,৮০৫টি,বলদ-১৫৩টি,গাভী/বকনা-৭৩১টি), মহিষ-৯৭টি, ছাগল-২৭ হাজার ২৪৩টি, ভেড়া-৪৩১টি।
কোরবানি যোগ্য পশুর চাহিদা-২৮হাজার ৮২টি। উদ্বৃত্ত আছে ৩ হাজার ৮১টি। অভিজ্ঞরা বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যানে যে সরবরাহের কথা বলা হচ্ছে, তা কতটা সত্য, বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। যদি কোরবানিযোগ্য পশু মজুদ থাকে, তাহলে দাম কম হওয়ার কথা, কিন্তু সেটি বাস্তবে ঘটছে না।
উপজেলার দিঘা গ্রামের খামারি হৃদয় আহমেদ(মফিদুল) বলেন,একটি গরুর পেছনে প্রতিদিন খরচ হয় ৪০০/৫০০শ টাকা। এবার তিনি ৪টি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। ১টি বিক্রি করেছেন ২লাখ ৯৫ হাজার টাকায়। আরেকটি দেড়লাখ ও ২টি বিক্রি করেছেন ১লাখ টাকা করে। সেই গরু বিক্রি করে খরচের তুলনায় প্রত্যাশিত লাভ হয়নি। গত বছর এই সময়ে ৫টি গরু বিক্রি করেছিলেন। আকার ভেদে এবার জীবিত গরু প্রতি কেজি (লাইভ ওয়েট) ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনলাইনে জীবিত পশুর (গরু) কেজি পড়ছে তারও বেশি ।
পান্নাপাড়া গ্রামের গরু ব্যবসায়ী নাসির উদ্দীন বলেন,গৃহস্তের কাছ থেকে বিক্রির জন্য ১টি গরু কিনেছেন ১লাখ ৯৫ হাজার টাকায়। হাটে তুলে সেই গরুর দাম বলেছে ১লাখ ৯০ হাজার। তিনি জানান,এ সময়টা কেনা কাটার ধুম পড়তো। এবার তা দেখা যাচ্ছেনা। গতবার বড় গরুর তুলনায় বাজারে ছোট গরু বিক্রি বেশি হয়েছিল।
সেকেন্দার আলী নামে একজন জানান,গত বছর ৩৫ কেজি ওজনের একটি খাসি ছাগল কিনেছিলেন ২৮ হাজার টাকায় । এবার সেই ওজনের খাসির দাম চাচ্ছে ৩২ হাজার টাকা। তবে এখনো কেনেননি। তার ধারনা মতে, এবার কোরবানি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
বুধবার(২৮ ’ে২৫) উপজেলার আড়ানি পৌরসভাধীন রুস্তমপুর পশু হাটে গিয়ে দেখা যায়, কেনা কাটায় নিরাপত্তায় রয়েছেন আনসার সদস্য-পিচ্ছি দিলুয়ার,সাগর,রাব্বি,মতিউর ও রনি। ক্রেতারা জানান,এবরাই সরকার নির্ধারিত হারে গরু/মহিষ প্রতি ৫০০ টাকা আর ছাগল/ভেড়ার টোল আদায় করা হচ্ছে ২০০শ টাকা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের অফিসার ডাঃ আমিনুল ইসলাম জানান,গত কয়েক বছর ধরে উপজেলার পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। এবার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকছে ৩ হাজার ৮১টি পশু। ধারনা করছেন চাহিদা মাফিক ছাগল বেশি বিক্রি হবে। তার দাবি,এর আগে দেশীয় উৎস থেকে এত সংখ্যক কোরবানিযোগ্য পশুর জোগান ছিল না।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার শাম্মী আক্তার বলেন,বুধবার(২৮ মে’২৫) উপজেলা সম্মেলন কক্ষে আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় ও সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। হাটে কোনোভাবেই রোগাক্রান্ত বা অসুস্থ পশু বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। এ লক্ষ্যে পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করবে। জনজীবনে কোনো প্রকার অসুবিধার সৃষ্টি না করে, তা নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
উপজেলার দু’টি পশু হাটে পৌরসভা কর্তৃক, সরকার নির্ধারিত গরু প্রতি ৫০০ টাকা, ছাগল প্রতি ২০০টাকা হারে হাসিল (খাজনা) আদায় করা হচ্ছে। বাজারের বাইরে পশু বিক্রি করলে ‘হাসিল’ আদায় করাও যাবে না। #