
বিশেষ প্রতিনিধি : শেষ বিদায় জানানোর জন্য খাটিয়ার পাশে অপেক্ষা করছিলেন স্বজনরা। ম/র/দে/হ বাড়িতে পৌঁছার পর দেখা গেছে স্বজনদের আহাজারি। রোববার(০২-১১-২০২৫) বিকেল সাড়ে ৩টায় বাড়িতে পৌছে গৃহবধু অনন্যা ওরফে মুন্নি (২৩)’র মরদেহ। বাদ আসর জানাযার নামাজ শেষে বাঘা কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
জানা যায়, শনিবার সকালে তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এদিন সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মুন্নি। ময়না তদন্তের আগ পর্যন্ত তার মরদেহ রামেক হাসাপাতাল মর্গে রাখা ছিল। গৃহবধুর মা মনোয়ারা কান্না জড়িত কন্ঠে বলছিলেন আমার মেয়ের শরীরে ডিজেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে মে/রেছে। এর আগে শুক্রবার দুপুরে তার মেয়ের সাথে সর্বশেষ কথা হলে জানায় আমি আর নির্যাতনের যন্ত্রনা সইতে পারছিনা। শনিবার (০১-১১-২০২৫) সকালে মেয়ের শ্বশুর সহিদুল মাঝি মুঠোফোনে জানান,তার মেয়ে শরীরে ডিজেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এ খবর শুনে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় চিকিৎসধীন অবস্থায় মৃত্যু বরন করেন মুন্নি।
একই সুরে কথা বলছিলেন মুন্নার বাবা মাসুদ রানা। তারা জানান, ১০বছর আগে প্রেমের সম্পর্কে সুরুজ উদ্দীনের সাথে বিয়ে হয় মুন্নির। তাদের সংসারে জিহাদ নামে ৮বছরের ১ ছেলে ও সাবা বুড়ি নামে ৪ বছরের ১ মেয়ে রয়েছে। অভিযোগ করে তারা বলেন, সুরুজ মাদক সেবনে আসক্ত। এনিয়ে তাদের সংসারে কলহ লেগেই থাকতো। বিয়ের পর যৌতুকের দাবিও ছিল সুরুজের। নানান কারণে তাদের মেয়ের শরীরে ডিজেল ঢেলে পু/ড়ি/য়ে মে/রে/ছে। সুরুজ বাঘা পৌরসভার চক নারায়নপুর গ্রামের সহিদুল মাঝির ছেলে।
অনন্যা ওরফে মুন্নি একই পৌর সভার মিলিক বাঘা গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানার মেয়ে। কাজের সুবাদে ঢাকার কুনাবাড়ি এলাকায় থাকেন মুন্নির মা-বাবা। রোববার দুুপুরে সুরুজের বাড়িতে গিয়ে তার মা-দুই বোন ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি। সুরুজের মা হাজেরা জানান, শনিবার ভোরে চিৎকার শুনে ঘরের দরজা খুলে দেখেন মুন্নির সমস্ত শরীর ভেজা পরে জানেন,তাদের কলহের জের ধরে নিজের শরীরে ডিজেলে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পানি ঢেলে সেই আগুন নেভানো হয়েছে। আ/গুনে পুড়ে যাওযার কারণে গায়ে পরিধেয় কোন বস্ত্র ছিলনা। তার দাবি-মেশিনে ব্যবহারের জন্য বাড়িতে রাখা ডিজেল নিজের শরীরে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আত্ন/হ/ত্যা করেছে। তবে এমন দাবি অস্বিকার করেছেন মুন্নির মা-বাবাসহ তার স্বজনরা।
হাসপাতালে সুরুজের বড় বোন ছাড়া কেউ সাথে যায়নি। তারা জানান, প্রেম জনিত বিয়ের পর থেকেই সুরুজের পরিবার মেনে নিতে পারেনি। পৌরসভার স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর হাজেরা জানান,চিৎকার শুনে সুরুজের বাড়িতে গিয়ে হৃদয় বিদারক ঘটনার কথা শুনেছেন ও পুড়ে যাওয়া মুন্নির বিবস্ত্র শরীর লুঙ্গি দিয়ে ঢাকা দেখেছেন। সুরুজের পাশের বাড়ির আজিজুল হক ও সান্টু জানান,বাঁচাও বাচাও চিৎকার শুনে তার বাড়িতে গিয়ে প্রথমত বাড়ির গেট বন্ধ দেখেন। খুলে দেওয়ার পর আগুনে ঝলসানো মুন্নিকে দেখেছেন, তা শরীরে পরিধেয় বস্ত্র পুড়ে যাওয়া অবস্থায়। পরে তাকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্য্রে পাঠানো হয়।
মুন্নির ভাই মিঠু জানান, সেখান থেকে রামেকে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল। স্থানীয় সুত্রে সুরুজের মাদক সেবনের বিষয়টি ও পারিবারিক কলহের কথা জানা গেছে। শনিবার রাতে ঘটনার পর গোসল করানোর কথাও বলেছে মুন্নি। এ কথার আড়ালে লুকিয়ে আছে সেদিন রাতে পারিবারিক কলহের গোপন রহস্যে। মুন্নির বড় ভাই মিঠু জানান, ঘটনার দিনই বাঘা থানায় জিডি করেছেন। (জিডি নম্বর-৪৫)। দাফনের আগে থানায় অভিযৈাগ দিতে পারেননি। তবে এ বিষয়ে মামলা করবেন বলে জানান।
অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফম আছাদুজ্জামান জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইনগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#