বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ইট পাটকেল, ককটেল নিক্ষেপ এর ঘটনা ঘটেছে। পৌণে এক ঘন্টাব্যাপী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল, বাঘা পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাস আলী, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল (জাসদ ইনু)’র কেন্দ্রীয় কার্যকরি কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি, আড়ানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, জার্মান আলী, আশিক হোসেন, সুলতান আলী, ফিরোজ হোসেন, শাহাদত হোসেন, ইশতিয়াক হোসেন, কামাল হোসেনসহ অন্তত অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছে। গুরুতর আহত আশরাফুল ইসলাম বাবুল ও রফিকুল ইসলামকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া সহ ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়াও পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলে পথচারী উজ্জ্বল আহত হয়। শনিবার (২২জুন’২৪) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সোয়া ১১ টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের সামনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, শনিবার সকাল ১০ টায় বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলীর সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজন প্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে বাঘা উপজেলা আওয়ামীলীগ। একই দিন সকাল ১০টায় উপজেলা সচেতন নাগরিকদের ব্যানারে, বাঘা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের কতিপয় ব্যক্তি দলিল লেখক সমিতির নামে ক্রেতার কাছে জোর পূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে দেশীয় অস্ত্র,ইটপাটকেল,লোহার রড নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে পৌণে এক ঘন্টা ব্যাপি। এ সময় পুলিশ মাঝে মধ্যে টিয়ারশেল, রাবারবুলেট নিক্ষেপ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
ঘটনার সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও এমপি শাহরিয়ার আলমের অনুসারি স্থানীয় আওয়ামীলীগ এবং জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান,অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দীন- বাঘা পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আক্কাস আলীর অনুসারিদের মধ্যে পূর্ব জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহিদ সাদিক কবীর জানান, প্রশাসনকে অবগত করে সকাল সাড়ে ১০ টায় উপজেলা পরিষদের সামনে দলীয় লোকজন নিয়ে আমরা পৌর মেয়র আক্কাস আলীর সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজন প্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করছিলাম। সেখানে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস সরকার বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এ সময় বাঘা পৌর মেয়র আক্কাস আলীর নেতৃত্বে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক,ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলামসহ অনেক নেতা কর্মী আহত হয়।
চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলা আ’লীগের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচিতে যাওয়ার সময় প্রতিপক্ষ রোকজন আমার উপর হামলা করে এবং মোটরসাইকেলের ট্যাংকি ভাঙচুর করে। পাকুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মেরাজ জানান, বাঘা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কতিপয় ব্যক্তি দলিল লেখক সমিতির নামে ক্রেতার কাছে জোর পূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদে সচেতন নাগরিকের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। সহমত পোষণ করে পৌর মেয়র আক্কাছ আলী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাওয়া সময় তাদের উপর হামলা করে। এতে তাদের পক্ষের পৌর মেয়র, বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফিসহ অনেক লোকজন আহত হয়েছে। এর আগে মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে উস্কানিমূলক বক্তব্যে দিয়েছে বলে দাবি করেন মেরাজ।
আহত আব্দুল খালেক জানান, উপজেলা সচেতন নাগরিকদের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। সংঘর্ষ চলাকালে অপর পক্ষের ছোড়া ইটের আঘাতে তিনি আহত হন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচএ ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, ১৮ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আরো অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
বাঘা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, পুলিশ টিয়ারশেল,রাবারবুলেট ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। এর মাঝে ককটেল বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে শারিরিক অসুস্থতার কারণে টিয়ারসেল,রাবারবুলেটের হিসাব জানাতে পারেননি ওসি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। #