রুস্তম আলী শায়ের , নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগমারাঃ রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে প্রায়-ই পাওয়া যায় না জলাতঙ্ক প্রতিরোধক টিকা (অ্যান্টি-র্যাবিস ভ্যাকসিন বা এআরভি এবং র্যাবিস ইমিউনোগ্লোবুলিন বা আরআইজি) নেই। উপজেলার আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিন কুকুর, বিড়াল বা শিয়ালের কামড়ে আক্রান্ত রোগীরা এ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ছুটে আসেন। কিন্তু টিকার অভাবে বেশিরভাগ রোগীকে ফিরে যেতে হচ্ছে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বাজার থেকে চড়া দামে টিকা কিনছেন, তবে দরিদ্র রোগীদের বেশিরভাগেরই এই ব্যয়বহুল টিকা কেনার সামর্থ্য নেই।
আক্রান্ত রোগীদের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে টিকা পাওয়ার কথা থাকলেও, এখন নিজের টাকায় কিনতে গিয়েও তা অনেক সময় পাওয়া যাচ্ছে না। সোমবার দুপুরে হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রের বারান্দায় দেখা যায়, উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের শারমিন খাতুন তার ৫ বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে উদ্বিগ্নভাবে অপেক্ষা করছেন। শিশুটির পায়ে বিড়ালের কামড়ের ক্ষত। চোখে পানি ধরে রেখে শারমিন বলেন, ‘ডাক্তার বলেছেন, দুটি টিকা লাগবে একটি এআরভি, আরেকটি আরআইজি। বাজার থেকে কিনতে বলেছেন। দুটি টিকার দাম প্রায় দেড় হাজার টাকা। আমরা গরিব মানুষ, এত টাকা কোথায় পাব?’
একই দুর্ভোগের কথা জানালেন সাইদুল ইসলাম নামের এক দিন মজুর। তিনি বলেন, ‘পায়ে বিড়াল কামড়েছে, রক্ত পড়েছে। কিন্তু হাসপাতালে টিকা নেই। বাইরে থেকে কিনতে বলছে, একটি টিকার দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা। এত টাকা দিয়ে টিকা কিনে বাঁচা আমার মতো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার, ১৬ টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা থেকে অনেক রোগী আসে। অন্য কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এ টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। ফলে এ হাসপাতালই রোগীদের একমাত্র ভরসা। কিন্তু টিকা না থাকায় মাঝে মাঝে রোগীদের টিকা প্রদান করা সম্ভব হয় না। জলাতঙ্ক একটি মারাত্মক রোগ, যা টিকা ছাড়া প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কুকুর বা অন্যান্য প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে জলাতঙ্ক ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সময়মতো টিকা না নেওয়া হলে মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত।
জলাতঙ্ক বিশেষজ্ঞরা জানান, কুকুর বা অন্য প্রাণীর কামড়ের পর দ্রুত এআরভি এবং গুরুতর ক্ষেত্রে আরআইজি টিকা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে প্রতি বছর জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক মানুষ মারা যান, যার বেশিরভাগই গ্রামীণ এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী। টিকার সহজলভ্য ও সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে এ মৃত্যুহার অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “প্রতিদিন রোগীরা আসেন, কিন্তু মাঝে মাঝে বলতে হয় ‘টিকা নেই’। কেউ কেউ কান্নাকাটি করেন, কেউ রাগ করেন, কেউ গালিগালাজও করেন। কিন্তু আমাদের হাতে কিছুই নেই। সরবরাহ না থাকলে আমরা কী করব?” তবে যখন সরবরাহ থাকে তখন কোন সমস্যা হয় না।
এদিকে বাগমারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালেও দেখা যায় একই চিত্র।কুকুর,বিড়াল কে দেওয়ার মত ভ্যাকসিনের তীব্র সংকট এখানেও।
ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ মোঃ শাহিনুর রহমান সোহান জানান, দিনের পর দিন চলে যায় কিন্তু আমরা কুকুর বিড়ালদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে পারি না।যদি কুকুর,বিড়ালদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা যেত তাহলে জলাতঙ্কের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে আসতো।
বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সাফিউল্লাহ নেওয়াজ বলেন, আমাদের হাতে থাকা টিকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর আর কোনো নতুন সরবরাহ আসেনি। আমরা নতুন করে চাহিদা পাঠিয়েছি। আশা করছি দ্রুত টিকা এসে পৌঁছাবে। তিনি আরও বলেন, জলাতঙ্কের ভ্যাকসিনের মাঝে মাঝে সঙ্কট হলেও অন্য টিকা গুলোর কোন সংকট আমাদের হাসপাতালে নেই।#