মাহাবুর রহমান মনি, বাগমারা থেকে……………………………………………………………..
অর্থকরী ফসল হিসেবে পান চাষে বাগমারায় কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পান চাষে সফলতা অর্জন করেছেন কৃষকরা। খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় দিনদিন বাড়ছে এ অঞ্চলে পানের চাষ।
চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় ১,৫০০ একর জমিতে পান চাষ হয়েছে, যা গত মৌসুমের তুলনায় ৩৫০ একরের ও বেশি বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থকরী ফসল হিসেবে পান চাষে বাগমারার কৃষকের আগ্রহ অনেক বাড়ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ হচ্ছে বাগমারার পান। এ পান রপ্তানি ও হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য সহ বিভিন্ন দেশে।
উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের বাড়ীগ্রামের পান চাষি মোঃ রফিকুল ইসলাম ও শ্রীপুর ইউনিয়নের চাঁই পাড়া গ্রামের প্রভাষক মোঃ রেজাউল করিম জানান, ১৫-২০ বছর ধরে পান চাষ করছেন তারা। চলতি মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে পান চাষ করেছেন। পান চাষে খরচ বেশি হলেও অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ পান চাষ হচ্ছে বাগমারায়। গত বছর একই পরিমাণ জমিতে পান উৎপাদন করে ৩ লাখ টাকার ওপর লাভ হয় তাদের। বরজ বা বাগান পরিচর্যা, পানের ডগা রোপণ, খৈল-সার, প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সেচ বাবদ দুই বিঘা জমিতে পান চাষে তার খরচ হয়েছিল ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। উৎপাদিত পান বিক্রি হয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। এতে তার ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়।
তারা আরো জানান, চলতি মৌসুমে খরচ গত বছরের তুলনায় আরো বেশি হতে পারে। কারণ খৈল ও সার এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে। চলতি মৌসুমে ৪ লাখ টাকার মতো উৎপাদন খরচ লাগতে পারে। তবে বর্তমানে তার বরজে যে পরিমাণ পান দেখা যাচ্ছে তাতে ৭ থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তারা। এরই মধ্যে প্রায় ৩ লাখ টাকার পান বিক্রি হয়েছে।
পানচাষী রেজাউল করিম আরো জানান, খরচের তুলনায় বিক্রয় অনেক বেশি পরিমাণ হওয়ায় পান চাষে আগ্রহী হচ্ছে কৃষকেরা। সারাবছরই এখানে কৃষকেরা পান উৎপাদন করেন। এখানে কৃষকেরা যেমন লাভবান হচ্ছে, তেমনি গ্রামের বেকার যুবকরা পান চাষের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তাদের জীবন – জীবিকা নির্বাহ করছে। এছাড়াও বিভিন্ন বাজারে পানের আড়ৎ গড়ে ওঠার কারণে সেখানেও কিছু বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তাই গ্রামের যুবকরা কেউই আর বেকার থাকছে না।শুধু আশেপাশের জেলা নয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাগমারার পান চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্য সহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে এই পান। তাই পানকে একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে চিহ্নিত করেছে কৃষি বিভাগ। যার সুফল ভোগ করছে কৃষকরা।
রফিকুল ইসলাম আরো জানান,আগে তিনি ধান, পাট ও সবজিসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন করতেন। কিন্তু তাতে উৎপাদন খরচের তুলনায় তেমন লাভ হতো না। তাই শ্বশুর বাড়ির লোকজনের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ বছর ধরে পান চাষ করছেন। বছরে সব ধরনের খরচ উঠিয়েও ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা লাভ হয়। শুধু তাই নয় গ্রামের বেকার মেয়েরাও এ কাজে সম্পৃক্ত হতে পারছে। বাড়ীর অন্যান্য সদস্যদের সহযোগীতার পাশাপাশি মেয়েরাও এতে সক্রীয় অংশগ্রহণ করে পান বরজে কাজ করা এবং পান গোছানো কাজ তারা স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারে।
একই গ্রামের পান চাষি আবুল কাশেম জানান, কৃষক রফিকুল ইসলামের দেখাদেখি ৮ বছর ধরে দেড় বিঘা জমিতে পান চাষ করেন তিনি। এতে উৎপাদন খরচ উঠিয়েও ২ লাখ ২০ থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা লাভ হয় বছরে। তার উৎপাদিত পান উপজেলার হাট গাঙ্গোপাড়া, মচমইল, মোহনগঞ্জ, খালগ্রাম বাজারে বিক্রি করেন। বর্তমানে প্রতি পোয়া (৩২ বিড়া/২০৪৮ টি) পান পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪,৫০০ টাকা থেকে ৪,৮০০ টাকা দামে।
পান চাষের ক্ষেত্রে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলেও জানান কৃষকরা। তারা বলেন, আজকাল ভেজাল ওষুধের কারণে কৃষকরা প্রতারিত হচ্ছে এবং অনেকেই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, পান একটি অর্থকরী ফসল। তবে অন্য ফসলের তুলনায় এটির উৎপাদন খরচটা বেশি হয়। তার পরও পরিকল্পিতভাবে চাষ করতে পারলে পান খুবই লাভজনক পেশা। তাছাড়া দেশের বাজারে যেমন চাহিদা, তেমনি বিদেশেও বাংলাদেশী পানের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পান রপ্তানি হচ্ছে। #