# মাসুদ রানা, পত্নীতলা(নওগাঁ)প্রতিনিধিঃ আদিবাসীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কারাম পূজা। বংশ পরম্পরায় যুগ যুগ ধরে প্রতি বছর উত্তরের সমতল ভূমির নওগাঁর আদিবাসীরা এই কারাম উৎসব পালন করে আসছে। “গড় লাগি ও জোহার লাগি হামনিক্যের সংস্কৃতি হামনিক্যের পরিচয়”এই প্রতিপাদ্য নিয়ে নেচে গেয়ে নওগাঁর পত্নীতলায় আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব উদযাপন করা হয়ছে ।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ পত্নীতলা শাখার আয়োজনে নজিপুর পাবলিক মাঠে সুবোধ উড়াও এর সভাপতিত্বে, মিঃমিলন মার্ডীর সঞ্চালনায় শ্রীসাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আলীমুজ্জামান মিলন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক যোগেন্দ্র নাথ সরকার।
নেচে গেয়ে আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি পরিবেশন করেন ৮০ টি দল। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সহ জেলা ও জেলার বাহির থেকে আগত আদিবাসী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন উৎসবে যোগ দিয়ে তাদের নিজেদের ভাষা সাংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরেন।
কারাম একটি গাছের নাম। আদিবাসী বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির মানুষের কাছে এটি একটি পবিত্র গাছ। মঙ্গলেরও প্রতীক। প্রতি বছর বংশপরমপরায় ভাদ্র মাসের পূর্ণিমায় পালন করা হয় এই পূজা। এই উৎসবকে ঘিরে মূখরিত হয়ে নওগাঁর আদিবাসি বসবাসরত এলাকাগুলো। পূজার সময় আদিবাসিদের সহদ্বয় দুই ভাই ধর্মা ও কর্মা’র জীবনী তুলে ধরেন তাদের ধর্মগুরু। আদিবাসি বিশ্বাস করে ধর্ম পালন করায় ধর্মা রক্ষা পান সকল বিপদের হাত থেকে। আর কর্মা ধর্ম পালন করায় তার ক্ষতি হয়। ভাদ্র মাসের প্রথম পূর্ণিমায় আদিবাসি সম্প্রদায়ের লোকজন উপবাস করে কারাম গাছের ডাল কেটে আনেন। এরপর সন্ধ্যায় পুঞ্জিগা মতে পূর্ণিমা শুরু হলে কারামডাল কেটে অস্থায়ী মন্ডবে পুঁতে রেখে পূজা-অর্চনা আর নাচ-গান ও কিচ্ছা বলার মধ্য দিয়ে প্রতি বছর কারাম এ উৎসব পালন করে। এসময় পুরো এলাকা আদিবাসীসহ সকল সম্প্রদায় হয়ে উঠে মিলন মেলা। পূজা শেষে পরদিন কারাম ডাল উঠিয়ে গ্রামের তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের নারী-পুরুষ নেচে গেয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে পুকুরে জল বিসর্জন দেয়।
আদিবাসিরা এ কারাম উৎসবের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন। এ উৎসবে জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের নাচ-গান পরিবেশন করেন। আদিবাসী নেতৃবৃন্দ বলেন, এ উৎসবের মূল উদ্দেশ্য আদিবাসিদের নিজেদের ভাষা সাংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি সারাদেশে আদিবাসিদের উপর অত্যাচার, উৎচ্ছেদ, নির্যাতন ও দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সঙ্গবদ্ধ করা। আদিবাসীদের ভাষা ও সংষ্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এটা রক্ষার্থে সরকারি ভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন মনে করেন।#