# ফজলুল হক, ধোবাউড়া( ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: পরিবার পরিকল্পনার ওষুধ সরবারাহ বন্ধ চলল ৯ মাস, সেবা বঞ্চিত ধোবাউড়ার হাজারো পরিবার। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে টানা ৯ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে পরিবার পরিকল্পনার ওষুধ ও সামগ্রী সরবারাহ। এতে করে চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার দম্পতি। বাড়ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির আশষ্কা।
জানা গেছে, উপজেলার সদর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি ৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র,৫টি রয়েছে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে নিয়মিত সেবা নেন উপজেলার প্রায় ৩৫ হাজারের অধিক দম্পতি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পরিবার পরিকল্পনার জন্য ২৩ ধরণের ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সরেজমিনে বিভিন্ন ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, নেই প্রয়োজনীয় কনডম, পিল, ইমপ্ল্যান্ট, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট। এতে করে গর্ভবতী মা ও কিশোরীরা স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সেবাদান কেন্দ্রগুলো খোলা থাকলেও ওষুধ না থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের।
ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মোশারফ হোসেন বলেন, আমরা ৯ মাস ওষুধ নেই। গত মাসে সামান্য ওষুধ পেয়েছি। তবে পরামর্শও দিচ্ছি। কিন্তু রোগীরা ওষুধ না পেয়ে বিরক্ত হয়ে ফিরেছে। একই অবস্থা ঘোষগাও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রেও। সেখানে কর্মরত কো কর্মী নেই, পিয়ন সকালে দরজা খোলে বিকালে বন্ধ করে। এখন আর কেউ সেবা নিতে আসেনা। গোয়াতলা পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা ইসরাত জাহান সুমি জানান, রোগীরা এখন ওষুধ না থাকার কথা আগেই ফোনে জেনে নেয়। অনেকে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। আমরা শুধু রক্তচাপ মেপে কিছু পরামর্শ দিয়ে বিদায় দিচ্ছিলুম । জন্ম বিরতিকরণ সামান্য ওষুধ আছে।
পরিবার পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, প্রতিটি সেবাকেন্দ্রে প্রতি মাসে ৩০০ সেট খাবার বড়ির চাহিদা থাকলেও বর্তমানে বরাদ্দ মিলছে মাত্র ১০-৫০ টি। তাছাড়া এ বছরের জুন মাস থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি ইমপ্ল্যান্টের সরবরাহ। ইনজেকশন থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় সিরিঞ্জ। ডিডিএস কিটেরও তীব্র সংকট চলছে।
এদিকে, সেবা না পাওয়ায় অনেক পরিবার এখন নিজেদের খরচে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনেছেন। এতে নিম্ন আয়ের পরিবার গুলো সমস্যায় পড়েছে। অনেকেই বলছেন, দীর্ঘদিন পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রী সরবরাহ বন্ধ থাকলে এ অঞ্চলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেড়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন সেবা-গ্রহণকারী লোকজন।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, ওষুধ না থাকায় এখন বাধ্য হয়ে ফার্মেসি থেকে কিনে খেতে হচ্ছে। আগে বিনামূল্যে যেটা পেতাম, এখন খরচ করতে হচ্ছে। আমাদের মতো গরিবের পক্ষে নিয়মিত কেনা সম্ভব না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাসিন্দা জানান স্ত্রীর জন্য পিল আর ক্যালসিয়াম নিতে গিয়ে ফার্মেসিতে গিয়েছি। সব কেনা সম্ভব না। এই জন্য সরকারি কেন্দ্রের উপর ভরসা করেছিলাম।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রশান্ত সিকদার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলায় সেবা দিতে আমরা আন্তরিক। কিন্তু ঊর্ধ্বতন দপ্তর থেকে দীর্ঘদিন ওষুধ সরবরাহ না থাকায় কিছুটা ভিড়ম্বনায় আছি।বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।#