মমিনুল ইসলাম মুন, বিশেষ প্রতিনিধি : রাজশাহীর তানোরে সরকারি খাসপুকুর ও গাছ দখল-লুটে প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ভূয়া সমিতির নামে সরকারি খাসপুকুর দখল ও মাছ লুটের পাঁয়তারা করছেন। একই সঙ্গে পুকুরপাড়ের বেশ কয়েকটি আকাশমনি ও শিশুগাছ কেটে বিক্রির অভিযোগও এসেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের জোতগোকুল মৌজার ১.৭৬ একর খাসপুকুর (দাগ নং- আর.এস-৪৮৯) দীর্ঘদিন ধরে বৈধভাবে লীজ নিয়ে মাছ চাষ করছিলো ‘সারাংপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি’। পরে ১৪৩২-১৪৩৪ সনের জন্য নতুন দরপত্র আহবান করলে মোহনপুর উপজেলার ‘বরিঠা একতা মৎস্যজীবি সমিতি’ সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়। তবে তদন্তে উঠে আসে, ওই সমিতির সভাপতি-সেক্রেটারিসহ ১২ জন সদস্যই ভূয়া—তাদের প্রকৃত মৎস্যজীবি হিসেবে কোনো নিবন্ধন নেই। এই সুযোগে সমিতির ভাড়াটিয়া হয়ে ওঠেন প্রশান্ত কুমার (৪৬), আনোয়ার হোসেন (৪৫) ও মোতাল্লেব আলী (৪৩)।
অভিযোগ রয়েছে, তারা ভুয়া সমিতির কাগজপত্র দেখিয়ে সরকারি গাছ ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করেন এবং বৈধ লীজগ্রহীতাদের পুকুরভর্তি মাছ পেশিশক্তির জোরে দখলের হুমকি দেন। এ ঘটনায় স্থানীয় শরিফুল ইসলাম ও সততা মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির তত্ত্বাবধায়ক কৃষিবিদ সিদ্দিকা তামান্না পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে প্রকৃতপক্ষে বরিঠা সমিতির সদস্যরা নিবন্ধিত মৎস্যজীবি নন বলে প্রমাণিত হয়। ফলে পুকুর ইজারার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে।
অভিযোগকারী শরিফুল ও তামান্না জানান, প্রশান্ত ও আনোয়ার দীর্ঘদিন ধরে সরকারি সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা ভুয়া সমিতির কাগজপত্র তৈরি করে সরকারি খাস সম্পদ আত্মসাৎ করতে চান।
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত সালমান বলেন, “অভিযোগের কারণে পুকুরটি এখনো লীজ দেয়া হয়নি। সমিতির সদস্যপদ যাচাইয়ে বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিবেদন নেয়া হচ্ছে। সবকিছু যাচাই শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।” সরকারি সম্পদ দখল ও গাছ কর্তনের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা দ্রুত প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।#