মমিনুল ইসলাম মুন, বিশেষ প্রতিনিধি : রাজশাহীর তানোর উপজেলায় ‘উত্তরবঙ্গ সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামের একটি কথিত এনজিওর প্রতারণায় সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছেন অসংখ্য দরিদ্র গ্রাহক। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) এর কোনো অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে ক্ষুদ্রঋণ ও সঞ্চয় কার্যক্রম পরিচালনা করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে উধাও হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলাকে কেন্দ্র করে এই সংস্থাটি রাজশাহীর তানোর, নাচোলসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় শাখা খুলে দশ বছরে দ্বিগুণ টাকা ফেরৎ ও এক লাখ টাকায় বছরে ১৫ হাজার টাকা মুনাফা এমন লোভনীয় প্রতিশ্রুতিতে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ সংগ্রহ করে। এনজিওটির সঙ্গে স্থানীয় এক জামায়াত মতাদর্শী প্রভাবশালী ব্যক্তি খায়রুল ইসলামের সম্পৃক্ততার অভিযোগও পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির, এরিয়া ম্যানেজার খায়রুল ইসলাম, এবং মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করতেন মুকুল ও সুমন আলী। তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ তাঁরা বিভিন্ন গ্রামে গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়মিত ডিপিএস ও সঞ্চয় জমা নিতেন। কিন্তু হঠাৎ একদিন অফিস বন্ধ করে সবাই উধাও হয়ে যান। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আবু বাক্কার, সেলিনা ও রিপন আদালতে মামলা করেছেন। মামলায় সাইদুর রহমান, খায়রুল ইসলাম, সুমন ও মুকুল কে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন, এবং আসামিদের কেউ কেউ ইতিমধ্যেই অল্প কয়েকদিন কারাভোগও করেছেন বলে জানা গেছে।
তানোরের বাধাইড় ইউনিয়নের শিবরামপুর গ্রামের অন্তত ২২ জন গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ওই তিনজন মিলে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই এনজিওর গ্রাহক মহাসিন আলী (হিসাব নং ২৬৭) জমা রেখেছেন ৩ লাখ টাকা, প্রতিবন্ধী যুবক আলতাফুর রহমান (হিসাব নং ৪৫০) ২ লাখ টাকা, মেরিনা (হিসাব নং ২২৩২) ১ লাখ ৫ হাজার টাকা, রুবিনা (হিসাব নং ৪২৫) ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা, সুমন রানা (হিসাব নং ৩৩৬) ৫ লাখ টাকা জমা রেখেছেন। এছাড়াও আরো অনেকজন গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। শিবরামপুর গ্রামের আরেকজন লিটন নামের এক গ্রাহকের পরিবারের কাছ থেকেও প্রায় ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গ্রাহকরা কান্না জড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা না খেয়ে আছি, অথচ ওই তিনজন ভালো আছে। দিব্যি তাদের দিনকাল ভালোই চলছে। এমনকি তারা বিভিন্ন সময় টাকা চাইলে হুমকি দিচ্ছে। প্রতারিত গ্রাহকদের চোখে এখন শুধু হতাশা ও কান্না।
শিবরামপুর গ্রামের মাঞ্জেরা বেগম, সেলিনা, সুমন রানা ও রুবিনা সাংবাদিকদের কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন খায়রুল ভাইয়ের কথা বিশ্বাস করে আমরা টাকাটা জমা দিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, টাকায় যদি কিছু হয় তিনিই ক্ষতিপূরণ দেবেন। এখন তিনি বলছেন কিছু করতে পারবেন না। অথচ তারা টাকায় ধনী হয়েছেন, আমরা আজ না খেয়ে আছি। তারা সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকারের কাছে আকুতি জানিয়ে বলেন স্যার, আমাদের কষ্টের টাকা যেন ফেরত পাই, প্রতারকরা যেন শাস্তি পায়। আমাদের বাঁচান।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা মনে করছেন, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) এর অনুমোদন ছাড়া এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালাতে পারার পেছনে প্রশাসনিক উদাসীনতা রয়েছে। তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ের তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতারকদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে গ্রাহকদের টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের দাবি প্রতারকচক্রের সম্পদ জব্দ করা হোক। এমআরএ ও প্রশাসনের যৌথ তদন্তে টাকার উৎস ও লেনদেনের হিসাব বের করা হোক। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের আর্থিক সহায়তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক।
এ বিষয়ে উত্তরবঙ্গ এনজিওর ওই তিনজন এর মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে সংযোগ না পাওয়ায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।#