মমিনুল ইসলাম মুন বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা (১৪৪ ধারা) অমান্য করে জমি জবরদখল, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে মুন্ডুমালা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও তানোর থানায় পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মুন্ডুমালা হাট এলাকার মৃত লুৎফর রহমানের কন্যা মোসাঃ লাইলা শিরিন (জেমি) (৪২) ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য ওয়ারিশগণ অভিযোগে উল্লেখ করেছেন যে, তাঁদের পিতা প্রায় ৮০-৯০ বছর ধরে তফসিলভুক্ত সম্পত্তি ভোগ-দখল করে আসছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারীরাও উক্ত সম্পত্তি ভোগ-দখল করে আসছেন। জমিটির ওপর নির্মিত একটি মার্কেট তাঁদের তত্ত্বাবধানে ভাড়াটিয়াদের কাছে ভাড়া দেওয়া ছিল। অভিযোগে বলা হয়েছে, জমিটি নিয়ে মুন্ডুমালা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আমির উদ্দিনের সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। এ বিষয়ে আদালতে ১৪৪ ধারায় মামলা (নং ২৭৩/২০২১ অঃ প্রঃ, এডিএম ৭৫৪/২০২৫ তানোর) বিচারাধীন রয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, মামলায় নিষেধাজ্ঞা জারি থাকা সত্ত্বেও গত ৪ অক্টোবর (শনিবার) সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে অধ্যক্ষ আমির উদ্দিনের নেতৃত্বে প্রায় ৩০০-৩৫০ জন ব্যক্তি লাঠি, লোহার রড, হাঁসুয়া প্রভৃতি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বে-আইনী জনতা সৃষ্টি করে তাঁদের দখলকৃত সম্পত্তিতে প্রবেশ করেন। এ সময় দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়ে আনুমানিক ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া লুটকারীরা মোসাঃ জিনিয়া নামের এক নারীকে মারধর করে তাঁর গলায় থাকা স্বর্ণালঙ্কার, হাতের চুড়ি, মোবাইল ফোন ও ১৪৪ ধারার কাগজপত্র ছিনিয়ে নেন—যার মূল্য প্রায় ৮ লাখ টাকা বলে দাবি করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বিবাদীপক্ষের হুমকির কারণে অভিযোগকারীর পরিবার বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মুন্ডুমালা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আমির উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “উক্ত জমিটি মাদ্রাসার নিজস্ব সম্পত্তি। আদালতে এর প্রমাণপত্র রয়েছে। আমরা আমাদের বৈধ জায়গা দখল নিয়েছি, কোনো প্রকার লুটপাট বা হামলার ঘটনা ঘটেনি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাঈমা খান বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেউ যদি আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে থাকে, তাহলে তা আইনের আওতায় আনা হবে।”
এ বিষয়ে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি )এর সরকারি হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অভিযোগের তফসিল অনুযায়ী, বিরোধীয় সম্পত্তিটি রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার সাদিপুর মৌজায় (জে.এল নং–৬৮) অবস্থিত। স্থানীয় এলাকাবাসী ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানোর ও তানোর থানায় পৃথক দুইটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। উভয় অভিযোগের কপি ও ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে এসেছে, যা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।#