# আলিফ হোসেন,তানোর…………………………………………………………….
রাজশাহী-১ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নে (ইউপি) নৌকা ডুবির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আদর্শিক নেতাকর্মীরা নৌকা ডুবির আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে উঠেছে, তাদের হৃদয়ে হচ্ছে রক্তক্ষরণ, জনমনেও দেখা দিয়েছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া বইছে মুখরুচোক নানা গুন্জন। কামারগাঁ ইউপির গভীর নলকুপ অপারেটরদের চরম দৌরাত্ম্যে ও কৃষক শোষণে এমন পরিস্থিতির সুত্রপাত হয়েছে। এতে সাংসদকে নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হলেও পকেটভারী হচ্ছে চেয়ারম্যানের অনুগত হোমরাচোমরাদের বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক জৈষ্ঠ নেতা বলেন, আহসান মাস্টারের ভাতিজা মৎস্যজীবী লীগ নেতা রেজাউল ইসলামের গভীর নলকুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন জনৈক আব্দুল মজিদ। এমনকি তাদের পরিবারকে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে। আহসান মাস্টার ও মজিদের পারিবারিক ঐতিহ্য, সামাজিক মর্যাদা এবং ভোট করার সক্ষমতা কি একই সমান। আবার একটা সময় বিএনপি মতাদর্শী এক ইউপি সদস্য যিনি মাদারীপুর বাজারে প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি ও আওয়ামী লীগের পোস্টার পদদরিত করেছিলেন। তাকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছে। তিনি সভাপতি হয়েই এলাকার ৭টি গভীর নরকুপের নিযন্ত্রণ জল জমিদারী করছেন। এমনকি বিএনপি মতাদর্শীদের নাশকতা মামলায় জড়ানোর ভয় ও এলাকায় থাকার নিশ্চয়তা দিয়ে বাণিজ্য করছে।
ধানুরা গ্রামের অসংখ্য পরিবার দীর্ঘ প্রায় তিনমাস যাবত পুরুষশূণ্য থেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব পরিবারের অসহায় এই মানুষগুলোর দীর্ঘশ্বাস কি সৃষ্টিকর্তা শুনবে না-এর দায় নিবে কে ? তৃণমলের অভিমত, ধানুরাকেন্দ্রে দেশ স্বাধীনের পর সাধারণ নির্বাচনে এবার প্রথম নৌকাডুবির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এসব নেতাকর্মীরা বলছে, একইভাবে হরিপুর-ছাঐড় গ্রামে চেয়ারম্যানের অনুগত বাহিনীর আবির্ভাব ঘটেছে। অন্যর জমি দখল, পুকুর দখল, গভীর নলকুপ দখল ও সালিশ বানিজ্যে ইত্যাদি কারণে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ফজলে রাব্বি ফরহাদ ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর পরই গভীর নলকুপ নিয়ে শুরু হয়েছে বাণিজ্য। অধিকাংশক্ষেত্রে অপারেটর নিয়োগ পেতে দুই থেকে তিন লাখ টাকা গুনতে হয়েছে। আবার অনেক অপারেটরের কাছে থেকে জোরপুর্বক চাবি ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। কামারগাঁ ইউপিতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকুপের একশ্রেণীর অপারেটর এলাকায় ওয়াটার লর্ড (জল জমিদার) হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক বিবেচনা ও আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে দায়িত্ব পাওয়া অপারেটরগণ (জল জমিদার) কৃষকের কাছে মুর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছে।
গভীর নলকুপ স্কীমের জমি সাধারণ কৃষকের, রাজত্ব এসব অপারেটরদের। প্রতিবছর আলু মৌসুমে কৃষকের ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোরপুর্বক তাদের জমি ফড়িয়া আলুচাষিদের ইজারা দেয় অপারেটরেরা। কেউ ইজারা দিতে না চাইলে তার জমিতে সেচ বন্ধ করে দেয়। এতে কৃষকেরা বাধ্য হয় অপারেটরের কাছে জমি দিতে। কিন্ত্ত অপারেটরেরা প্রতি বিঘা জমি ১৮ হাজার টাকায় ইজারা দেন। আর জমির মালিককে ১০-১২ টাকা দেন। এটা অঘোষিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। এসব কারণে কৃষকের কাছে আর্শিবাদের গভীর নলকুপ অভিশাপ বা শাঁখের করাঁতে পরিণত হয়েছে।
কারণ একদিকে গভীর নলকুপ স্কীমে জমি চাষ করলে অপারেটরেরা শোষণ করে, অন্যদিকে জমি চাষ না করলে খাবারসহ আর্থিক সংকটে পড়ে। এদিকে এসব অপারেটরদের কারণে কৃষিবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সচেতন মহল এসব অপারেটরদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) জেল নম্বর ১৯২, মাদারীপুর মৌজায়, ২১১ নম্বর দাগে অবস্থিত গভীর নলকুপের অপারেটর মাদারীপুর গ্রামের মুকুলের স্ত্রী পারভিন। কিন্ত্ত মাদারীপুর গ্রামের আপেল জোরপুর্বক গভীর নলকুপ দখলে নিয়েছে। সেচ নিয়ে তিনি রীতিমতো জল জমিদারী শুরু করেছে। এতে এলাকার সাধারণ কৃষক ফুঁসে উঠেছে। এসব কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র চাপা পড়ে যাচ্ছে। স্থানীয় সাংসদ ও দলের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
জানা গেছে, স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী কৃষকের দুঃখ-দুরদশা লাঘবের জন্য সকল গভীর নলকুপ সমিতির মাধ্যমে পরিচালনা ও স্কীমের কৃষকের মতামতের ভিত্তিতে অপারেটর নিয়োগের নির্দেশনা দিয়েছেন। বিএমডিএ কর্তৃপক্ষেরও নির্দেশনা রয়েছে। কিন্ত্ত অজ্ঞাত কারণে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে তানোর বিএমডিএ’র সহকারী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, জমি লীজ কিভাবে হবে এসব তার দেখার বিষয় না। তার পরেও কোনো কৃষক লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কামারগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি ফরহাদ বলেন, গভীর নলকুপ অপারেটর নিয়োগে তার কোনো ভুমিকা নাই, এসব রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অপপ্রচার।#