ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও এলজিইডিতে বদলির ভেলকিবাজি চলছে। যদিও এলজিইডি’র অনেকেই বলছেন, এসব ভেলকিবাজি নয় বদলি বাণিজ্য। তথ্যমতে, গত ২২শে আগস্ট অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক বদলি আদেশে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাবুদ হোসেনকে বদলি করা হয় রাণীশংকৈল উপজেলা এলজিইডিতে। মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে বিগত ৫ই সেপ্টেম্বর ওই অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক বদলি আদেশেই রাণীশংকৈল এলজিইডি থেকে আবার নিয়ে আসা হয় পূর্বের কর্মস্থল সদর উপজেলা এলজিইডিতে।
এদিকে গত ৯ই অক্টোবর গাইবান্ধা এলজিইডিতে কর্মরত সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদকে বদলি করা হয় ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা এলজিইডিতে। তিনি সেখানে যোগদান করতে না করতেই গত ১৬ই অক্টোবর আলি আখতার হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী (গ্রেড-১) ও শফিকুল ইসলাম সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী (প্রশাসন) এর যৌথ স্বাক্ষরিত এক বদলির আদেশ সংশোধন করে সুলতান মাহমুদকে বদলি করা হয় হরিপুর উপজেলা এলজিইডিতে। সেদিনই হরিপুর উপজেলায় কর্মরত উপজেলা প্রকৌশলী মাইনুল ইসলামকে তাঁদেরই যৌথ স্বাক্ষরে নিয়ে আসা হয় বালিয়াডাঙ্গী এলজিইডিতে।
মাইনুল ইসলাম ২০১১ সালের ১৯শে অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় এক যুগ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকাবস্থায় নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি তাঁর অনিয়ম দুর্নীতি আড়াল করতে কৌশলে ঠাকুরগাঁও-২ (বালিয়াডাঙ্গী-হরিপুর) আসনের আওয়ামী লীগ থেকে টানা সাতবারের নির্বাচিত এমপি দবিরুল ইসলামকে ধর্মের পিতা বানান। ফলে নিজেকে এমপি’র আরেক পুত্র দাবি করা ইঞ্জিনিয়ার মাইনুল ইসলামের দৌরাত্ম্য আর আধিপত্য আরো বাড়তে থাকে। এসময় এমপি দবিরুল-সুজনের ওপর ভর করে কয়েকজন ঠিকাদার প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হওয়ার পাশাপাশি মাইনুল ইসলামও অনেক সম্পদের মালিক হন।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি এমপি দবিরুল-সুজনের ইশারায় তাদের মনোনীত দুই একজন ঠিকাদারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেন এবং প্রভাব খাটিয়ে গত এক যুগে কোটি কোটি টাকার কাজ বাগিয়েছেন। যে কাজগুলো নামমাত্র করেই বিল উত্তোলন করেছেন। আবার কখনো আগেই বিল তুলে নেয়ার সহায়তা করেছেন, পরে নামমাত্র কিছু কাজ করে সিংহভাগ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন। এলজিইডিতে সিন্ডিকেট আর দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন তিনি।
ইঞ্জিনিয়ার মাইনুল উপজেলায় চাকুরি করলেও থাকতেন জেলা শহরে। যাতায়াত করতেন প্রইভেট কারে। তবে প্রাইভেট কারে অফিসে যাতায়াতের কারণে সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজ সকলের কাছে তিনি ছিলেন প্রশ্নবিদ্ধ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এ জেলায় যোগদান করার পর থেকে যে কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলী পেয়েছেন সবাইকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি এলজিইডিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে প্রধান প্রকৌশলী সবাই তার পকেটে। তা নাহলে এক উপজেলাতেই প্রায় এক যুগ চাকুরি করলেন কিভাবে। আবার অন্যত্র্য বদলির কয়েকদিন যেতে না যেতেই আগের কর্মস্থলে ফিরলেন কিভাবে। একারণে ঠিকাদারসহ এলাকার সচেতন মহল ও এলজিইডি’র অনেকেই ইঞ্জিনিয়ার মাইনুল ইসলামকে ‘এলজিইডি’র মাফিয়া’ বলে জানতেন।
এদিকে গাইবান্ধা এলজিইডিতে কর্মরত সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ হরিপুর উপজেলায় যোগদান করায় ইঞ্জিনিয়ার মাইনুল ইসলাম বিষয়টি ভালচোখে নিচ্ছেন না। ইতিমধ্যে তিনি হরিপুর উপজেলাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নিতে এলজিইডিতে তদবিরও শুরু করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলজিইডি’র কয়েকজন সবুজনগরকে বলেন, তাঁরমতো ইঞ্জিনিয়াররাই এলজিইডি’র ভাবমূর্তি নষ্ট করেন। তবে তিনি যে পরিমাণ অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন তা বলা বাহুল্য।
এব্যাপারে প্রশাসন এবং শৃঙ্খলা ও তদন্ত ইউনিট স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি’র তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান এর সঙ্গে মুঠোফনে যোগাযোগ করা হলে তাঁকে পাওয়া য়ায়নি। এ ব্যাপারে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রকৌশলী মাইনুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ক্ষমতা নয়, আমার পারফরমেন্স দেখে আবার আমাকে নিয়ে এসেছে। অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আসার পরে অনলাইন করে দিয়েছে। অনলাইনে যে কাজ পাবে সেই কাজ করবে এখানে যদি আমার বাপও আসে আমার ক্ষমতা নাই। বিপুল পরিমাণ সম্পদ করার প্রশ্নই আসে না।#