চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ চার বিজিবি’র সদস্য’র বিরুদ্ধে ৮ লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেছেন গণ অধিকার পরিষদের এক নেতা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির জেলা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত অভিযোগ করে বলেন, গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে কানসাট থেকে ২টি মোবাইল কিনে বাড়ি ফেরার পথে পল্লী বিদুৎ অফিসের সামনে আসলে পোশাক পরিহিত ৪ জন বিজিবি সদস্য আমাদের সামনে বাঁশ ও লাঠি দাঁড়ায় এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করে ব্যাগে কি আছে? আমি তাকে ব্যাগে থাকা টাকা ও মোবাইল থাকার কথা জানাই। আমার পেছনে থাকা ছোট ভাইয়ের পিঠে ব্যাগে ভেতর ৮ লক্ষ টাকা ও ২টি মোবাইল ফোনের ব্যাগটি তার নিয়ে নেয় এবং আমাদের সাথে আসতে বলে। একপর্যায়ে ওই চার বিজিবি সদস্য আমার ব্যাগটি নিয়ে দুইটি মোটরসাইকেলে পাশের সরু রাস্তা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। একজন বিজিবি সদস্য’র নেম প্লেটে লেখা ছিল মোতালেব। আমি তাদের পেছন পেছন কলেজ পর্যন্ত গিয়েও তাদের দেখতে পাইনি। এমন পরিস্থিতিতে আমি কানসাট পল্লীবিদ্যুৎ মোড়ে তাৎক্ষণিক মোবাইলে লাইভে আসি এবং বিষয়টি সকলকে জানিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি।
এঘটনার পর আমি শিবগঞ্জ থানায় গিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিই। পরে ৫৯ বিজিবি’র ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কে ফোনে বিস্তারিত জানাই। তখন তিনি আমাকে জানান, ওই স্থানে বিজিবি’র কোন টহল টিম নেই এবং বিজিবি এধরণের কোন কাজ করতে পারে না বলে জানান। পাশ্ববর্তী একটি স্থানের সিটিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে ওই চার বিজিবি সদস্যকে আমার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখতে পাই।
আলমগীর জানান, সেই ভিডিও ফুটেজ নিয়ে সোনামসজিদ বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডারের নিকট দেখালে তিনি তাদের বিজিবি সদস্য হিসেবে নিশ্চিত করেন। পরে সেখান থেকে আমার সাথে থাকা গণ অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল আমিন ভাইসহ আমাদের ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের গোবরাতলা সদর দপ্তরে সিও মহোদয় ডেকে পাঠান। সেখানে গেলে তিনি আমার ব্যাগটি থেকে কয়েকটি মোবাইল ফোন বের করে দেখান। কিন্তু সেখানে আমার ফোন দুটি এবং টাকা ছিল না।
একপর্যায়ে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে আমার সাথে হ্যান্ডসেক করে ছবি তোলেন এবং নিচে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পরও আমাকে আমার ৮ লক্ষ টাকা ও মোবাইল ফোন ফেরত না দিয়েই ফেরত পাঠিয়ে দেন। আলমগীর আরও অভিযোগ করেন, সিও আমাকে এসব ভুলে গিয়ে স্বাভাবিক হতে বলেন এবং আমার ছেলেকে ক্যান্টমেন্ট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এমনকি আমার ছেলের জন্য ১০ বছর বিনা বেতনে পড়াশোনার ব্যবস্থা করার কথাও বলেন।
জেলা গণ অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, সিও আমাদের বলেন, ওই চার বিজিবি সদস্য বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আমাদের ২৪টি মোবাইল ফোন দেখিয়ে সেগুলো আমাদের গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন এবং বলেন এই ফোন গুলো নিয়ে আপনাদের ক্ষতি রিকভারী করেন। আমি তা প্রত্যাখান করে তাকে প্রশ্ন করি, এসব অবৈধ ফোন তার ব্যাগে পাওয়া গেলে আপনি আলমগীরকে কেন আটক করলেন না? আবার আমাদের সাথে আলোচনার জন্য আপনার অফিসে কেন ডাকলেন?
জবাবে সিও জানান, আপনাদের রাজনৈতিক একটা প্রভাব থাকতে পারে, তাই সে দিকে না গিয়ে এগুলো নিয়ে রিকভার করতে বলেন। তবে আমরা তার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে ফিরে আসি। বিজিবি সদস্যদের বিচার ও ছিনতাই হওয়া অর্থ ও মোবাইলে ফেরত প্রদানের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান এই গণ অধিকার পরিষদ নেতা।
শিবগঞ্জ থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া জানান, বৃহস্পতিবার আলমগীর কবির বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে, তদন্তের পর এবিষয়ে বিস্তারিতর বলতে পারব। এঘটনায় পরদিন শুক্রবার বিজিবিও একটি মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান ওসি গোলাম কিবরিয়া। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৯ মহানন্দা বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবিরিয়া হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় জানান, সুনিদৃষ্ট তথ্যে ভিত্তিতে সোনামসজিদ-শিবগঞ্জ সড়কে মোটরসাইকেলযোগে আসা দুই ব্যক্তিকে আসতে দেখে দহ দল তাদের থামতে বলা হয়। কথা বলার সময় সুযোগবুঝে তারা মোটারসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।
এসময় টহল কমান্ডার ঘাড়ে থাকা ব্যাগটি ধরলে তারা সেটি ফেলেই পালিয় যায়। সেই ব্যাগ তল্লাশী করে ২৪টি ভারতীয় চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আলমগীর একজন ভারতীয় চোরাই মোবাইল ব্যবসায়ী। এছাড়া ৮ লক্ষ টাকা বিজিবি কর্তৃক ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। এধরণের সাজানো নাটক সু-শৃংখল একটি বাহিনীর জন্য মানহানির সুস্পষ্ট অপচেষ্টা।#