# শিবগঞ্জ প্রতিনিধি………………………………………
শিবগঞ্জ থানায় বোনের ছেলেকে দেখতে গিয়ে শিউলী খাতুনের সঙ্গে থানার ওসির সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।এক পর্যায়ে ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে নিজে এবং অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ঐ প্রতিবাদী নারীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং শারীরিক মারধর ও নির্যাতন করেন বলে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেছেন।
শিউলী খাতুন অভিযোগ করে আরো বলেন, শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনার দিন শিউলীর উদ্দেশে বলেন,আমাকে এডিসি হারুনের গল্প শুনাচ্ছিস, আমাদের বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ দিয়েছিস, তোর অবস্থা খারাপ করে দিব। এরপরই থানা চত্বরে ওসির নির্দেশে ও তার উপস্থিতিতে কয়েকজন এসআই ও পুলিশ সদস্য মিলে প্রকাশ্যে মারধর শুরু করে। পুলিশের অমানবিক শারিরীক নির্যাতনে শিউলী বেগম অসুস্থ হয়ে পড়লে তড়িঘড়ি করে গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। পরে হাসপাতাল থেকে সুস্থ না হলেও জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামী বোনের ছেলেকে দেখতে গিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মারধর, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এক নারী। আজ বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা শহরের একটি হোটেলে এই সংবাদ সম্মেলন করে শিবগঞ্জ থানার ওসির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ আনেন শিবগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের আব্দুল মজিদের মেয়ে শিউলী খাতুন।
সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী অভিযোগ করেন, গত বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বোনের মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে ইমনকে একটি মামলায় আটক করলে মা ও বোনসহ পরিবাররের কয়েকজন সদস্য থানায় দেখতে যায়। ইমন মানসিক ভারসাম্যহীন এই বিষয়টি পুলিশকে বোঝাতে তার চিকিৎসাপত্র দেখাতে গেলে তা দেখতে অস্বীকৃতি জানায় পুলিশ। পরে ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য মিলে সেখানে পড়ে থাকা সজনে গাছের ডাল দিয়ে বেধড়ক মারধর করে।
তিনি আরও বলেন, শিবগঞ্জ থানার ওসি চৌধুরী জোবায়ের আহমেদের নির্দেশে ও উপস্থিতিতে পুলিশ আমাকে আমার বোন ও মাকে বেধড়ক মারধর করে। এতে আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয় এবং গুরুতর আহত হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও আমাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করতে নিয়ে যাওয়ার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরে আমি জামিনে মুক্ত হয়।
ওই নারী বলেন, আমার বোনের ছেলে ও মনাকষা বিশ্বনাথপুরের তোজাম্মেল হকের ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীম ইমনকে গত বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ আটক করে। এর আগে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা থেকে ফিরে আসে ইমন। তার বন্ধু শামীম দেখা করব বলে ডাকলে সেখানে গেলে পুলিশ তাকে আটক করে পূর্বের একটি ছিনতাই মামলায়।
শিউলী খাতুন বলেন, আমাকে মারধরের পর আহত হলেও পুলিশ ক্ষান্ত হয়নি। আমাকে হাসপাতালে থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় বিবস্ত্র হয়ে গেলেও পুলিশ কোন ছাড় দেয়নি। আমরা এটার বিচার চাই। পুলিশ এটি অন্যায় করেছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানায়।
একজন সেবাগ্রহীতা নারীকে নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো থানার মধ্যে এভাবে মারধরের পর মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
তিনি আরও বলেন, পুলিশের উপর আস্থা রেখে মানুষ বিচারের দাবিতে থানায় যায়। থানায় গিয়ে উল্টো এমন হামলা মারধর ও মামলায় পড়তে হলে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা হারিয়ে যাবে। আশা করি পুলিশ সুপার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আমাকে অন্যায়ভাবে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করেছে। আমি জামিনে মুক্ত হয়ে এসে এই সংবাদ সম্মেলনে বিচার দাবি করছি। বর্তমানে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ এখনও আমাদেরকে নানারকম ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে।
মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে শিবগঞ্জ থানার ওসি চৌধুরী জোবায়ের আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে দেখতে এসে থানায় হট্টগোল করে ওই নারী। এছাড়াও পুলিশকে গালিগালাজ করে ও অশ্লীল ভাষায় কথা বলে। এমনকি থানা চত্বরে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। এসময় উপস্থিত জনতা ও পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। এসময় শরীরে আঘাত পেলে পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা করায়। ওসি আরও বলেন, থানা চত্বরের একটি আমগাছে আত্মহত্যার চেষ্টা করায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায় তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পুলিশের সাথে তাদের কোন বিরোধ ছিল না। থানায় এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ও তাকে আত্মহত্যা থেকে বাঁচাতে পুলিশ ও উপস্থিত জনতা সহযোগিতা করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, শিউলী খাতুনের মা সালেহা বেগম, বোন রেখা রানি, বোনের মেয়ে মাসুমা, চাঁদনী, তামান্না, প্রতিবেশী মুনিরুল রহমানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।।