গাইবান্ধা প্রতিনিধি :গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জনবল নিয়োগ পরিক্ষায় ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের ব্যবহার এবং বদলি পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১১ জানুয়ারি শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পুলিশ সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরআগে একইদিন সকাল ১০ টায় শুরু হওয়া দেড় ঘণ্টার লিখিত পরীক্ষা চলে সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মো. ছাইমুন ইসলাম (২৫), শাহ সুলতান (৩২), আসাদুজ্জামান আসাদ ও রাশেদ আহম্মেদ (২৪)। ছাইমুন ইসলাম ভবানীপুরের শামসুল হকের ছেলে, আসাদুজ্জামান সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পূৃর্ব ছাপরহাটী গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে, শাহ সুলতান মধ্য উড়িয়ার আবুল কালাম আজাদের ছেলে এবং রাশেদ আহমেদ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ি এলাকার বুলবুল আহমেদের ছেলে। তাদের মধ্যে ছাইমুন ইসলামের কাছ থেকে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস পাওয়া গেছে এবং আসাদুজ্জামান আসাদ (প্রক্সি) মূল পরীক্ষার্থীর পরিবর্তে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
এছাড়া শাহ সুলতান ও রাশেদ আহমেদ নামে অপর দুজনকে সন্দেহ ভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি মোবাইল ফোনে নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম। তিনি বলেন, গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নিয়ন্ত্রণাধীন জনবল নিয়োগ পরিক্ষায় অসদুপায় অর্থাৎ ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার এবং প্রক্সি পরিক্ষা দেওয়া দুই পরিক্ষার্থীসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। অভিযুক্তদের নামে নিয়মিত মামলা হবে। তারা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানায়, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ও মুদ্রাক্ষরিক পদে ১৩ জন এবং হিসাব সহকারী পদে ৩ জন সহ মোট ১৬ জন তৃতীয় শ্রেণির জনবল নিয়োগের জন্য ২০২২ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। ওই নিয়োগ পরিক্ষায় আজ ৩ হাজার ৭৭৯ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। প্রসঙ্গত: গেল বছরের ২৫ অক্টোবর একই কার্যালয়ে রাজস্ব শাখার চতুর্থ শ্রেণির অফিস সহায়ক (২০ তম গ্রেড) ৫৫টি শূণ্য পদের জনবল নিয়োগের লিখিত পরিক্ষা ডিভাইসসহ এক নারী পরিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
এছাড়া ২০২৩ সালের ৮ ডিসেম্বর গাইবান্ধায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে জালিয়াতির অভিযোগে ৩৩ জন ওই নিয়োগ পরিক্ষার পরিক্ষার্থী এবং বহিরাগত ৫ জন সহ মোট ৩৮ জনকে আটক করে র্যাব। একই সাথে এদিন কেন্দ্র থেকেই বহিষ্কার করা হয় ৩৬ জন পরিক্ষার্থীকে। এদিন র্যাব-১৩ গাইবান্ধার ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকর্মীদের জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে থেকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসাদুপায় অবলম্বনকারী ৩২ জন পরীক্ষার্থী ও এই চক্রের হোতা মারুফ, মুন্না, সোহেল, নজরুল ও সোহাগসহ মোট ৩৮ জনকে আটক করা হয়। পরে তাদের কাছ থেকে ২২ টি মাস্টার কার্ড, ১৯ টি ব্লুটুথ ডিভাইস, ১৬ টি মোবাইল, স্ট্যাম্প ও ব্যাংক চেক উদ্ধার করা হয়।
চক্রের ওই ৫ সদস্যের মধ্যে সোহেল নামে এক সদস্য ডিভাইস সংগ্রহ ও বিতরণ করেন, নজরুল পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করতেন এবং মারুফ ও মুন্না বাহির থেকে প্রশ্নপত্র সমাধান করে পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার সাথে জড়িত জালিয়াতি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে বলেও সে সময়ে জানায় র্যাব।