# শাহীনুর হাসান………………………………………
আছেন কেউ জনদরদী মানুষ দেশ তথা সাধারণ মানুষদের রক্ষা করার? আসলে ‘মানুষ’ কে মানুষকে তো আমরা চিনিই না, মানুষের সংজ্ঞা কী? ‘মানুষ’ যার মধ্যে ¯েœহ, ভালবাসা, মমতা, ভদ্রতা, অন্তরঙ্গতা সততা, ইত্যাদি মানবীয় গুণ দেয়া হয়েছে, তাকেই প্রকৃত মানুষ বলে।
একই শব্দ থেকে নির্গত হয়েছে ‘ইনসান’ বা ‘ইনসানিয়াত’ শব্দের অর্থ প্রশাংসনীয় গুণাবলী বা মনুষ্যত্ব, প্রকৃত মানুষ, মানবতা, মানুষের মধ্যে থাকা উচিত এমন সদগুণ। সেখান থেকেই বলা হয় ‘ইনসানে কামেল’ বা সমুদয় মানবীয় গুণ যার ভিতর পরিপূর্ণভাবে বর্তমান। উক্ত অর্থেও ‘মানুষ’ কি এখন সচরাচর দেখা যায়? দুই চোখ, দুই কান, দুই হাত-পা ও মাথাবিশিষ্ট মানুষ আকৃতির অবয়ন থাকলেই কি তাকে ‘মানুষ’ বলা যায়? না, যার মধ্যে মানবীয় গুণ নেই, সে মানুষ নয়-অমানুষ, নর নয়-বানর। সমাজে এই অমানুষের সংখ্যা এত বেশি যে, মানুষ খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর। তাই দার্শনিক ডায়োজিনিস সম্পর্কে বলা হয় যে, তিনি একদিন ভরদুপুরে হারিকেল হাতে ধীরে ধীরে চলছিলেন। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ভরদুপুরে আপনার হাতে হারিকেল কেন? উত্তরে তিনি বলেন,‘আমি আসলে মানুষ খুঁজছি’।
রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি সেক্টরই অমানুষে ভরপুর। কিছু মানুষ থাকলেও তারা কোণঠাসা। সততার দৃষ্টান্ত পেশ করতে পারেন না। তারা অবহেলিত, নানাভাবে নির্যাতিত। অমানুষের ভিড়ে তাদের খুঁজেও পাওয়া যায় না। তাই সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষের বড়ই অভাব! সবচেয়ে ভয়ানক ব্যপার হল, অমানুষগুলো যে মানুষ না- সেই অনুভুতিটুকুও তারা হারিয়ে ফেলেছে। যদিও তারা উচ্চ ডিগ্রীধারী, বিভিন্ন শ্রেীণীর ক্যাডার। এরা যেহেতু মনুষ্যত্বহীন তাই এদের পরিচয় হল ধূর্ত, ক্রিমিনাল, ভÐ, মিথ্যুক, ধোঁকাবাজ, দুর্নীতিবাজ, হারামখোর, সূদখোর, ঘুষখোর, সন্ত্রাসী, লুচ্চা-লম্পট, ধর্ষক, নরখাদক ইত্যাদি। এদের পরিচয় মানুষ হতে পারে না। এই অমানুষের সংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সমাজে সব ধরণের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ফলে সামাজিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব, দেশপ্রেম, নৈতিকতা উঠে যাচ্ছে। তাই এই অমানুষরাই উন্নত দেশ গড়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা।
রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা যারা আত্মসাৎ করে, ক্ষুধার্ত-পীড়িত মানুষের আহার চাল, ডাল, ত্রাণ যারা চুরি করে, তারা দেশের সম্পদ না শত্রæ? যাদের কাছে নিরীহ মানুষের জান-মাল নিরাপদ নয়, তারা নেতা না নরকের আবর্জনা? যারা শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রের মহড়া দেয়, হত্যা, সন্ত্রাস ও ধর্ষণের রাজ্য কায়েম করে, তারা জাতির ভবিষ্যত না-কি ভয়ানক বিভীষিকা? অফিস-আদালতে যারা ফাইল আটকে রেখে, বিভিন্ন ছলচাতুরী করে ঘুষ খাচ্ছে, কোটি কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করছে, ভিনদেশে বিশাল বিশাল অট্রলিকা তৈরি করছে, তারা দেশের সন্তান না সমস্যা? ইঞ্জিনিয়ার সামান্য কলমের খোঁচায় মূহূর্তেই টোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, দেশকে ভঙ্গুর বানাচ্ছে, অর্থনীতির শিকড় কাটছে। নি¤œ মানের উপকরণ দিয়ে কাজ করতে গিয়ে উদ্বোধনের আগেই তা ধ্বসে পড়ছে। তারা কি ইঞ্জিনিয়ার না…….? আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, যে যতটুকু অত্মসাৎ করেছে তা বহণ করে সে ক্বিয়ামতের মাঠে হাযির হবে।
দুর্নীতির অর্থই তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে এবং পুড়িয়ে পুড়িয়ে আঙ্গার বানাবে।
মানুষ গড়ার কারিগর খ্যত শিক্ষাগুরুরা আজ কোচিং-প্রাইভেট বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। তাদের কাছে এখন ছাত্র-ছাত্রী নিরাপদ নয়। ক্লাসেই তারা বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও কুরুচিপূর্ণ স্বভাব শিক্ষা দিচ্ছেন। এভাবেই প্রকৃত শিক্ষা উঠে যাচ্ছে আর মূর্খতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ডাক্তারগণ নিজের কর্মস্থল বাদ দিয়ে ক্লিনিক ও প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখতে অধিক আগ্রহী। সামান্য কমিশনের আশায় রোগীকে বাহুল্য টেস্টের ফিরিস্তি দিতে দ্বিধাবোধ করেন না। ঔষধ কোম্পানীর কমিশনের লোভে নি¤œমানের ঔষধ লিখতে তাদের হাত কাঁপে না। গরীব রোগীদের সাথেও নির্দয় আচরণ করতেও কুন্ঠাবোধ করেন না। তারা তাদের নিষ্ঠা, সততা ও মর্যাদার কথা ভুলে গেছেন। ‘ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া’ খ্যত বহু আলেমও আজ নীতিভ্রষ্ট ও পথচ্যুত। বিবাহবহির্ভুত সম্পর্ক, অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা, শঠতা, লৌকিকতা, ধর্মব্যবসা, পেটপূঁজা, গীবত ও তোহমোতের দোষে জর্জারিত।
সদাচরণ ও সত্যতার বয়ানে মাঠ গরম করলেও নিজের মধ্যে তার লেশমাত্র পাওয়া যায় না। কাজের চেয়ে প্রচার-প্রচারণায় বহুগুণবেশি। সাধারণ মানুষকে প্রতারণায় ফেলে মুহূর্তেই জিরোকে হিরো বলে চালিয়ে দিতে পারেন। জাতির বিবেক খ্যাত বহু সাংবাদিক স্বীয় নিরপেক্ষতা হারিয়ে একমুঠো ক্ষুদ-কুঁড়ির আশায় মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনে মসগুল। পুলিশ থেকে শুরু করে অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তার ভূমিকা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। ঘুষ বানিজ্য, মাদক চোরাচালান, নারী নির্যাতন এমনকি গুম-খুন, ধর্ষণের মত অপরাধে তাদের সর্ম্পক্ততায় মানুষ আজ রীতিমত হতবাক। যাদের কাছে মানুষ নিরাপত্তা পাবে, তারায় আজ রাক্ষস নামের ভক্ষক। ‘নিশ্চয় নিকৃষ্ট দায়িত্বশীল ঐ ব্যক্তি যে অধীনস্ত জনগণের প্রতি অত্যাচার করে’।
জাতি এই গ্যড়াকল থেকে মুক্তি চায়। অমানুষদের বিষাক্ত ছোবল হতে নিষ্কৃতি চায়। সর্বত্র সৎ-নিষ্ঠাবান মানুষের সাক্ষাত চায়! দুর্নীতির মূলোৎপাটনকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার সন্ধান চায়! আর ঐ নির্ভীক ন্যায়পরায়ন মানুষ গড়ার মূলসূত্র হল ‘সত্যবাদিতা’। ‘সত্যবাদিতা’ ও পরকালীন জবাবদিহিতামূলক জীবন গঠন করতে পারলেই কাঙ্খিত মানুষের দেখা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।#
এডিট: আরজা/৪