বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী ও রুস্তমপুর হাট-বাজারের ইজারার টাকা, ভ্যাট ও ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলায় আসামিরা হলেন- আড়ানী পৌরসভার সাবেক মেয়র মুক্তার আলী ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র কার্ত্তিক চন্দ্র হালদার, রুস্তমপুর হাটের সাবেক ইজারাদার মামুন হোসেন, আবুল খায়ের সুমন ও একরামুল হক, আড়ানী হাটের সাবেক ইজারাদার ওবাইদুল ইসলাম, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. আসাদুজ্জামান, পৌরসভার সাবেক সহকারী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত সচিব শহিদুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (২৮-০৮-২০২৫) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার সাবেক মেয়র মুক্তার আলীর বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা করেছে দুদক। এর একটি হলো- পৌরসভার গাড়ি না থাকলেও মেয়রের দায়িত্বে থাকাকালে মুক্তার আলী নিয়ম-বহির্ভূতভাবে পৌর তহবিল থেকে জ্বালানি তেল খরচ বাবদ ১৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা গ্রহণ করে নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে ব্যবহারসহ পাঁচজন ভুয়া কর্মচারী নিয়োগ দেখিয়ে বেতন-ভাতা বাবদ তুলে নিয়েছেন ৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন উপসহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান।
সুত্রে জানা যায়, আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলী ও কার্ত্তিক চন্দ্র হালদার ভারপ্রাপ্ত মেয়র পদে দায়িত্বে থাকাকালে ২০১৬-১৭ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে আড়ানী ও রুস্তমপুর হাট-বাজার ইজারা দেন। নীতিমালা অনুযায়ী, ইজারাদারকে ইজারামূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আয়কর দিতে হয়। সাত দিনের মধ্যে এই টাকা জমা দিয়ে ইজারার চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করতে হয়। কিন্তু ইজারাদারেরা দরপত্রের সঙ্গে শুধু প্রস্তাবিত ইজারামূল্যের ৩০ শতাংশ বিডি আকারে জমা দিয়েছেন। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে তাঁরা আর কোনো টাকা জমা দেননি। তা সত্ত্বেও পৌর কর্ক্ষৃপক্ষ ইজারার সম্পূর্ণ অর্থ আদায় না করে এবং ইজারার চুক্তিপত্র স্বাক্ষর না করে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে ইজারাদারদের আড়ানী ও রুস্তমপুর হাট-বাজার ইজারা দেন। তাঁরা ইজারামূল্যের ১ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৫ টাকা, ভ্যাট বাবদ ১৫ লাখ ৭ হাজার ২২৬ টাকা এবং আয়কর বাবদ ১ লাখ ৫০ হাজার ১৭ টাকা জমা দেননি। পৌর কর্তৃপক্ষের মোট পাওনা ছিল ১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ১০৮ টাকা। এই টাকা তাঁরা সবাই মিলে আত্মসাৎ করেছেন।
দুদক জানিয়েছে, পৌর কর্তৃপক্ষ নিয়ম-বহির্ভূতভাবে ইজারাদারদের কাছ থেকে বিবিধ রসিদ মূলে ইজারার টাকা গ্রহণ করে পৌরসভার হিসাবে জমা দেননি। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে এই টাকা লুটপাট করেছেন। দীর্ঘ অনুসন্ধানকালে এই দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই মামলা করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি ইতিমধ্যে আদালতকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে দুদক।
দুদক জানায়, মেয়র থাকাকালে (২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) পৌরসভার সরকারি গাড়ি না থাকায় মুক্তার আলী ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন। তবে নিয়ম অনুযায়ী পৌর পরিষদ ও সরকারকে অবহিত না করেই তিনি প্রতিদিন ৭ লিটার করে মোট ১৩ হাজার ৫৫ লিটার জ্বালানি তেলের খরচ দেখান। এতে পৌর তহবিল থেকে তিনি পান ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৮৫ টাকা। এছাড়া ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৫ টাকা অগ্রিম নিলেও কোনো ভাউচার দাখিল বা সমন্বয় করেননি। এভাবে তিনি মোট ১৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
অপরদিকে মুক্তার আলী মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি নুরুজ্জামান নাইম, শামীম আহাম্মেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, সঞ্জিব কুমার সাহা ও আবু সাঈদ নামে পাঁচজনকে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেখান। বাস্তবে তাদের নিয়োগ না দিয়েও তাদের নামে ৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা বেতন-ভাতা তোলা হয়।
দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বলেন, “ভুয়া নিয়োগ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা এবং তেলের নামে নিয়ম না মেনে অর্থ গ্রহণ করা—দন্ডবিধির ৪০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য মুক্তার আলীর বিরুদ্ধে মামলা দুটি দায়ের করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রেপ্তার হয়েছেন, দুদকের মামলার আসামি পৌরসভার সাবেক মেয়র মুক্তার আলী। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আড়ানী পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
মুঠোফোনে কথা হলে আড়ানী পৌরসভার সাবেক সহকারী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত সচিব শহিদুল ইসলাম বলেন,ওই সময়ে আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তার দাবি,তিনি ২০২২-২৩ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন।
আড়ানী পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র কার্ত্তিক চন্দ্র হালদার জানান,তিনি দায়িত্বে থাকাকালিন হাট-বাজার ইজারা দিয়েছিলেন। পরে মুক্তার আলী দায়িত্ব গ্রহন করে তিনিই সব করেছেন। ২০২২ সাল থেকে সাড়ে ৭মাস পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। #