
আব্দুল বাতেন, নিজস্ব প্রতিবেদক, শিবগঞ্জ : অমানবিক পুশইনের শিকার বহুল আলোচিত অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালী খাতুন ও তার পরিবারকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরের ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে (আইসিপি) দুই বাহিনীর পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
বিজিবির ৫৯ মহানন্দা ব্যাটालিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে সোনালী খাতুন ও তার আট বছরের ছেলে মো. সাব্বির শেখকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বিজিবি জানায়, তারা দুজনই সুস্থ ও নিরাপদ ছিলেন। গত ২৫ জুন ২০২৫ কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ছয়জন ভারতীয় নাগরিককে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশইন করে বিএসএফ। পরে তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ করলে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাদের আটক করে এবং ২২ আগস্ট আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে পাঠায়। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা সোনালী খাতুন এবং তার দুই নাবালক সন্তানও ছিল। মানবিক বিবেচনায় আদালত গত ২ ডিসেম্বর তাদের স্থানীয় জিম্মায় মুক্তি দেয় এবং কূটনৈতিক উদ্যোগে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশনা প্রদান করে।
অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের পুশইনের ঘটনায় সৃষ্ট মানবিক ঝুঁকি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি সদর দপ্তর কূটনৈতিক পর্যায়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করে। উভয় দেশের সম্মতির ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
হস্তান্তর শেষে লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের বলেন, বিএসএফের অমানবিক পুশইন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও দ্বিপাক্ষিক সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি অভিযোগ করেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ড সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মানবিক সংকট সৃষ্টি করছে এবং দুই দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ককেও প্রভাবিত করছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিজিবি মানবিক মূল্যবোধ ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে সম্পন্ন করেছে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুর নিরাপত্তা ও চিকিৎসাগত ঝুঁকি বিবেচনায় এ উদ্যোগ মানবিকতার একটি দৃষ্টান্ত। বিজিবি আশা প্রকাশ করেছে, ভবিষ্যতে বিএসএফ এ ধরনের অমানবিক এবং আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী পুশইন বন্ধ করবে এবং সীমান্তে মানবিক ও আইনসম্মত আচরণ বজায় রাখবে।#