মমিনুল ইসলাম মুন………………………………………………………..
রাজশাহীর তানোরের কামারগাঁ ইউনিয়ন (ইউপি) ভূমি কার্যলয়ের কর্মকর্তার (তহসিলদার) বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তিনফসলী কৃষি জমিকে পুরাতন পুকুর দেখিয়ে প্রতিবেদন দিয়ে পুকুর খননের সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এমন ভুয়া প্রতিবেদনে তানোর উপজেলা নিবার্হী অফিসার পুকুর খনেনের লিখিত অনুমতি দিয়েছেন,যা নিয়মনীতির বাইরে। উপজেলা নিবার্হী অফিসারে এধরণের সিদ্ধান্তে হতবাক হয়েছেন এলাকার সচেতনমহল।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, পুকুর দেখিয়ে প্রতিবেদন দেয়া হলেও কৃষি জমি দেখিয়ে খাজনা নেয়া হচ্ছে। এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। অথচ এখানে পুকুর খনন করা হলে অসময়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আশপাশের বিপুল পরিমাণ জমির ফসলহানির আশঙ্কা রয়েছে। আবার তার দেখাদেখি অন্যরাও কৃষি জমিতে পুকুর খননে উৎসাহী হয়ে উঠবে।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধ ছিল। কিন্ত্ত এখানে কাওসার আলী তহসিলদার হিসেবে যোগদানের পর পরই এলাকায় পুকুর খনন ও উঁচু জমি নিচু করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে মাটি বাণিজ্যে করায় এলাকার পরিবেশ দুষণ ও কাঁচা-পাকা রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। জানা গেছে, উপজেলার কাঁমারগা ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জেল নম্বর ১৭৯ হরিপুর মৌজায় খতিয়ান নম্বর ২০৫, ৪৭, ৬৩৩, ৬১২, ৬৩০, ৭৩৬,৭৯০ এবং খতিয়ান নম্বর ১৪৮ মোট ৭ দাগে ৩ দশমিক ৮৩ একর জমি রয়েছে যাহার শ্রেণী কৃষি। অথচ হরিপুর গ্রামের বিএনপি মতাদর্শী আব্দুল খালেকের পুত্র সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম তথ্য গোপণ ও প্রতারণা করে ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও’র কাছে থেকে পুরাতন পুকুর সংস্কারের অনুমতি নিয়ে তিনফসলী জমিতে পুকুর খনন করছে। আবার পুকুরের মাটি বিক্রি ও বিভিন্ন এলাকায় পরিবহন করতে গিয়ে পরিবেশ দুষণ, রাস্তা নস্ট এবং বিএমডিএর গভীর নলকুপের আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেন সেচনালা নস্ট করা হয়েছে যা দন্ডনীয় অপরাধ।
জাহাঙ্গীরের অবৈধ পুকুর খনন প্রতিহত করা না হলে তার দেখাদেখি অন্যরাও পুকুর খননে উৎসাহী হয়ে উঠবে যা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য মারাত্নক হুমকি বলে মনে করছেন কৃষিবিভাগ।স্থানীয় বাসিন্দা জনৈক রাজ্জাক, রসুল, আলমগীর ও বাবু অভিযোগ করে বলেন, গত ২০২০ সালে পুকুর খনন প্রশাসন বন্ধ করে দেন। গত ২০২১ সালে রাঁতের আঁধারে ট্রাক্টর (কাঁকড়া) গাড়ীতে ব্লেড ব্যবহার করে (বিশেষ যন্ত্র) দিয়ে এসব কৃষি জমি চেঁছে সেখানে কিছু পানি জমা করে রাখে। এবছর সেটাকে পুরাতন পুকুর দেখিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে প্রতারণা করে উপজেলা প্রশাসনের কাছে থেকে পুরাতন পুকুর সংস্কারের অনুমতি নিয়ে কৃষি জমিতে নতুন করে পুকুর খনন ও পরিবহণ পরিবেশ দুষণের পাশাপাশি কাঁচা-পাকা রাস্তা নষ্ট করা হচ্ছে।
তারা বলেন, এই পুকুর খনন করা না হলে প্রতিবছর অসময়ে জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়ে বিপুল পরিমান জমির ফসলহানি হবে। তারা এই অবৈধ পুকুর খনন বন্ধের দাবি করেছেন। তহসীল দার কাওসার সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েই শুরু করেছেন কারিশমা। তার কারিশমাতে কৃষি জমিকে দীর্ঘ কয়েক যুগের পুরাতন পুকুর দেখিয়ে অনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে পুন: সংস্কারের নামে পুকুর খনন করতে উঠে পড়ে লেগেছেন ভূমিগ্রাসীরা। সে চাকুরীর জীবনে প্রথম এসেই কৃষি জমি ধ্বংসে মেতে উঠেছেন।
প্রসাশনের কঠোর নজরদারির কারণে উপজেলায় পুকুর খনন তেমন একটা হয় না। কিন্তু কাওসারের অদৃশ্য যাদুতে পুকুর খননে মেতে উঠেছে কামারগাঁ ইউপির ভূমিগ্রাসীরা। ফলে কৃষি জমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। নচেৎ উপজেলায় আগামীতে খাদ্য ঘাটতিসহ কৃষি শ্রমিকরা মহা বেকায়দায় পড়বেন।
জানা গেছে, উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন শিক্ষক জাহাঙ্গীর গত বছরে তিন ফসলী কৃষি জমিতে কোদাল দিয়ে উপরি ভাগের মাটি কাটেন। প্রায় ১২ বিঘা কৃষি জমিতে পুকুর খননের জন্য মহা কৌশল গ্রহণ করেন। অবশ্য সেই কৌশলে শিক্ষক সুবিধাও পান। কৃষি জমিকে পুরাতন পুকুর দেখিয়ে পুন: সংস্কার করার জন্য আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে কামারগাঁ ইউনিয়ন তহসীল দার কাওসার সরেজমিনে তদন্ত করে সংস্কারের প্রয়োজন বলে প্রতিবেদন দেন।
চলতি বছরের নভেম্বর মাসের ১৬ তারিখে তিনি প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ, ৬৫৭ নং স্বারকে, পুকুর পুন খননের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন, সুত্র নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের ১০/১১/২০২২ ইং তারিখের ১৪৮৩ নং স্বারক অনুসারে। উপযুক্ত বিষয় ও সুত্রের বরাতে জানানো যাচ্ছে যে, অত্র কামারগাঁ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অধীনে ১৭৮ নং হরিপুর মৌজার পূর্বের ৬১৫.৬৩৩.৬১২.৬৩০.৭৩৬.৭৯০ ও ৬০৫ দাগে ৩ একর ৮৩ শতাংশের কাত ৩ একর ৫০ শতাংশ, পুন:খননের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানোর রাজশাহী আদেশে সরেজমিন তদন্ত করি এবং উক্ত পুকুরটি পুন:খনন বা সংস্কার করা প্রয়োজন। পুকুরটি পুন: সংস্কার করলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে না এবং মাছ চাষ করলে পুষ্টি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে মর্মে প্রতিয়মান রয়েছে। ইহা সদয় অবগতি ও পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে মর্মে প্রতিবেদন দেন তহসীল দার।
অথচ জমির তফসীল পরিমান দিলেও শ্রেণী দেওয়া হয়নি। এখানেই মহা প্রতারনা করেন শিক্ষক। এসব বিষয়ে গত ১১ ডিসেম্বর কামারগাঁ ভূমি অফিসে তহসীলদারের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, সরেজমিনে যেটা পেয়েছি সেটাই দিয়েছি, অনুমোদন দিয়েছেন ইউএনও স্যার। কৃষি জমি আপনি কিভাবে পুরাতন পুকুর হিসেবে প্রতিবেদন দিলেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন ৮/১০ বছর আগের পুকুর। আপনি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছেন কিভাবে বুঝলেন এত পুরাতন পুকুর জানতে চাইলে তিনি জানান, পুকুর হিসেবে খাজনা নেওয়া হয়, খাজনার রশিদ দেখতে চাইলে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন আমি চারঘাটে থাকা অবস্থায় এভাবেই পুকুর হয়েছে, এখানেও এভাবে খনন হবে।
হরিপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, শিক্ষক জাহাঙ্গীরের ওই জমি এখনো ধানী জমি হিসেবেই খাজনা দেন। গত বছরে কোদাল দিয়ে মাটি কাটে, কিন্তু সেটিকে পুরাতন পুকুর দেখিয়ে খনন করছেন ও রাস্তা নষ্ট করে মাটি বিক্রি করছেন। তিনি কর্মকর্তাদের সাথে জালিয়াতি ও প্রতারনা করেছেন এবং মাটি বিক্রি করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পংকজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্হা নেয়া হবে।#