আবুল কালাম আজাদ ………………………………………………………….
ইট, কাঠ, পাথরের দেওয়ালের আড়ালে ইতিহাস কালের জীবন্ত সাক্ষী! যেখানে যুগের পর যুগ ধরে ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে যুগের প্রতিধ্বনি হয়ে ইতিহাসের চার দেয়ালের বক্ষে আবদ্ধ।
এ যেনো হারিয়ে যাওয়া স্থানীয় ইতিহাসের একটি সমৃদ্ধ আশ্রম। ইতিহাস যেখানে সংরক্ষিত এই সংগ্রহ শালার নাম হেরিটেজ বাংলাদেশের ইতিহাসের আর্কাইভস। সংক্ষেপে হেরিটেজ আর্কাইভস। এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েটের অদূরে কাজলার জামরুল তলায় অবস্থিত এই হেরিটেজ আর্কাইভস। স্থানীয় ইতিহাসের উপর পিএইচডি করতে গিয়ে তথ্য সংকটে বেশ সমস্যায় পরেন প্রফেসর মাহবুব। পিএইচডি শেষে নেদারল্যান্ডসে গিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সোস্যাল হিস্টোরি আর্কাইভ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেই একটি আর্কাইভস তৈরি করার চিন্তা করেন তিনি।
এরপর ২০০২ সালে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার নিজ বাসভবনে এই আর্কাইভসটি গড়ে তোলেন প্রফেসর ড. মাহবুব। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে তার নিজের কেনা সাড়ে চারকাঠা জমিতে পাঁচতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে একতলা ভবন নির্মাণের পর সেটি ভরে গেলে দোতলা ভবন নির্মাণ করেন তিনি।
পরে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এই হেরিটেজ আর্কাইভস প্রদর্শনে এসে খুশি হয়ে তিনি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রীকে বলে বাকি তিন তলা ভবন নির্মাণের অর্থ প্রদান করেছিলেন।
হেরিটেজ আর্কাইভস আসলে কি?
ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন সরকারি ও বেসরকারি নথিপত্র, দলিলাদি, পুরনো বিরল পুস্তকাদি, পুথি, পান্ডুলিপি, স্থানীয় ইতিহাসের নানা উপকরণ যা প্রায় বিলুপ্ত বা বিলুপ্তির পথে সেগুলোর সংগ্রহশালায় হলো হেরিটেজ আর্কাইভস।
হেরিটেজ আর্কাইভসের সংগ্রহ সম্পর্কে বর্ণনা করেছিলেন, প্রফেসর ড. মাহবুব–ব্যক্তি উদ্যোগে হেরিটেজ আর্কাইভ তৈরি করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান।
সংগ্রহঃ
আর্কাইভস হেরিটেজে সংরক্ষিত রয়েছে পাঁচ হাজার দুইশ পোস্টার, পাঁচ হাজারেরও বেশি লিফলেট, লিটল ম্যাগাজিন সামরিক পত্রিকার শিরোনাম প্রায় ৩২শ, এম ফিল পিএইচডি থিসিস রয়েছে ৫০০ এর মতো যার মধ্যে অনেকগুলো প্রায় ভারতীয় স্কলারদের, মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের বিরল ডকুমেন্টস, পাঁচ হাজার দুইশ জীবনী বই যার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর জীবনী বই প্রায় ছয়শোরও বেশি, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী বই প্রায় চারশ, কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী বই প্রায় আড়াইশ।
গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহের মধ্যে বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলার স্থানীয় ইতিহাস সম্পর্কিত বই এখানে রয়েছে। এখানে আরও রয়েছে ১৮৬৫ সালে প্রকাশিত ও বর্তমানে বিলুপ্ত পণিকা হিন্দু রঞ্জিকার কপির অনুলিপি, দেশের নারী জাগরণের বেগম পত্রিকার কপি, মনোরমা, বিচিত্রা সহ আরও অনেক বিলুপ্ত ম্যাগাজিনের কপি।
বর্তমানে চলচিত্র ও সংরক্ষণ করা হয়েছে এখানে। আগেরদিনের বিয়ের কার্ড সহ নানা অনুষ্ঠানের কার্ডের বহু সংগ্রহ রয়েছে এই হেরিটেজ আর্কাইভসে।
এখানকার আরও একটি গুরত্বপূর্ণ শাখা হলো ফ্যামিলি আর্কাইভস। একটি পরিবারের যেসকল ব্যবহার্য জিনিসগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে যেমন হারিকেন, খরম, পয়তা, টাইপ রাইটার মেশিন, টেলিফোন সেট সেগুলো এখানে সংরক্ষিত রয়েছে।
আরও রয়েছে একটি সেমিনার কক্ষ ও গবেষণা করতে আসা মানুষদের জন্য শয়নকক্ষ। এছাড়াও রাণী হেমন্তকুমারীর তৈরি ঢপকলেরও একটি সংগ্রহ রয়েছে এখানে।
হেরিটেজ আর্কাইভস একটি দেশের অমূল্য সম্পদ। তা সত্ত্বেও আমাদের দেশের প্রায় বেশিরভাগ মানুষ সেটি সম্পর্কে অবগত নন। এই হেরিটেজ আর্কাইভস পরিদর্শনে নতুন প্রজন্ম সহ সব বয়সের মানুষ বাংলাদেশের স্থানীয় অনেক ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হবে।#