আবুল কালাম আজাদ…………………………………………..
৯ অক্টোবর পালিত হয়ে গেলো হিন্দুসম্প্রদয়ের কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। গৃহস্থ ঘরে ঘরে পূজিতা হলেন , সম্পদ সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মীর।
মা লক্ষ্মীর বাহন হল পেঁচা। কী ভাবে দিনে ঘুমনো আর রাতে জেগে থাকা নিশাচর পাখিটি মা লক্ষ্মীর বাহন হিসেবে নিযুক্তের হল?এ প্রশ্ন স্বয়ং পূজা অর্চন কারিদের।
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করলে গৃহস্থ ঘরে যেন সুখ সম্পদ উপচে পড়ে। লক্ষ্মীপুজো বলতেই লক্ষ্মী প্রতিমার সঙ্গে আর যার ছবি আমাদের চোখে ভেসে ওঠে তা হল মা লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা।
সাদা পেঁচাকেই নিজের বাহন হিসেবে বেছে নিন লক্ষ্মী, তাই একে লক্ষ্মী পেঁচাও বলা হয়ে থাকে। হিন্দু ধর্মে প্রায় সব দেবদেবীরই নিজস্ব বাহন রয়েছে। যেমন দেবী দুর্গার বাহন সিংহ, সরস্বতীর বাহন রাজহাঁস, কার্তিকের বাহন ময়ূর, গণেশের বাহন ইঁদুর, তেমনই লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা। কিন্তু কেন পেঁচাকেই নিজের বাহন নির্বাচন করলেন মা লক্ষ্মী?
পৌরাণিক কাহিনি সূত্রমতে,নিশাচর এই পাখি দিনে ঘুমোয় আর রাতে জাগে। তাই এই প্রাণী অশুভ, অজ্ঞানতা ও অন্ধকারের প্রতীক বলে মনে করেন অনেকে। পেঁচাকে শনিগ্রহের প্রতীক বলেও মনে করা হয়। পেঁচার ডাকও অশুভ বলে অনেকের ধারণা।এছাড়া পেঁচার ডাক নাকি মৃত্যুর বার্তা বয়ে আনে। অথচ লিঙ্গপুরাণে বর্ণিত আছে যে নারদ মুণি একবার বলেছিলেন যে মানস সরোবরের কাছে যে পেঁচাদের বাস, তাদের থেকে সঙ্গীত শিক্ষা করা উচিত। অর্থাত্ এই কথা বলাই যায় যে পৌরাণিক যুগে পেঁচাকে অশুভ বলে মনে করা হত না।
হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে পেঁচা অশুভ নয়, অজ্ঞানতার প্রতীকও নয়। শাস্ত্রকাররা জানিয়েছেন যে পেঁচা অন্ধকারেও দেখতে পায়, তাই সে দিব্যচক্ষুর অধিকারী, নিবিড় অন্ধকারেও আলোর পথ খুঁজে নিতে সক্ষম হল পেঁচা। পেঁচা কী ভাবে মা লক্ষ্মীর বাহন হয়ে উঠল, সে সম্পর্কে একটি লোককথা পাওয়া যায়।
বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হওয়ার পর দেবতারা মর্ত্যে এসেছিলেন জীবকূল দর্শন করতে। তখন পায়ে হেঁটে তাঁদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করতে হচ্ছিল। তা দেখেই বিভিন্ন পশু পাখিরা দেবদেবীদের এসে জানায় যে তারা দেবতাদের বাহন হতে চায়। এভাবেই বিভিন্ন দেবদেবী বাহন হিসেবে এক একটি পশু বা পাখিকে লাভ করে। দেবী লক্ষ্মীর বাহন নির্বাচনের সময় প্রাণীকূলের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। সম্পদ ও সমৃদ্ধির দেবী লক্ষ্মীর বাহন হতে সবাই চায়।
তখন লক্ষ্মী বলেন যে তিনি প্রতি কার্তিক অমাবস্যায় মর্ত্যে আসবেন। আগামী কার্তিক অমাবস্যায় যে সবার আগে তাঁর কাছে যাবে, তাকেই তিনি নিজের বাহন নির্বাচন করবেন। পরের কার্তিক অমাবস্যার রাতে মর্ত্যের অন্যান্য প্রাণীরা ঘুমিয়ে পড়লেও জেগে পেঁচা ও আরও কয়েকটি নিশাচর প্রাণী। রাতের অন্ধকারে পেঁচার দৃষ্টিশক্তি হয়ে ওঠে অত্যন্ত তীব্র। ফলে বহুদূর থেকে লক্ষ্মীকে দেখতে পেয়ে সবার আগে তাঁর পায়ের কাছে পৌঁছে যায় পেঁচা। সেই থেকে মা লক্ষ্মীর বাহন হিসেবে নিযুক্ত হয় এই নিশাচর পাখিটি।#