# বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি………………………….
রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোরে গরুর ল্যাম্পি স্কীন রোগ দেখা দিয়েছে । এ রোগে এ পর্যন্ত কোন গরুর মৃত্যুর খবর জানা না গেলেও দুই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শতশত গরু আক্রান্ত হয়েছে। প্রায় প্রতিটি গিরোস্তের দুই/একটি করে গরু এ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ রোগে গরু আক্রান্ত হওয়ায় ও চিকিৎসা খুবই ব্যয় বহুল হওয়ার কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন গরুর গিরোস্তরা। তারা জানান, গরু এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে গায়ে গোল গোল ফোস্কার মত ফুলে যায়। পরে মুখে ঘা হয় এবং পা ফুলে গিয়ে গরু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং গরু মারা যায়। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলাতে গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ।
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী ও উপজেলায় ব্যপক হারে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এটি গরুর একটা ভাইরাস জনিত চর্মরোগ, যা গিরোস্ত ও খামারির ক্ষতির কারন। এই ভাইরাস জনিত রোগটি আফ্রিকার জাম্বিয়ায় প্রথম দেখা যায়, ১৯২৯ সালে। আফ্রিকাতে এই রোগে গরুর মৃত্য হার ৪০%। আফ্রিকাতে একাধিকবার মহামারি দেখা দিলেও আমাদের দেশে এই রোগের বিস্তার এখনো মহামারি আকারে দেখা যায় নাই। অর্থনৈতিকভাবে একটি খামারকে ধসিয়ে দেওয়ার জন্য খুরা রোগের থেকে বেশি ভয়ংকর হিসাবে ধরা হয়ে থাকে এই রোগকে। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে আফ্রিকায় অফিসিয়ালভাবে প্রথম রোগটিকে সনাক্ত করা হয়। এ রোগে আকান্ত হয়ে আফ্রিকায় হাজার হাজার গরু মারা যায় এবং শতশত খামার বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তি সময়ে ঠিক একইভাবে ৭০ দশক এবং ৮০ দশকে আফ্রিকার প্রায় সব দেশেই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার খামার আবারও বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত এক প্রকার পক্স ভাইরাস সংক্রমনের মাধ্যমে গবাদি পশুতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এক গরু থেকে অন্য গরুতে সংক্রমনীত হয়ে থাকে।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত গরু থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে রোগটি ছড়িয়ে থাকে। এ রোগটি এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান মাধ্যম গুলো হচ্ছে- মশা ও মাছি। এই রোগটি মশা ও মাছি প্রধান বাহক হিসাবে কাজ করে থাকে। অন্যান্য কীটপতঙ্গের মাধমেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। লালা– আক্রান্ত গরুর লালা, খাবারের মাধ্যমে অন্য গরুতে অথবা খামারে কাজ করা মানুষের কাপড়ের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। দুধ আক্রান্ত গাভীর দুধে ভাইরাস থাকে, তাই আক্রান্ত গাভীর দুধ খেয়ে বাছুর আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত ষাঁড়ের সিমেন থেকেও অন্য গরুতে আক্রান্ত হতে পারে।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় গোদাগাড়ী উপজেলার ৬ নং মাটিকাটা ইউনিয়নের বোগদামারী এলাকার গিরোস্ত লালুর সাথে। সে বলেন, আমার গরুর এ রোগ হয়েছে। গরুর গা গোল গোল ফোস্কার মত হয়ে ফুলে গেছে। গরুর চিকিৎসা করাতে ইনজেকশন, ঔষধ ও ডাক্তারের ফিসহ এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়ে গেছে। গরু কিছুটা সুস্থ্য হয়েছে । গরুটি সম্পূর্ন সুস্থ্য করতে আরো ঔষধ লাগবে।
তানোরের সাংবাদিক মমিনুল ইসলাম মুন বলেন আমার দুইটা গাভী এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এখন পযর্ন্ত ২টা গরু চিকিৎসা করতে আট হাজার টাকা খরচ হয়েছে তবুও এখনো সুস্থ হয়নি। গরুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ঘা হয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এব্যাপারে তানোর উপজেলা পশু অফিস থেকে এখন পযর্ন্ত কোন সহযোগিতা পাওয়া যায় নি। চর খাসমহল এলাকার গিরোস্ত ইরাক বলেন, আমার গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগের চিকিৎসা খুবই ব্যয় বহুল। ইনজেকশন, ঔষধ ও ডাক্তারের ফিসহ গরু প্রতিপ্রায় ৪ হাজার টাকা ব্যয় হলেও এখনও গরু সুস্থ হয়নি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: সুব্রত কুমার সরকার এ প্রতিবেদক কে জানান, গোদাগাড়ীতে এ রোগের দেখা দিয়েছে। এ উপজেলায় গরু এ রোগে আক্রান্ত হলেও গরু মৃত্যুর কোন খবর পাওয়া যায়নি। আক্রান্ত গরুকে এলএসডি ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ সারিয়ে তোলা যায়। খামারে বা গিরোস্তের কোন গরু এ রোগে আক্রান্ত হলে তাকে আলাদা করে সরিয়ে মশারির মধ্যে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। তাহলে অন্য গরু আক্রান্তের হাত থেকে রক্ষা পাবে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই। আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি। আক্রান্ত গরুর চিকিৎসার জন্য দ্রুত উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।#