খুলনা প্রতিনিধিঃ খুলনা আর্ট একাডেমির ঐতিহ্য সংরক্ষণশালায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ মানিক হোসেন একটি অনন্য উপহার তুলে দেন চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের হাতে। আশির দশকের এক মূল্যবান নিদর্শন—কারেন্টের সুইচ বোর্ড ও সকেট তিনি সংরক্ষণশালায় প্রদান করেন। খুলনা আর্ট একাডেমির সামনেই তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।সেই সূত্রে মোঃ মানিক হোসেনের সঙ্গে চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের পরিচয় ঘটে।
মোঃ মানিক হোসেন একজন শিল্পমনা মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি এবং তার সহধর্মিণী তার ছোট ছেলেকে নিয়ে খুলনা আর্ট একাডেমির ঐতিহ্য সংরক্ষণ শালা মাঝে মধ্যে দেখতে আসেন। তার জন্ম ১৯৮১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, পিতা মোঃ ফারহাদ হোসেন ও মাতা মৃত তকলিমা বেগম। তিনি তিন সন্তানের জনক। পাবনার দমদমা গ্রামের সন্তান হলেও ২০০৭ সাল থেকে খুলনায় ব্যবসা করছেন। বর্তমানে তার ঠিকানা খুলনা শহরের ৩৯ ওহাব এভিনিউ, ইকবাল নগর। ২০২৩ সাল থেকে খুলনা আর্ট একাডেমির কার্যক্রমে অভিভূত হয়ে চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস ঐতিহ্য সংরক্ষণশালার জন্য এই উদ্যোগ নেন। একসময় বিদ্যুৎ ব্যবহারে সুইচ বোর্ড ও সকেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে প্লাস্টিকের আবির্ভাবের ফলে এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।
চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস অনলাইনে একসময় সংরক্ষণশালার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর তালিকা প্রকাশ করেছিলেন। সেই সূত্রে মানিক হোসেন ঐতিহাসিক এই উপহার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ২৭ সেপ্টেম্বর একাডেমির অফিস কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রদান করেন। এই উপহার পেয়ে চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস গভীর আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, “এভাবে সবাই যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তবে সংরক্ষণশালা একদিন সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের ভাণ্ডারে পরিণত হবে।
”খুলনা আর্ট একাডেমি ২০০৩ সাল থেকে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের হাতে পরিচালিত হচ্ছে। শুধু চারুকলা শিক্ষা নয়, এখানে সংগীত, আবৃত্তি, হাতের লেখা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি সহায়ক প্রশিক্ষণসহ শিশুদের মানুষ গড়ার শিক্ষা দেওয়া হয়। পাশাপাশি সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে সমাজের মানবিকতা ও অসঙ্গতিগুলোও তুলে ধরা হচ্ছে। সম্প্রতি একাডেমিতে গড়ে উঠেছে একটি জাদুঘর, যেখানে সংরক্ষিত হচ্ছে দেশের হারিয়ে যাওয়া নানান ঐতিহ্য। এর মধ্যে রয়েছে কৃষকের ব্যবহৃত টুপরি, ঘরামি কাজে ব্যবহৃত কাঠ ছিদ্র করার কূণ, গ্রামীণ প্রদীপ রাখার দেউরীসহ প্রায় ১৫০ প্রাচীন সামগ্রী।
মিলন বিশ্বাস জানান, “আমরা শৈশবে যা দেখেছি, তা আজ অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে। তাই আমি চেষ্টা করি ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে লালন করে শিল্পচর্চা চালিয়ে যেতে।”অন্যদিকে মোঃ মানিক হোসেন বলেন, “আমাদের নবীন প্রজন্ম এ ধরনের জিনিস দেখে আনন্দ উপভোগ করবে এবং শিখবে।”খুলনার সাংস্কৃতিক মহলে এই অনন্য উদ্যোগ ইতোমধ্যেই ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।#