মো: মমিনুল ইসলাম মুন, বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চলতি বছরের ২ জুন সোমবার উপজেলার শিক্ষক-কর্মচারীদের পক্ষে আব্দুল মালেক বাদি হয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এদিকে লিখিত অভিযোগের অনুলিপি দেয়া হয়েছে সচিব শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, রাজশাহী অঞ্চল, উপ-পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় বরাবর।
অন্যদিকে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের খবর ছড়িয়ে পড়লে অফিস পাড়ায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড়,বইছে মুখরোচক নানা গুঞ্জন।
আব্দুল মালেকের করা লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে,পতিত ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান।তিনি নীতিমালা লঙ্ঘন করে তানোর উপজেলায় প্রায় চার বছর যাবৎ স্বপদে-দাপটের সঙ্গে কর্মরত আছেন। রাজশাহী-১ আসনের (তানোর-গোদাগাড়ী) সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ক্ষমতার অপব্যবহার করে তানোর উপজেলার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেন।
তিনি ব্যক্তিগতভাবে সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণ করেন। এমন কি নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি অংশের বেতন-ভাতাদি পাওয়ার জন্য অন-লাইনে সেন্ড করার সময় অসহায় গরীব শিক্ষক-কর্মচারীদের ভয়-ভীতি ও হুমকি-ধামকি দিয়ে প্রচুর টাকা উৎকোচ হিসেবে গ্রহণ করেন। ইতিপূর্বে একাধিকবার তাঁর বিরুদ্ধে পেপার-পত্রিকায় লেখা-লেখি হওয়ার পরও অদৃশ্য কারণে তার অপসারণের ব্যবস্থা উর্ধতন কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেনি।
যা গত ০৫/০৮/২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে যে সকল শহীদ আত্মহুতী ও জীবন বিসর্জন দিয়েছেন সেই সকল ১৫৮১ জন শহীদ প্রায় ১৮,০০০ হাজার এর বেশী হতা-হত বা পঙ্গুত্ব বরণ করেন তার মধ্যে ৫৫০ জনের চক্ষু নষ্ট হওয়া ছাত্র-জনতার রক্তের সঙ্গে চরম অবমাননা ও অসম্মান করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় বর্তমান বিপ্লবী সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে আসছেন আলোচিত ও বিতর্কিত এই শিক্ষা কর্মকর্তা। অভিযোগে আরো বলা হয় পতিত ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরতান্ত্রিক আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমানকে অপসারণ করে উপজেলার নির্যাতিত শিক্ষক-কর্মচারীগণকে সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে নিরাপদভাবে গরীব-দুঃখী শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার পথ সুগম করা হোক।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তা ঘুষ-বাণিজ্য করে আখের গোছাতে ব্যস্ত রয়েছে। তাকে সহযোগিতা করছেন ওই অফিসের এক কর্মচারী।
তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে তাকে নিয়মিত অফিসে পাওয়া যায় না। অধিকাংশ সময় প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারীদের বিভিন্ন কাজে অফিসে গিয়ে ফেরত আসতে হয়।এতে একদিকে যেমন সময়ের অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে অর্থও গচ্চা দিতে হচ্ছে। পরিদর্শনে গেলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাছে আপ্যায়নের নামে ঘুষ দাবি করেন শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনি উপজেলায় অবস্থান না করে রাজশাহী শহর থেকে অফিস করছেন। এতে তিনি ১২টার আগে কোনো দিন অফিসে আসতে পারেন না। এসেই পরিকল্পনা মোতাবেক কর্মচারিকে নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনের নামে ঘুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফিকির করেন। তিনি বলেন, তার অপসারণ সময়ের দাবি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে অসত্য ও বানোয়াট অভিযোগ করা হয়েছে।#