মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে আলু বীজের কৃত্রিম সংকটে দিশেহারা কৃষক। কৃষকেরা জানান, ৮০ টাকা কেজি দরের উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু বীজ ১০০ টাকা কেজিতেও মিলছে না। আলুর ভরা মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ প্রয়োজনীয় আলু বীজ সংগ্রহ করতে না পারায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকরা। এমন উদ্ভূত আলু বীজ সংকট পরিস্থিতির কারণে চলতি মৌসুমে উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, জেলার তানোর উপজেলায় বেশী আলু চাষাবাদ হয়। কিন্তু তানোরে ব্র্যাকের মাত্র একজন আলু বীজ ডিলার রয়েছে। অন্যদিকে জেলার মোহনপুর উপজেলায় সব চাইতে কম আলু চাষাবাদ হয়। অথচ মোহনপুরে ব্র্যাকের ৪ জন বীজ ডিলার রয়েছে। স্থানীয় আলু চাষি কৃষকদের অভিযোগ ব্র্যাকের আলু বীজের চাহিদা বেশী। কিন্তু ডিলারগণ আলু বীজ বিক্রয় কেন্দ্রে না এনে বাসা-বাড়িতে মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে, ৮০ টাকা কেজির আলু বীজ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করছে। কিন্তু কোনো রশিদ দিচ্ছেন না, দিলেও তাতে সরকার নির্ধারিত দাম লিখছেন।আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে বড় বড় আলুচাষিদের বাড়িতে সরাসরি বীজ পাঠানো হচ্ছে। ডিলার ও ব্যবসায়ীদের বাড়ি ও গুদামে অভিযান দিলে বীজের মজুদ পাওয়া যাবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,গত ১৬ নভেম্বর শনিবার দুপুরে চকপাড়া খাইরুল মাস্টারের বাড়িতে দুই ট্রাক ব্যাকের বীজ আলু নামানো হয়। এক সঙ্গে এতো বীজ কোথায় থেকে আসছে জানতে চাইলে শ্রমিকরা জানান, ব্র্যাকের বীজ ডিলার শাহীন মাস্টারের কাছে তারা এসব বীজ কিনেছেন। তবে ক্রয় রশিদ দেখতে চাইলে তারা দেখাতে পারেনি। অথচ শাহীন মাস্টারের দোকানে গিয়ে কৃষকরা আলু বীজ পাচ্ছে না-? ফলে প্রশ্ন উঠেছে শাহীন মাস্টারের নামে বরাদ্দকৃত ব্র্যাকের বিপুল পরিমাণ আলু বীজ গেলো কোথায়-? তার বিক্রয় রশিদ পর্যালোচনা করা হলে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান,গত ১৫ নভেম্বর শুক্রবার রাতে কালীগঞ্জ হাটের ব্যবসায়ী লালু ১২০ বস্তা ব্র্যাকের আলু বীজ চড়া দামে কালোবাজারে বিক্রির সময় স্থানীয়রা জব্দ করে রনি নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে জমা রেখে প্রশাসনকে অবগত করেন। তবে লালুর দাবি সে উচ্চ মুল্যে এসব বীজ মৌগাছির ব্র্যাকের আলু বীজ ডিলার কারীর কাছে থেকে কিনেছেন নিজের জমিতে রোপণ করার জন্য।
জানতে চাইলে ডিলার কারী বলেন, তিনি বেশী দামে কোনো বীজ বিক্রি করেননি। কিন্তু রাব্বানী, রবিউল, ভবেশ ও আলম নামের কয়েকজন কৃষক জানান, কালীগঞ্জ হাটে দোকান ভাড়া নিয়ে মৌগাছির ডিলার কারী কালোবাজারে বেশী দামে বীজ বিক্রি করছে।গত বছর ব্র্যাকের বীজ রিপ্যাক করে কৃষকদের ঠকিয়ে ছিল বলে জানান কৃষকেরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক জানান, কালীগঞ্জ হাটের মেসার্স সুমাইয়া টেড্রার্স বাটুলের ভাড়া ঘরে (গুদাম) বিপুল পরিমাণ ব্র্যাকের আলু বীজ মজুদ করে বেশী দামে কালোবাজারে বিক্রি করছে। এছাড়াও সরনজাই বাজারের মাওলানা সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে বিপুল পরিমাণ আলু বীজ মজুদ রয়েছে। এমনকি গোকুল গ্রামে শাহীন মাস্টারের বাড়িতে বিপুল পরিমাণ আলু বীজ মজুদ রয়েছে।শাহীন মাস্টার দুই দিন যাবত দোকান বন্ধ রেখে কালোবাজারে বেশী দামে বীজ বিক্রি করছে।
এদিকে কৃষি বিভাগের দাবি, সংকট নয় একশ্রেণির মুনাফালোভী অসাধু বীজ ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই আলু বীজের দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ তুলছেন কৃষকরা। কিন্তু ভুক্তভোগী কৃষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, এ বছর সরকারি-বেসরকারি প্রতি কেজি ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রেডের উচ্চ ফলনশীল আলু বীজ প্রকারভেদে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে ওই দামে কাঙ্খিত বীজ মিলছে না। আলু বীজ আর স্টকে নেই বলে ‘বুকিং বন্ধ’ সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ডিলাররা। অথচ অভিযোগ আছে, ১০০ থেকে ১১০’ টাকা কেজিতে ওই বীজই মিলছে স্থানীয় খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে। আবার ব্যাপক চাহিদা থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা গোপনে ট্রাকে করে গ্রামে গ্রামে নিয়ে গিয়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে আলু বীজ বিক্রি করছেন এমন অভিযোগ অহরহ। এতে প্রশ্ন উঠেছে ডিলারেরা যদি বীজ না পাই,তাহলে খুচরা ব্যবসায়ীরা বীজ পাচ্ছেন কোথায় ?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্যর অভিযোগ, ডিলারদের কারসাজির কারণেই কৃষকরা বেশি দামে আলু বীজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। ডিলাররা স্পাই লাগিয়ে দাম চুক্তি করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে আলু বীজ সরবরাহ করেন। আর সেই বীজ তারা প্রতি বস্তায় ৬শ’থেকে ৮শ’ টাকা লাভ নিয়ে বাজারে ছাড়ে এভাবেই বীজের দাম বেড়ে যায়।
তিনি বলেন,যদি বীজের সংকট থাকে তাহলে তো খুচরা দোকানে বীজ থাকার কথা নয়। এবিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাকের বীজ ডিলার শাহীন মাস্টার বীজ মজুদ বা বেশী দামে বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।#