আবুল কালাম আজাদ……………..
বারবার নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য দিয়ে বিভিন্ন সময় মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছেন রাজশাহীর তানোর – গোদাগাড়ী -১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। সম্প্রতি নিজ চেম্বারে ডেকে নিয়ে কলেজ অধ্যক্ষকে পিটিয়ে আলোচনার শীর্ষে আসেন তিনি।
এখানেই শেষ নয়,রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে একজন শীর্ষ মাদক কারবারির একটি দামি গাড়ি ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগও পাওয়া গেছে। এই গাড়ির মালিক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ তালিকায় থাকা মাদক ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম টিপু। তার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার মাদারপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মজিবুর রহমান। এমপির ঘনিষ্ঠদের মতে, মাদক ব্যবসায়ী টিপু লেটেস্ট মডেলের কালো রঙের অত্যাধুনিক মাইক্রোবাসটি এমপি ফারুক চৌধুরীকে উপহার দিয়েছেন। এই গাড়িটিতে চড়ে এমপি ফারুক তার নির্বাচনী এলাকা গোদাগাড়ী ও তানোর ঘুরে বেড়ান ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেন। প্রয়োজনে রাজশাহী-ঢাকায় যাতায়াত করেন এই গাড়ি নিয়ে।
এদিকে গাড়িটির সামনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সদস্যের একটি স্টিকার লাগানো আছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা সাঁটা রয়েছে গাড়ির সামনে কাঁচের ভেতরে ছোট করে। এমপি ফারুক চৌধুরী সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই গাড়িটিতে চড়ে গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে যান বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। যখন তিনি নির্বাচনী এলাকা ফেরেন তখন গাড়িটি এমপি ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন রাজশাহী শহরের নিউমার্কেট এলাকার ওমর থিম প্লাজার পার্কিংয়ে রাখেন। মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত সেখানেই গাড়িটিকে পার্ক করে রাখতে দেখা গেছে। এই ওমর থিম প্লাজার ১০ তলায় বসবাস করেন এমপি ফারুক। গাড়িটি ফারুক চৌধুরী কখনো নিজেই চালান, আবার কখনো তার ড্রাইভারও চালান।
এদিকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয় থেকে সংগৃহীত সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই ঢাকার শশী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি শোরুম থেকে গাড়িটি কেনেন মাদক ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম টিপু। সানবীম নামের একটি প্রতিষ্ঠান গাড়িটির বিক্রয় এজেন্ট ছিলেন। গাড়ির ধরন প্রাইভেট প্যাসেঞ্জার মাইক্রোবাস। আসন সংখ্যা ১২। ২০১৯ সালে হওয়া গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর-ঢাকা মেট্রো-চ-১৯-০৯৭৫। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গাড়িটির ফিটনেস বৈধতা রয়েছে। ২০২১ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত গাড়িটির ট্যাক্স টোকেন পরিশোধ করা হয়েছে। গাড়িটি কেনার পর থেকে পরবর্তী সময়ে সব ট্যাক্স টোকেন ও সরকার নির্ধারিত ফি বাবদ ১১ লাখ টাকার বেশি অর্থ পরিশোধ করেছেন আব্দুর রহিম টিপুই।
গাড়িটি মিরপুর বিআরটিএ থেকে রেজিস্ট্রেশন করা। বছর বছর নবায়নও করা হয়েছে সেখান থেকে। বিআরটিএর তথ্যে আরও জানা গেছে, পূবালী ব্যাংক, রাজশাহী শাখা থেকে ঋণ নিয়ে গাড়িটি কেনেন আব্দুর রহিম টিপু। টিপু পূবালী ব্যাংকের একজন গ্রাহকও। এই গাড়িটি কেনার জন্য পূবালী ব্যাংক থেকে তিনি ১৬ লাখ টাকা ঋণ নেন। পূবালী ব্যাংক রাজশাহী শাখার ম্যানেজার খোজদার হোসেন মঙ্গলবার দুপুরে জানান, ২০২১ সালের অক্টোবরে আব্দুর রহিম টিপু গাড়িটির জন্য নেওয়া সব ঋণ পরিশোধ করেন। এর ফলে এখন গাড়িটির একক মালিকানা রহিম টিপুর।
ম্যানেজার আরও জানান, কেনার সময় গাড়িটির মালিকানা যৌথভাবে পূবালী ব্যাংক ও আব্দুর রহিম টিপুর ছিল। গাড়িটি এখন কে ব্যবহার করেন তা তারা জানেন না। এই গাড়ির সঙ্গে এখন ব্যাংকের কোনো দায়-দায়িত্বও নেই। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে আরও জানা গেছে, মাদক কারবারি আব্দুর রহিম টিপু কেনার পর গাড়িটি এক বছরের কিছু বেশি সময় নিজেই ব্যবহার করেছেন। টিপু নিজেই একসময় গাড়িটি নিয়ে এমপি ফারুক চৌধুরীর পেছনে পেছনে ঘুরতেন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। তখন নতুন চকচকে নতুন একটি গাড়ি দেখে এলাকার মানুষের মাঝে কৌতূহল হয়।
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে টিপু গাড়িটি এমপি ফারুক চৌধুরীকে নির্বাচনী গণসংযোগের জন্য দেন। এই গাড়িতে চড়েই এমপি ফারুক তার নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়িয়েছেন। সেই থেকে গাড়িটি তার কাছেই রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার হলে টিপু প্রথমে গা ঢাকা দেন। কিছুদিন পর তিনি গোদাগাড়ীর মাদারপুর ছেড়ে নিজের পরিবার নিয়ে রাজশাহী শহরে চলে যান। বেশ কিছুদিন ভারতে অবস্থান করেন। দেশে ফিরলেও সেই থেকে টিপু আন্ডারগাউন্ডে থাকেন। তাকে জনসম্মুখে খুব কমই দেখা যায় বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র। তার ফোন নম্বরও কাউকে দেন না। তবে আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকেই টিপু তার মাদকের কারবার সচল রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাতে টিপুর ব্যবসা বাণিজ্য, মার্কেট ও বাড়িসহ গড়ে তোলা বিপুল সম্পত্তি তার তিন ভাই দেখাশোনা করেন। টিপুর বড়ভাই মনিরুল হক মনি এখন পৌরসভার কাউন্সিলর। তবে ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল চারঘাট থানা পুলিশ পৌনে ৪ কেজি হেরোইন ও একটি মাইক্রোবাসসহ টিপুর ভাই মনিকে গ্রেফতার করেছিলেন। ওই মামলাটি এখনো আদালতে চলমান রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারি টিপু সম্পর্কে বিবরণে লেখা হয়েছে- টিপু আওয়ামী লীগের সমর্থক। তার কাছে একাধিক দামি গাড়ি রয়েছে। বিপুল অর্থের মালিক। হেরোইনের বড় কারবারি। মহিষালবাড়ি বাজারে ইলেকট্রনিক্স ও মোবাইল ফোনের একাধিক দোকান রয়েছে। রয়েছে মার্কেট ও জমিজমাও।
এদিকে এমপি ফারুক চৌধুরীকে গাড়িটি উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে নাকি তার কাছে বিক্রি করা হয়েছে জানতে আব্দুর রহিম টিপু সঙ্গে যোগাযোগের কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি। তার কোনো মোবাইল ফোন নম্বরও পাওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিপুর বড়ভাই মনিরুল হক মনি মঙ্গলবার দুপুরে জানান, গাড়িটির মালিক তার ভাই ছিলেন। তবে সম্প্রতি মালিকানা এমপি ফারুক চৌধুরীর নামে হস্তান্তর করা হয়েছে। কত টাকায় গাড়িটি বিক্রি করেছেন, নাকি উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে মনি এই প্রতিবেদকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তার সদম্ভ উত্তর ছিল আপনি কে? কেন আপনাকে বলতে হবে। অন্যদিকে টিপুর ভাই মনিরুল হক মনি আলোচিত গাড়িটি এমপির নামে মালিকানা হস্তান্তরে দাবি করলেও গত ১৪ জুলাই বিআরটিএ থেকে পাওয়া সর্বশেষ রেকর্ড তথ্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে গাড়ির মালিক আব্দুর রহিম টিপু ও পূবালী ব্যাংক রাজশাহী শাখা। টিপু গাড়িটির করদাতা। সরকারি বিভিন্ন ফি তিনি পরিশোধ করেছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক মাদক কারবারির গাড়ি ব্যবহার প্রসঙ্গে জানতে মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একাধিকবার এমপি ফারুক চৌধুরীর মোবাইল নম্বরে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। এরই মধ্যে ধরে কথা বলার জন্য এসএমএস দেওয়া হয়। বিভিন্ন উপায়ে কথা বলার চেষ্টা কর