# শহিদুল্লাহ্ আল আজাদ. খুলনা………………………………………………….
খুলনা বিভাগের প্রধান রেল নেটওয়ার্কের সাথে মোংলা বন্দরের সংযুক্তির দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন আগামী অক্টোবরে খুলনা-মোংলা রেললাইনে চলবে রেল। আর এর ফলে দক্ষিনাঞ্চলের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে বলছে ব্যবসায়ীরা।
মোংলা বন্দরকে দেশের রেল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করতে ২০১০ সালে উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। এরপর সম্ভাব্যতা যাচাই, সমীক্ষা আর কার্যদেশ দিতে কাটে আরও ৬ বছর। এরপর ২০১৬ সালে শুরু হয় প্রকল্পের দৃশ্যায়ন কাজ। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ৩ বছর বাদে ২০১৯ সালে। কিন্তু নানা প্রতিকুলতার কারণে ৫ দফা সময় আর প্রকল্প ব্যয় ৪৫৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে রেল লাইনের কাজ শেষ হচ্ছে এবছর।
প্রকল্পের শুরুতে জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন ও রেলসেতু নির্মাণসহ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিলো তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তবে নানা প্রতিকূলতায় রেললাইন ও রূপসা নদীতে রেলসেতু নির্মাণে দেখা দেয় ধীরগতি। যারফলে পাঁচ দফায় বৃদ্ধি পায় সময়, সেইসাথে বৃদ্ধি পায় প্রকল্পের বাজেটও। সর্বশেষ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেও প্রকল্পের কাজের ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে ৭৫ কিলোমিটারের কাজ শেষ হয়। বাকি ১৫ কিলোমিটার রেলপথের কাজের জন্য চলতি বছরের ২০২৩ সাল জুন পর্যন্ত আরও ছয় মাস প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। আর সব মিলিয়ে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় চার হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকায়।
এরপর আরেক দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও প্রকল্পের কাজে আর কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত শেষ হয়েছে প্রকল্পের ৯৮ ভাগ কাজ। শেষ হয়েছে রূপসা নদীর ওপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেল সেতুর কাজও। মোংলা থেকে খুলনার ফুলতলা পর্যন্ত ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার দূরত্বে বেশিরভাগ অংশে ডাবল লাইন হিসেবে ৯১ কিলেমিটার রেললাইন বসেছে।
খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ হোসেন মাসুম জানান, এই কাজের জন্য ৭৭৬.৬৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ৮টি রেলওয়ে স্টেশনের কাজ সম্পন্ন করতে হয়েছে, ৩১টি ব্রিজের কাজ করতে হয়েছে, ১’শ ৭টি কালভার্ট ও ৯টি আন্ডারপাস নির্মাণ করতে হয়েছে। আগে আমাদের এসব কাজ শেষ করতে হয়েছে তারপর ৬৪ কিলোমিটার রেলের কাজ। সব মিলিয়ে এটি খুবই সময় সাপেক্ষ ছিলো।
ব্যবসায়ীরা বলছেন রেল নেটওয়ার্কে মোংলা বন্দর যুক্ত হলে বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে দক্ষিনাঞ্চলে। বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ বাড়বে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের। খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি পরিচালক মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, খুলনা-মোংলা রেললাইনটি চালু হওয়ার ফলে আমাদের বেনাপোল স্থল বন্দর এবং মোংলা নৌ-বন্দরের সাথে যে রেল যোগাযোগ সৃষ্টি হবে তা আমদানি এবং রপ্তানিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে ভারতের সেভেন সিস্টার্স এবং নেপাল সহ যারা মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে চায় তারা এই রেললাইন ব্যবহার করে পন্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারবে।
এতে দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবে। বিশেষ করে দেশীয় ব্যবসায়ে একটি নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা ২ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা আর বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগ করেছে ১ হাজার ৩১২ কোটি টাকা।#