# আশরাফুল ইসলাম ফরাশী ,বাগমারা প্রতিনিধি…………………………………………………
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ বাগমারা জোনাল অফিস এর ভুতুরে বিলে অতিষ্ঠ বাগমারা উপজেলাবাসী। উপজেলারার প্রায় গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলের কপিতে নিজের মনগড়া বিল তৈরি করে নির্দিষ্ট সময়ে বিল পরিশোধ করতে বলেছে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বাগমারা জোনাল অফিস। লাগামহীন বিল দেখে অতিষ্ঠ হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলাবাসী। অনেকে অতিরিক্ত বিল দেখে ভবানীগঞ্জে অবস্থিত জোনাল অফিসে গিয়ে বিলের কপি সংশোধন করছেন। ভুতুড়ে বিলের কারণে গুণতে হচ্ছে প্রকৃত বিলের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ অতিরিক্ত টাকা। বিশেষ করে চলতি মাসের তৈরি ভূতুরে বিল নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন উপজেলার হাজার হাজার গ্রাহক।
অভিযোগ উঠেছে, মিটার রিডার বাড়ি বাড়ি না গিয়েই ইচ্ছে মত রিডিং বসানোর কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এতে করে গ্রাহকদের অতিরিক্ত চার্জ গুণতে হচ্ছে। বিগত কয়েক মাসের তুলনায় মে মাসে হঠাৎ বিলের পরিমাণ দুই থেকে তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রাহকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিদ্যুৎ বিলের কপি হাতে পেয়ে গ্রাহকরা অভিযোগ জানালে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস আগামী মাসে সমন্বয় করা হবে বললেও এমন আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছেন না গ্রাহকরা।
গ্রাহকদের মতে পল্লী বিদ্যুৎ একদিকে লোডশেডিং তার উপর যে বিলের বোঝা গ্রাহকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয় তা বিভিন্ন নিয়ম দেখিয়ে আদায় করেই ছাড়ে। এদিকে কোন কারণে ২মাস বিল দিতে না পারলেই কেটে দেওয়া হচ্ছে বসতবাড়ি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ।
তাহেরপুর এলাকার ভ্যান চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, এলাকার রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের মাসের পর মাস বিল বকেয়া থাকলেও তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ থেকেই যায় কিন্তু সাধারণ ভ্যান ও রিক্সা চালকদের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। তাহেরপুর পৌরসভা,গোয়ালকান্দি, হামিরকুৎসা, মাড়িয়া, গনিপুর, শ্রীপুর,যোগীপাড়া সহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বাগমারা জোনাল অফিসের তৈরি করা লাগামহীম ভূতুরে বিলের তথ্য। যা পুরো উপজেলবাসীকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। লাগামহীন এ ভুতুরে বিলের কারণে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে লাখ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১।
ক্রমাগত ভাবে দর নির্ধারণ করে বিল তৈরি করছে নাটোর জোনাল অফিস। লক্ষ্য করা গেছে, সাধারণ গ্রাহকদের পরিবারে সর্ব নিম্ন বিদ্যুৎ যদিও ব্যবহার করে তা ২৫/৩০ কিংবা ৩০/৩৫ ইউনিট। কিন্তু এসব পরিবারের মিটারগুলোর দুই গুণ বিল বাড়িয়ে দিয়ে বিল দিতে বাধ্য করছে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ এর জোনাল অফিস।
সাইফুল ইসলাম নামে এক গ্রাহক গাণিতিক হিসাব করে জানান, আমার বাড়িতে প্রতি মাসে ৫০-৭৫ ইউনিটের মতো ব্যবহার হয়। কিন্তু এ মাসে আমার বিলের কপি ২৫০ ইউনিট উল্লেখ্য করে বিলের কপি দিয়েছে। অথচ আমার মিটারে ১০০ ইউনিট বেশি দেখেছে। এতে আমার অনেক টাকা জরিমানা দিতে হচ্ছে। শুধু আমার মিটারের ক্ষেত্রে নয়, আমার এলাকার প্রতি মিটারের একই অতিরিক্ত বিল তৈরি করেছে। এছাড়া তিনি আরো বলেন, আমি বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে হয়তো বিল সংশোধন করে নিতে পারি কিন্তু যারা সচেতন নয়, তাদের কি হবে। আমাদের এলাকার সাধারণ মানুষ এসব বুঝবে না। না বুঝেই বিল পরিশোধ করেছেন অনেকে।
তাহেরপুরের মামুন নামের এক গ্রাহক জানান আমার বিদ্যুৎ বিল (হিঃ ৭৪৯/১৮২৫) এপ্রিল মাসে ছিল ৪৯৯ টাকা কিন্তু মে মাসের বিদ্যুৎ বিল আসে ৯৮৬ টাকা। এই টাকাটা আমার কাছে অনেক বেশি। তাও বিলের টাকা সময় মত দিতে হবে, না দিলে হয়তবা বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিবে। তাই যত সমস্যাই হোক বিদ্যুৎ বিল দিতেই হবে। এদিকে তাহেরপুরের আরেক গ্রাহক আফজাল হোসেন, পিতাঃজব্বার ফরামি তিনি জানান আমার ( হিঃ নং ০৬/৭৩৬/৩০৬০) এপ্রিলের বিল এবং মে মাসের ১০/৫/২৩ তাং শেষ দিন ছিল ভুলবসত কারণে পরিশোধ মাশুল সহ বিল পরিশোধ করা হয় । তারপরে মে মাসে আবার এপ্রিলের বিদ্যুৎ বিল যোগ করে বিলের কপি আমার বাড়ি দিয়ে গিয়েছে। এখন আবার আমাকে নিজের কাজ বাদ দিয়ে, বিলের কাগজ সংশোধনের জন্য বিদ্যুৎ অফিসে যেতে হবে। আমরা গরীব মানুষ আমাদের একদিন কাজে না গেলে সংসারে অভাব দেখা দেয়। সময় মত না গেলে বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিতে পারে। তাই ঠিক করে নিতেই হবে।
এব্যাপারে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বাগমারা জোনাল অফিসের ডিপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম জানান, গত রমজান মাসে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচের কারণে এ মাসে বিদ্যুৎ বিল তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়েছে। এছাড়া অনেকের বকেয়া বিল থাকার জন্য তাদের বিলে টাকার হিসাব বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা ইচ্ছে করে বিলগুলো বৃদ্ধি করিনি। যাদের বিলের কপি বেশি বিল লেখা , তা হয় তো ভুলবশত লেখা হয়েছে। তিনি আরো জানান, আপনারা সচেতন ব্যক্তি, আপনার জানামতে এবং আপনাদের আশপাশের যাদের বিল বেশি লেখা হয়েছে তাদের অফিসে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করছি। তাদের বিল সংশোধন করে দেওয়া হবে।#