নিজস্ব প্রতিবেদক……………………………………………….
রাজশাহীতে একেক নেতা দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে যুবলীগের কমিটিতে পদ নিয়ে আছেন। জেলা ও মহানগর যুবলীগের কমিটিতে থাকা অধিকাংশের বর্তমান বয়স ৫৫ থেকে ৬০ বছরের বেশী। কোনো কোনো যুবলীগ নেতার বয়স ৬০ পার হয়ে ৬৫।
রাজশাহী জেলা ও মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বয়স এখন ৭০ এর কোঠায়। তারা এখন ৬-৭ নাতি নাতনীর দাদা।তবুও তারা যুবলীগের নেতা।
অবিশ্বাস্য হলেও রাজশাহী মহানগর যুবলীগে বাবার সঙ্গে ছেলেও একই কমিটিতে পদ নিয়ে আছেন। তার মানে বাবা যুবলীগ, ছেলেও যুবলীগ।
এছাড়াও জেলা যুবলীগের আবু সালেহ ২৪ বছরের বেশি কমিটির বিভিন্ন পদে আছেন। সভাপতি হিসাবে আছেন ১৮ বছর ধরে।
রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের কমিটি হয়েছিল ২০১৬ সালের ৫ মার্চ। এই দুই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের ৬ মার্চ। নানা অজুহাতে জেলা ও মহানগর যুবলীগের নতুন কমিটি আর হয়নি। কেন্দ্রেরও বিশেষ চাপ না থাকায় সম্মেলনের তাগিদও নেই কারও।এর ফলে ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠনের দলীয় কর্মকাণ্ড রাজশাহীতে প্রায় নেই বললেই চলে।
সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ছেড়ে যুবলীগের বুড়ো নেতারা ব্যবসা-বাণিজ্য, ঠিকাদারি ও জমি কেনাবেচার কাজে মগ্ন। কারও কারও বিরুদ্ধে জমি দখল আর টেন্ডারবাজিরও অভিযোগ আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলী দুই যুগ আগে যুবলীগে আসেন। আগে ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি। ২০০৪ সাল থেকে সভাপতি পদে আছেন। সভাপতি রমজান আলীর ছেলে রায়হানুর রহমান রয়েল এখন একই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। রমজমান আলীর তিন ছেলে সোহেল, জুয়েল ও রয়েলের বিয়ে-শাদি দিয়েছেন। রমজান আলী ৬ নাতি নাতনীর দাদা হয়েছেন আগেই।
আর মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বাচ্চুও যুবলীগ করছেন প্রায় ২৫ বছর। কবে প্রথম যুবলীগের সংগঠনে এসেছিলেন তা এখন আর কারও মনে নেই।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে রমজান আলী মহানগর যুবলীগের সহসভাপতি হন। ওই কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বাচ্চু। এরপর ২০০৪ সালের ১৮ এপ্রিল মহানগর যুবলীগের সম্মেলন হয়। এতে রমজান আলী সভাপতি, বাচ্চু সাধারণ সম্পাদক হন। তিন বছরের ওই কমিটিতে তারা পার করেন ১২ বছর।
২০১৬ সালের ৫মার্চ আবার সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনেও রমজান আলী সভাপতি এবং বাচ্চু সাধারণ সম্পাদক হন। এই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পান সভাপতি রমজানের ছেলে রায়হানুর রহমান রয়েল।
এছাড়াও এক কিমিটিতে কে কেন পদে আছে সে কমিটি প্রকাশ করেননি তারা। অনুমোদনের পর থেকেই কমিটিটি গোপন রাখার অভিযোগ রয়েছে সভাপতির বিরুদ্ধে।
এদিকে, তিন বছরের এই কমিটিরও মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে তিন বছর আগে। কিন্তু এখনো সম্মেলন হয়নি। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন দায়িত্বে থাকলেও রমজান ও বাচ্চু শহরের ওয়ার্ড কমিটিগুলো পুনর্গঠন করতে পারেননি। ফলে বুড়ো নেতাদের নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরাও অস্বস্তিতে ভুগছেন।
নেতাকর্মীরা আরও জানান, রমজান ও বাচ্চুর ঘনিষ্ঠ কিছু নেতাকর্মী ছাড়া যুবলীগের সবাই এখন সম্মেলনের জন্য মুখিয়ে আছেন। বর্তমানে সভাপতি-সম্পাদক পদের জন্য অন্তত ডজনখানেক নেতা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সভাপতি-সম্পাদককে ছেড়ে এখন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও মহানগরের সম্ভাব্য সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন। পদ প্রত্যাশীদের তালিকায় টেন্ডারবাজ ও ভূমিদস্যু হিসেবে চিহ্নিত এবং নৈতিক স্থুলনের কারণে দল থেকে বহিস্কার হয়েছিলেন এমন নেতাও রয়েছেন।
জানা গেছে, নগর যুবলীগের সভাপতি হতে কাজ শুরু করেছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি, সহসভাপতি মোখলেসুর রহমান মিলন এবং নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মমিন।
আর সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আক্তার নাহান, বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল শেখ, প্রচার সম্পাদক মাজেদুল আলম শিবলী, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকার এবং বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমনের নাম শোনা যাচ্ছে।
এদের মধ্যে ক্লিন ইমেজের তরুণ নেতা হিসেবে পরিচিত তৌরিদ আল মাসুদ রনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ঘনিষ্ঠ। পদ প্রত্যাশী
পদপ্রত্যাশী শফিকুজ্জামান শফিক বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই মহানগর যুবলীগে একই নেতৃত্ব। কর্মীরা এখন সম্মেলন চান। তারা মনে করছেন যে, সাবেক ছাত্রনেতারা যুবলীগের নেতৃত্বে এলে ভালো হবে। আমি নেতাকর্মীদের মতামতকে সম্মান জানিয়ে তা গ্রহণ করব।
যুবলীগ নেতা নাহিদ আক্তার নাহান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় সংগঠনটি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দ্রুত সম্মেলন দরকার।
মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনি বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে সম্মেলন না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হয়েছে, সেটি আর থাকবে না। আমরা সবাই মিলে সংগঠনটিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এ লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি।#