নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী…………………………………………………….
আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে মামলার মুখে পড়ছেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশের আগে বিএনপির স্থানীয় নেতারা মামলার আসামি হচ্ছেন। ইতোমধ্যে রাজশাহীর গোদাগাড়ী, বাগমারা ও মোহনপুর থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে তিনটি মামলা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, নাশকতার পরিকল্পনা করায় মামলাগুলো দায়ের হয়েছে। তবে সব থানায় দায়ের করা মামলার এজাহার প্রায় একই রকম। রাজশাহীর বিএনপির নেতারা বলছেন, গণসমাবেশের আগে নেতাকর্মীদের ফেরার করতে পুলিশ বানোয়াট মামলা করছে। স্থানীয় নেতারা যেন কর্মীদের সংগঠিত করে সমাবেশে আনতে না পারেন সেই উদ্দেশ্যেই মামলাগুলো করা হচ্ছে। পুলিশ অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত পাঁচদিনে রাজশাহীর বাগমারা, মোহনপুর ও গোদাগাড়ী থানায় বিএনপির ৫৫০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সবগুলো মামলারই বাদী পুলিশ। এই মামলাগুলোতে বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ থাকলেও বাকিদের নাম না জানা আসামি করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, তিন উপজেলাতেই বিএনপির নেতাকর্মীদের গোপন বৈঠকের স্থান থেকে তাজা ককটেল জব্দ করা হয়েছে।
গত ১৭ নবেম্বর রাতে গোদাগাড়ী থানায় পুলিশ একটি মামলা করে। এই মামলায় গোদাগাড়ী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বিপ্লবসহ (৪৯) পাঁচজনের নাম উল্লেখ আছে। এই মামলায় নাম না জানা আসামির সংখ্যা প্রায় ২০০ জন।
পুলিশ এজাহারে বলেছে, ১৬ নভেম্বর রাতে বিএনপির নেতাকর্মীরা পৌর এলাকার সরমংলা হেলিপ্যাড এলাকায় গোপন বৈঠকে বসেন। সেখানে নাশকতার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। খবর পেয়ে থানা-পুলিশের একটি দল সেখানে গেলে আসামিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল মেরে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চারটি ককটেল, বাঁশের লাঠি, ইট ও পাথর এবং বেশকিছু পানির বোতল উদ্ধার করে। এ নিয়ে থানায় এই মামলা করা হয়।
পরের দিন ১৮ নবেম্বর বাগমারা থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করে পুলিশ। এই মামলায় ভবানীগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আখতারুজ্জামান বল্টু, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মহব্বত আলী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মামুনুর রশিদসহ নাম না জানা ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশের এজাহার অনুযায়ী, বাগমারার একটি স্কুল মাঠে রাতে নাশকতার পরিকল্পনা করতে বসেছিলেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পুলিশ সেখানে গেলে তারা পালিয়ে যান। পরে ঘটনাস্থল থেকে কিছু তাজা ককটেল ও লাঠি জব্দ করা হয়। এ নিয়ে মামলা করে পুলিশ।
এর আগে, গত ১৫ নবেম্বর রাজশাহীর মোহনপুর থানায় একই আইনে একটি মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবদুস সামাদ, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব রহমানসহ সাতজন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া বিএনপির আরও ১৫০ থেকে ১৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, ১৫ নবেম্বর রাতে উপজেলার বসন্তকেদার এলাকায় গোপন বৈঠক করছিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। পুলিশ গেলে তারা পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে চারটি অবিস্ফোরিত তাজা ককটেল, চাকু এবং কিছু ইট জব্দ করা হয়। এ নিয়ে থানায় মামলা করা হয়।
রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, সমাবেশ বানচালের উদ্দেশ্যে পুলিশ নেতাকর্মীদের নামে এসব বানোয়াট মামলা দায়ের করছে। কিন্তু এসব করে গণসমাবেশ বানচাল করা যাবে না। বিএনপির পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তা ঠেকানো যাবে না।
তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। প্রত্যেক মামলায় কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করে নাম না জানা আসামি করা হয়েছে কয়েকশ মানুষকে। এসব মামলায় এখনও কেউ গ্রেফতার না হলেও আমাদের আশঙ্কা, গণসমাবেশের আগে পুলিশের ধরপাকড় শুরু হবে। সে কারণেই ২০০ জন করে আসামি রাখা হচ্ছে।
রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতেখায়ের আলম বলেন, মিথ্যা মামলা করার অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন। যেটা প্রকৃত ঘটনা, সে অনুযায়ীই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোনো সাধারণ মানুষ হয়রানি হবে না, যারা প্রকৃত অপরাধী তারা আইনের আওতায় আসবেন। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।#