মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন:
সাংবাদিকতা পেশা নয়, এক ধরনের দায়িত্ব। সমাজের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা, সত্যকে জনসমক্ষে আনা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরাই তাদের ব্রত। অথচ এই দায়িত্ব পালনের পথটা কখনোই মসৃণ নয়। সাংবাদিকরা যখন সত্য কথা তুলে ধরেন, তখন প্রশংসার বদলে তাঁদের ভাগ্যে জোটে হুমকি, অপবাদ, কখনো প্রাণনাশের আশঙ্কা। আজকের সমাজে একটি অদ্ভুত বৈপরীত্য দেখা যায়।
একজন সাংবাদিক যদি কারও পক্ষে অনুকূলে একটি “ভালো” নিউজ করেন, তিনি ভালো সাংবাদিক। কিন্তু যদি সেই একই সাংবাদিক সমাজের অন্ধকার দিক তুলে ধরেন, প্রভাবশালীর অনিয়ম ফাঁস করেন, সঙ্গে সঙ্গেই তিনি হয়ে যান ‘বিকৃত মনের’, ‘কিছু পাওয়ার আশায় কাজ করা’, কিংবা ‘কাউকে ছোট করার ষড়যন্ত্রকারী’। তাদের উদ্দেশ্য যখন সত্য প্রকাশ, তখন বহু সময়েই তারা হয়ে ওঠেন ক্ষমতাধরদের চোখের কাঁটা।
একটা রিপোর্ট কিংবা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন একজন সাংবাদিকের জীবনে নামিয়ে আনতে পারে ভয়াবহ ঝুঁকি। হুমকি আসে ফোনে, সোশ্যাল মিডিয়ায় কিংবা প্রকাশ্যেই। পরিবার থাকে আতঙ্কে, কিন্তু সমাজ তা দেখে না। সত্য বলার দায় সাংবাদিকদের, কিন্তু সেই সত্য শুনতে আমরা অনেকেই প্রস্তুত নই। আমরা চাই “শুভ সংবাদ”, চাই যা আমাদের আরাম দেয়, যা মন ভাল রাখে। কিন্তু সমাজ যদি অসুস্থ হয়, সেই অসুস্থতার কথা না বললে সুস্থতা আসবে কীভাবে? একজন প্রকৃত সাংবাদিক ভালোবাসেন সমাজকে, তাই তিনি প্রশ্ন তোলেন। ভালো নিউজ করার মানে শুধু প্রশংসনীয় কাজ দেখানো নয়, বরং সমস্যা তুলে ধরা, ভুল সংশোধনের সুযোগ তৈরি করাও তাঁর কাজের অংশ।
এখানে একটা প্রশ্ন আমাদের নিজেদের করাই উচিত আমরা কি সত্য জানতে চাই, নাকি সত্য ঢেকে রাখার কৌশল? সাংবাদিকরা আয়নায় সমাজের মুখ দেখান। কখনো সেটা হাস্যোজ্জ্বল, কখনো বিষণ্ন, কখনো ভয়ংকর। কিন্তু আয়নার উপর রাগ করে লাভ নেই, বরং আমাদের দেখা উচিত আয়নায় কি ফুটে উঠছে। হোক না সেটা অপ্রিয় — কারণ একমাত্র সত্যই পারে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। আর সেই সত্যের পথযাত্রীদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা থাকা উচিত, সন্দেহ নয়।# মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন, গণমাধ্যম কর্মী।