মমিনুল ইসলাম মুন………………………………………………………..
রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তানোর উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার ভাড়ার নামে প্রতি মাসে প্রায় কুড়ি লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও অর্থের বিনিময়ে অবৈধ মটরে বিদ্যুৎ সংযোগ, আবাসিক মটর থেকে সেচ দেয়ায় প্রতিমাসে মটর প্রতি দেড় হাজার টাকা জরিমানা আদায়, গ্রাহকক্রটি দেখিয়ে টাকা আদায়সহ নানা কারণে গ্রাহক হয়রানি চরমে উঠেছে। বিশেষ করে এজিএম কামাল এখানে যোগদানের পর তার কথিত আত্মীয় তৌফিকের দ্বারা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাসাদে পরিণত হয়েছে গ্রাহকগণের অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, তৌফিক আর্থিক লেনদেন করছেন আর কামাল অবৈধ মটরে সংযোগের ব্যবস্থা করছে। ইতিমধ্যে মোহর গ্রামের তেতলার মতিউর রহমানের অবৈধ মটরে সংযোগের জন্য বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হয়েছে। জানা গেছে, গ্রাহকগণ নতুন সংযোগ গ্রহণের সময় সমিতির কাছে থেকে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে মিটার ক্রয় করে সংযোগ গ্রহণ করেন। কিন্ত্ত তার পরেও শিল্প সংযোগে প্রতি মাসে ১৫০ টাকা, সেচ সংযোগে ৫০ টাকা ও আবাশিক সংযোগে মাসে ১৫ টাকা করে মিটার ভাড়া আদায় করা হয় বলে গ্রাহকগণ নিশ্চিত করেছে। এদিকে হঠাৎ করে মোট বিলের সঙ্গে মিটার ভাড়ার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করায় গ্রাহকদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে তারা আর্থিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০০৬ সালের জুলাইয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট বিদ্রোহের পর থেকে ২০০৭ সালের আগষ্ট পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে মিটার ভাড়া নেয়া বন্ধ ছিল। তবে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আবার গ্রাহকদের কাছ থেকে মিটার ভাড়া আদায় করছে। পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক জামাল উদ্দিন (৪৫), মামুনুর রশিদ (৩২) বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি চোখে ধূলো দিয়ে ও প্রতারণা করে আমাদের কাছ থেকে মিটার ভাড়ার নামে টাকা নিচ্ছে। তারা সংযোগের সময় আমাদের কাছ থেকে মিটারের দাম অগ্রিম নিয়ে মিটার দিয়েছে। তাছাড়া তাদের সার্ভিস চার্জ, ক্যাপাসিটি ও চাহিদা চার্জসহ বিভিন্ন খাতে টাকা দিচ্ছি, তারপরও আবার মিটার ভাড়া কেন দিতে হবে।
মুন্ডুমালা বাজারের ব্যবসায়ী পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক মিঠুন অভিযোগ করে বলেন, টাকা দিয়ে মিটার ক্রয় করে এনেও আবার মিটার ভাড়া দিতে হয় এ কেমন কথা ?। এ দিকে আবার মিটার ভাড়ার কোন নির্ষ্ট মেয়াদও নেই। সারা জীবন মিটার ভাড়া দিতে গেলে বিরাট অংকের ক্ষতি হবে। তানোরের মুন্ডুমালা বাজারের একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন,মিটার ভাড়া বাদেও প্রতি মাসে সার্ভিস চার্জ, ক্যাপাসিটি ও চাহিদা চার্জসহ নানা খাতে টাকা আদায় করা হচ্ছে। মিটার পুনঃস্থাপন বা মেরামতের কথা বলে এই টাকা নেয়া হলেও মিটার খারাপ হলে সমিতির লোকেরা মিটার খুলে নিয়ে যায়। পরে নির্ধারিত ফি দিয়েই সে মিটার পুনঃস্থাপন করতে হয়। কখনো কখনো মিটার নষ্টের জন্য গ্রাহকদের দায়ী করে অথবা গ্রাহক সৃষ্ট ক্রটি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়।
তানোর পল্লী বিদ্যুতের (এজিএম) কামাল বলেন, তানোরে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক প্রায় ৫০ হাজার। তবে শ্রেণীভেদে গ্রাহকের সঠিক সংখ্যা তিনি জানাতে পারেননি, আর মিটারভাড়া নিয়মানুযায়ী আদায় করা হয়। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, তানোরে পল্লী বিদ্যুত সমিতির গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার এর মধ্যে আবাশিক, বাণিজ্যিক, সেচ, শিল্প ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে বর্তমানে গ্রাহক শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ সুবিধার আওতায় এসেছে। সেই হিসেবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তানোরের গ্রাহকদের কাছ থেকে মিটার ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে প্রায় ২০ লাখ ও বছরে প্রায় সোয়া কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে, মিটার ভাড়ার নামে আদায়কৃত অর্থের একটি বড় অংশ পল্লী বিদ্যুতের একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর পকেটে যাচ্ছে। এবিষয়ে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এব্যাপারে রাজশাহী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তানোর ইনচার্জ (ডিজিএম) জহুরুল ইসলাম বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মিটার ভাড়া বাবদ টাকা নেয়ার কারণ হলো গ্রাহকদের মিটার যখন তখন বিকল বা ক্রটিপূর্ণ হলে এর মেরামত ও পুনঃস্থাপনের জন্য খরচ করা হয়। এ সময় আর গ্রাহকের কাছ থেকে কোন টাকা নেয়া হবে না। তিনি বলেন, কানসাট বিদ্রোহের পর মিটার ভাড়া, সার্ভিস চার্জ এগুলো আদায় বন্ধ ছিল, তবে আরইবির সিদ্ধান্তক্রমে সারা দেশেই আবার আদায় শুরু হয়েছে এটা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত তাই বিষয়ে তাদের কিছুই করনীয় নেই।#