আবুল কালাম আজাদ…………………………………………………………….
রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশ ঠেকাতে পুলিশ নেতা-কমীর্দের গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। গত ২১ নভেম্বর থেকে আজ অবধি রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় নাশকতার নামে পুলিশী হয়রানী চলছে সমানতালে। জেলা উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পযার্য়ে গণসমাবেশের প্রচারণা চলছে। কোন রকমের অসন্তোষ ঠেকাতে পুলিশের অভিযান অব্যাত রয়েছে। পুরাতন মামলায় গ্রেফতার এবং নতুন মামলা চাপিয়ে দিয়ে গ্রেফতার করছে পুলিশ। এ পযর্ন্ত বিএনপির কয়েক হাজার নেতা- কমীর্কে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপির নেতা- কর্মীরা।
বিএনপি অভিযোগ করেছে যে, গত ২১ নভেম্বর রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা সদরে চারটি ককটেল ও কয়েকটি লাঠি-সোঠা উদ্ধারের ঘটনায় বিএনপি-যুবদল ও ছাত্রদলের ১৬ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫০-১৬০ জনের নামে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এ মামলা দায়েরের পর থেকে উপজেলাজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে রাত-বিরাতে অভিযান চালাতে থাকে পুলিশ। বাধ্য হয়ে মামলার আসামিরা গত বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসেন। তবে অজ্ঞাতদের গ্রেপ্তার করতে এখনো অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
সেরেজমিনে জানা গেছে, শুধু রাজশাহীতেই বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ককটেল উদ্ধার ও বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছে ৬৪ টি মামলা। এর বাইরে নওগাঁ, চাপাইববাবগঞ্জ, নাটোরসহ বিভাগের ৮ জেলাতে আরও ৫০টি মামলা হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে। এসব মামলায় অন্তত দেড় হাজার আসামি করা হয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
বিএনপি নেতাদের দাবি সবমিলিয়ে রাজশাহীসহ বিভাগের আট জেলা মিলে ৬৪টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে কয়েক হাজার নেতা কর্মীকে।
এদিকে রাজশাহী নগরীর মাদ্রাসা মাঠে আগামী ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে আগুন সন্ত্রাসসহ কোনো ধরনের নাশকতা যেন করতে পারে নেতাকর্মীরা এ কারণে প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগও।
রাজশাহী মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ-যুবলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সভা করা হচ্ছে প্রতিদিনই। সমাবেশের দিনও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নগরীর জিরোপয়েন্ট ও আলুপাট্টিতে অবস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় দলের নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে এরই মধ্যে নগরীর বিভিন্ন প্রবেশদ্বারগুলোতে পুলিশি তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। সতর্ক রাখা হয়েছে পুলিশ। যেন কোনো ধরনের নাশকতা কেউ তৈরী করতে না পারে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রতিদিনই নগরী থেকে শুরু করে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশে-পাশের জেলাগুলোতে বিএনপির প্রস্তুতি সভা। দলের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রস্তুতি সভাগুলোতেও হাজারও নেতাকর্মীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির কামরুজ্জামান আয়নাল বলেন, ‘গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি সভায় দুর্গাপুরে ইউনিয়ন পর্যায়ে কয়েকটি সমাবেশে হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিতি ছিল। এর পর গত তিন-চার দিনে প্রশাসন থেকে আর আমাদের কোনো সভা করতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ ১৫০-১৬০ জন নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়ে এখনো বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে। সমাবেশ বা মিটিং-মিছিলে না যেতে হুমকি দিয়ে আসছে। দুর্গাপুরে গণসমাবেশ করায় সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পুরনো মামলায়। এ কারণে অনেক নেতাকর্মী ভয়ে রাতে বাড়িতেই থাকছেন না। তবে সমাবেশের তিন আগেই আমরা রাজশাহী শহরে গিয়ে অবস্থান নিব।
বিএনপি চেয়ার পার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুও বলেন, ‘গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজশাহীসহ সাংগঠনিক ৯ জেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৬৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তারসহ হয়রানি করা হচ্ছে। তবে রাজশাহীর সমাবেশ হবে স্মরণকালের সর্বোচ্চ বড় সমাবেশ। সে লক্ষ্যে আমরা নানা প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছি।
বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, গণসমাবেশের তিন আগেই বিএনপির নেতাকর্মীরা খাবার ও বিছানপত্রসহ পদ্মা পাড়ের মাদ্রাসা মাঠে উপস্থিত হতে শুরু করবেন। অনেকেই অবস্থান নিবেন পদ্মার ওপারে চরের বাড়িগুলোতে। তারা সমাবেশের দিন সকালে বা আগের দিন রাতে নৌকায় নদী পার হয়ে মাদ্রাসা মাঠে এসে জড়ো হবেন। যেন বাস ধর্মঘটের ডাক দিলেও বিএনপি নেতার্মীদের আসা-যাওয়াতে কোনো সমস্যা তৈরী না হয়।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমন বলেন, ২০১৪-১৫ সালে রাজশাহীতে বিএনপি-জামায়াত সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে আগুন সন্ত্রাসের যে জন্ম দিয়েছিল, সেটি আর করতে দেওয়া হবে না। গণসমাবেশের নামে তারা আবারও বিভিন্ন স্থানে ককটেল হামলা চালাচ্ছে। তাদের এসব অপতৎপরতা রুখে দিতে আমরাও প্রতিদিন মিটিং-মিছিল করছি। গণসমাবেশের দিনও আমরা দলীয় কার্যালের সমানেসহ নগরীর জিরোপয়েন্টে অবস্থান নিব। সমাবেশের নামে তাদের কোনোভাবেই নাশকতা করতে দেওয়া হবে না।#