যশোর অভয়নগরের এগার মন্দিরের পুরাকীর্তি আজও কালের সাক্ষী
-
প্রকাশের সময় :
রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২
-
২৬০
বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
# উৎপল ঘোষ, যশোর থেকে………………………………………
যশোর – খুলনা মহাসড়কের অভয়নগর থানার অন্তর্গত রাজঘাট শিল্পাঞ্চল নামক স্থান হতে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রয়েছে এক নিভৃত গ্রাম। ভৈরব নদের উত্তর পাড়ের অভয়নগর খেয়াঘাটের ওপরেই কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজও অভয়ার এগার শিব মন্দির। যা এতগুলো শিব মন্দির বাংলাদেশে আর কোথাও দেখা যায় না।এই মন্দির ঘিরে রয়েছে এক দুখী রাজ কন্যার ইতিহাস।
যশোর অভয়নগর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের অভয়নগর মৌজায় অবস্থিত। ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দের অভয়নগর থানা ভবন প্রতিষ্ঠিত হয়। জানা যায়,এ অঞ্চলটির জম্ম কমপক্ষে প্রায় কুড়ি হাজার বছর পূর্বে গঠিত এটি একটি প্রাচীন ভূখণ্ড। ইতিহাস সম্পর্কে একটু না বললেই নয়।প্রতাপাদিত্য নিজের শাসন সংহত ও মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়ার শক্তি প্রস্তুত করার জন্য তৎকালীন আমলে প্রচুর সংখ্যাক পর্তুগিজকে তার বাহিনীর উচ্চপদে নিয়োজিত করেছিলেন।
এ সময় বহু পর্তুগিজ এখানে বসবাস শুরু করে।মোগলদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বন্দী হন।ফলে রাজ পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েন।এদের একজন উত্তরস্বরী পুরুষ রাজা নীলকন্ঠ রায় নিয়েছিলেন যশোরের চাঁচড়া অঞ্চল। যশোর চাঁচড়ার জমিদার রাজা নীলকন্ঠের কণ্যা অভয়ার নামে সম্পত্তিভূক্ত করে বলে নাম করণ করা হয় অভয়নগর।নামকরণ নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে।তবে অভয়াকে ঘিরে পরবর্তীকালে অভয়নগর নামকরণ হয় বলে জানা যায়।
রাজা নীলকন্ঠের কণ্যা অভয়া ছোট বেলা থেকেই শিবভক্ত ছিলেন।বিবাহের পর কণ্যার সুখের জন্য একাদশ শিব মন্দির বিশিষ্ট বিশাল একটি বাড়ি ও ঘাট বাঁধা পুকুর নির্মাণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর পিতৃকুলে আর ফিরে যাননি বলে জানা যায়।কণ্যার প্রার্থনা মতে রাজা ধর্মকর্মের জন্য একাদশ শিব মন্দিরের অবশিষ্ট কাজ সমাপ্ত করেন। বাঘুটিয়ার বাড়ি ও সংলগ্ন অঞ্চল অভয়ার সম্পত্তি হিসাবে ঘোষণা করেন। তৎকালীন আমলে মন্দিরের নামে প্রচুর সম্পত্তি নিস্কর করে দিয়েছিলেন। এখানে আগে প্রতিদিন পূজা হত।বসত মেলা।
পূজার অবশিষ্ট ভোজ গরীব ব্রাক্ষণদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হতো বলে জানা যায় ও একাদশ শিব মন্দিরের বদৌলতে তৎকালীন আমলে প্রতিদিন ৩০টি পরিবারের অন্নসংস্থান হতো। বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বর্তমানে অভয়নগরে অবস্থিত বসতবাটির অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেলেও শিব মন্দিরগুলো এখনও প্রাচীন ঐতিহ্যের কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একাদশ শিব মন্দিরের মধ্যে উত্তর পাশের মন্দিরটি সবচেয়ে উঁচু ও বড়। পূর্বের সারিতে ৪ টি পশ্চিম সারিতে ৪টি মোট ৮ টি এবং সদরের দুই পাশে দুইটি মন্দির নিয়ে মোট এগারোটি মন্দির। ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি ব্যাসের বড় মন্দিরটির দৈর্ঘ্য ২৪ ফুট ও ৪ ইঞ্চি প্রস্থ ২২ ফুট ৩ ৩ ইঞ্চা। মন্দিরের সামনে তিনটি খিলানের পেছনে ৪ ফুট ৭ ইঞ্চি আয়তনের একটি বারান্দা ও দুই পাশে ৩ ফুট ১০ ইঞ্চি বিস্তৃত গর্ভমন্দিরের অপূর্ব বিন্যাস কোনো কুশলী হাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় আজও।
প্রাচীর বিশিষ্ট মন্দিরগুলো নির্মাণশৈলী ও কুশলী অবস্থান যেমন আকর্ষণী তেমনি ভাবগম্ভীর।পুরাতন যৌলুস না থাকলেও মন্দিরগুলো খাড়া অবস্থানের স্মৃতিগুলো হাজার হাজার দর্শণার্থী নিয়ে যায় অভয়ার যৌলুসময় ভক্তিস্বরে। এখনো প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা পূজা হয় ও প্রতি বছর চৈত্র যাওয়ার দিন চৈত্র মেলা হয়।এ মেলায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও ভারত থেকে অনেক দর্শনার্থীরা আসেন। পুরাকীর্তি বিভাগ মন্দিরগুলো ২০১৫ -২০১৬ সালের দিকে দায়িত্বভার নিলেও পুরো সংস্কারের কাজ এখনো শেষ হয়নি বলে এলাবাসীর অভিযোগ।#
আরজা/০১
এই সংবাদটি শেয়ার করুন
এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ