সানসৈকত………………………..
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে সারা দেশ ব্যাপি বিতরণের যূগান্তকারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এটা আমাদের জন্য অতি গর্র বিষয়। তবে ভুলত্রুটি থাকাও কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। সারা দেশে বেশ আলোড়ন বইছে টিসিবির পণ্য নিয়ে। কাডের্ মাধ্যমে পাচ্ছে তেল, চিনি ও মশুরীর ডাল। এছাড়া সরকারি ছুটির দিন বাদে সপ্তাহের অন্যান্য দিন চাউল ও গমের ময়দা পাওয়া যাচ্ছে চাল। তবে এখন কথা হচ্ছে যে, মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে কি এসব পণ্য সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করতে পারছে না কতিপয় লোক ক্ষমতা দেখিয়ে লাইনে না দাঁড়িয়ে নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে, নিয়মকে অনিয়ম করে উত্তোলন করছে চাল।অনেকে বার বার ঘুরে ফিরে লাইনে দাঁড়িয়ে উত্তোলন করছে চাল। আবার অনেকে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে থেকেও পণ্য না পেয়ে শুণ্য হাতে ফিরে যাচ্ছে বাড়ি।তার মানে এই নয় কি যে সুষ্ঠু বন্টণ হচ্ছে না।সুষ্ঠু বন্টণ নিশ্চিত করতে না পারলে আসল উদ্দেশ্য সফল হবে না এ কথা সবার মনে রাখা উচিত।
সরকারি পণ্য সুষ্ঠুভাবে বন্টণ করতে হলে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রয়োজন।আমার তো মনে হয়না সুনিদির্ষ্ট নীতিমালাতে টিসিবি গরীব মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।নীতিমালা নাথাকার কারণে প্রকৃত অসহায় সকল গরীব মানুষের কাছে এসব পণ্য ঠিকমত পাচ্ছে না। আর একাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে? মন্ত্রণালয় চাল, ডাল, তেল ও চিনি ছেড়ে দিয়েই খালাশ। মন্ত্রণালয় মনে করছে তারা দায়িত্ব ঠিক মত পালন করছে এবং দেশের অভাবী মানুষেরা এ সুবিধা পেয়ে আরামেই আছে- কিন্তু আসলে কি তাই? অসহায় গরীব মানুষের কথা কেউ কি কখনও ভেবেছে, ভাবলেও কতটুকু। কিন্তু এখনও দেশের ৭৫% ভাগ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বাস করছে। এ ৭৫% ভাগ মানুষকে পিছনে ফেলে দেশের উন্নয়ন কখনও সম্ভব নয়।এসমস্যা কেউ না বুঝলেও বাংলাদেশের স্থপতি, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান বুঝেছিলেন এবং অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলেই এ গরীব শ্রেণির মানুষের ভাগ্য পরিবতর্নে উঠে পড়ে লেগেছিলেন।
আমরা আজ স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। তারপরও কি আমাদের নায্য অধিকার পেয়েছি। আর পাইনি বলেই আমাদের এত কস্ট, দু:খ। আমাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা এ উদ্যোগ নিলেও তা পুরোপুরি সফল হচ্ছে কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমরা টিপসই ত্যাগ করতে পারিনি।যারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুবিধা নিচ্ছে বা পাচ্ছে তারা অধিকাংশই নিম্ন শ্রেণির গরীব এবং অশিক্ষিত। বিপুল সংখ্যক গরীব এবং আশিক্ষিত জনগোষ্ঠিকে অক্ষরদন করার দায়িত্ব সরকারের। দেশের সকল আক্ষরবিহীন মানুষকে বাধ্যতামূলক অক্ষরধান করতে হবে।জন্ম হলে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে আজ প্রতিটি মানুষ জানে, ঠিক সেরকম প্রতিটি শিশুকে তার জন্মের ৪-৬ বছর বয়স হলে শিক্ষা বাধতামূলক গ্রহণ করতে হবে।তাহলে আর অশিক্ষিত মানুষ দেশে থাকবে না।আর আমরা এমনটি আশা করি। যে টিপসই পদ্ধতিতে খেলাবাজারে ৫ কেজি চাউল ৩০টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে তা গরীব মানুষের মধ্যে অনেকেই পাচ্ছে না, কিন্তু কেন? এসব খোলা বাজারের চাউল নিয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরাও খাচ্ছে। আরও এসব পণ্য তুলে নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট ডিলারের সাথে গোপন সম্পকর্র মাধ্যমে।আর কিছু এলাকার হোমড়া চোমড়া, কিংবা মাস্তান, বিভিন্ন রাজনৈতিক কমর্কান্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তি, এমনকি প্রশাসনের সাথে জড়িত এমন ব্যক্তিও।আর এসুযোগে ডিলারগণ সুকৌশলে নামে বেনামে বস্তার পর বস্তা সরিয়ে কালো বাজারে বিক্রি করছে।ফলে প্রকৃতভাবে যারা পাওয়ার কথা তারা পাচ্ছে না।
যাইহোক, টিসিবি খোলাবাজারে সপ্তাহের ছুটির দিন ব্যতিত প্রায় সকল দিনে ৫ কেজি চাল লাইনে দাঁড়িয়ে বিক্রি করছে ৩০ টাকা কেজি প্রতি দরে। এখানে কোন নিয়মনীতি পালন করা হচ্ছে না।এক ব্যক্তি যত খুশি ততোবার লাইনে দাড়িয়ে চাল নিতে পারছে। এতে কোন রকমের আপত্তি নেই।ফলে একটি পরিবারে যতগুলো সদস্য রয়েছে তারা সবাই লাইনে দাড়িয়ে যদি একাধিকবার চাল উত্তোলন করে তবে অন্যান্য সদস্যরা চাল না পেয়ে শূণ্য হাতে ফিরেতো যাবেই।
অনেকে অভিযোগ করে বলেছেন, খোলাবাজারের চাল নেয়ার জন্য মানুষ গ্রাম গঞ্জ থেকে ছুটে আসছে শহরের দিকে। অনেকে বলছেন তারা বস্তাবস্তা চাল শহর থেকে গ্রামে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকে আবার বেশি দামে বিক্রিও করছে।এরকম মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়, অনেক। এরকম নীতিমালা হওয়া উচিত ছিল যে, একটি পরিবার দিনে শুধু একবারই খোলা বাজারে টিসিবির চাল কিনতে পারবে। এতে করে শহরে সকল অসহায় পরিবার এসুযোগটি পেতে পারে।এজন্য কো্ন্ পদ্ধতিতে একটি পরিবার দিনে একবারই চাল কিনতে পারবে তা নিশ্চিত করতে হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। তার জন্য টিসিবি এবং স্থানীয় প্রশাসনকে একটু নজরদারিও করতে হবে। তাহলেই দেশের শোষিত বঞ্চিত অসহায় মানুষগুলো বতর্মান সরকারের যুগান্তকারী সহযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে পারবে।
টিসিবির রেশনিং Card পাওয়ার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অনিয়ম রয়েছে। কাউন্সিলর বা চেয়ারম্যান- মেম্বরের পছন্দ মত এবং চেনা মুখকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে। সঙ্গত কারণে প্রকুত অসহায় মানুষ অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক কার্ পাচ্ছে।কার্ প্রদানকারি ব্যক্তিরা বলছে বরাদ্দের পরিমাণ কম পাওয়ায় সব গরীব অসহায় লোক এসুবিধা পাচ্ছে না। কিন্তু অনেকে বলছেন সুষ্ঠু নীতিমালার মাধ্যমে সব অসহায় মানুষ পযার্য়ক্রমে সরকারে খাদ্যবন্ধব কমর্সূচিতে অংশ নিতে পারে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। যারা টিসিবির Card আগে পেয়েছে তারা এবারও পাচ্ছে বা পেয়েছে। ফলে গরীব শ্রেণির লোকের ভাগ্যের কোন পরিবতর্ন আদৌ হচ্ছেকি? অসহায়রা হাউকাউ করলে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বলছেন ‘বাবা এবার Card কম এসেছিল তাই সবাইকে দিতে পারিনি, যা ছিল দেয়া হয়ে গেছে আবার আসলে আপনাদের দিব’- কিন্তু অসহায় লোকগুলো আর কখনও পায়নি। এপাওয়াটা সুনিষ্চিত করতে পারলে সুষ্ঠু নীতিমালায় বন্টণ হতে পারে নচেৎ নয়।
সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনকে টিসিবির চাল বিতরণ পদ্ধতি মনিটরিং করতে হবে যাতে করে কোন অনিয়ম বাসা বাঁধতে না পারে, তাহলেই সম্ভব হবে সরকারের আসল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব। আমরা আশা করবো স্থানীয় প্রশাসন এরকমই একটি সফল উদ্যোগ নিবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনিয়ম বড় দূনীর্তির জন্ম দেয়। আর আমরা এঅনিয়ম গোড়াতেই নিমূর্ল করতে চাই। আমরা চাই দূনীর্তিমুক্ত সমাজ এবং দূনীর্তিমুক্ত দেশ #