ক্যাপশন: ছবিটি তানোর বাজার থেকে তোলা।-ছবি: মুন
মো: রোকনুজ্জামান রোকন……………………..
৫ আগস্টের আরো কয়েক মাস আগে থেকে সারা দেশে খাদ্রদব্যের দাম উর্দ্ধমূখী ছিল। দেশের খেটে খাওয়া দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ রীতিমত হিমসিম খাচ্ছিল সংসার চালাতে।তারা হা-হুতাশ করছিল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে। তারপরও কোনমতে দিন পার হয়ে যাচ্ছিল। চাল, ডাল আটা সোয়াবিন তেলে মূল্য উর্দ্ধগতি ছিল। সরকার টিসিবির মাধ্যমে এ কয়েকটি পণ্য বাজারে ছেড়ে দাম স্থিতিশীল রাখার বেশ খানিকটা চেস্টা করেছিল এটা ঠিক। টিসিবি কার্ড ছাড়াও খোলাবাজারে চাল ও আটা দেয়ার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষগুলোকে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। টিসিবির কার্ড তখনও যারা পাওয়ার যোগ্য তারা সবাই পায়নি এখনও পাচ্ছে না। যাদের টাকা পয়সা , চাকুরি, ব্যবসা রয়েছে তারাই এ কার্ড পেয়েছে এবং অন্তর্বতীকালিন সরকার আসার পরও ওরাই সুবিধা পাচ্ছে। এত করে এক শ্রেণির লোকের ভাগ্যের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। দলীয় লোকদের হাতে কর্তৃত্ব দিয়ে সাধারণ মানুষের ভাগ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাহলে কি এ অরাজকতা চলতেই থাকবে, ১৮ কোটি মানুষের জিজ্ঞাসা।
৫ আগস্টের পর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। এখন বলা যায় সারা দেশে নিরব দুর্ভিক্ষ বিরাজ করছে।মিডিয়াগুলো চিল্লাহিল্লা করার পর সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে এখন হালকাভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে যা কামের কাম কিছুই হচ্ছে না।এর আগে আ.লীগ সরকারও লোক দেখানো বাজার মনিটরিং শুরু করেছিল হালকাভাবে। সে সময় এর চেয়ে গত ২মাসে সকল নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যমূল্যের দাম দেড় গুণ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিগুণ তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান বাজারে একটি ডিমের দাম ১৫টাকা (প্রতিটি), একটি লাউ এর দাম ৮০-৯০টাকা, বেগুন- ১০০টাকা কেজি, কুমড়া- ৫০-৬০টাকা, আলু কেজি প্রতি ৬০টাকা, পটল ৭০-৮০টাকা কেজি), পেঁপে-৪০-৫০টাকা (কেজি), নতুন ফুল কপি-৮০-১০০ টাকা (কজি), বরবটি-৮০-৯০টাকা (কেজি), কাঁচা মরিজ- ৪০০- ৪৫০ টাকা (কেজি), পিয়াজ- ১৮০-২০০ টাকা (কেজি), পুঁই শাক- কেজি প্রতি ৩০-৪০টাকা, মিস্টি কুমড়া ৮০ টাকা কেজি ও ঢেঁড়স- ৮০-৯০ কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তারা বাধ্য হয়ে চড়া দামে কিনে কোন রকমে দিনাতিপাত করছে। মাংস ও মরগী তো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এভাবে শাকসবজির দাম বাড়তে থাকলে সাধারণ মানুষ কি খেয়ে বাঁচবে একবার ভেবে দেখুন।সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। তারা ভাবছে এভাবে আর কতদিন।
অনেকে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেকটা শান্তির নিংশ্বাস ফেললেও তারাই এখন বলছে ছাত্র-জনতার স্বাধীনতার চেয়ে আগের স্বাধীন বাংলা অনেকটা ভাল ছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল নতুন স্বাধীন বাংলা আসলেও সাধারণ মানুষকে কতটুকু সুখ দিতে পেরেছে আর কতটুকু দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে সেটাও ভেবে দেখা দরকার। শুধু বাকস্বাধীনতা পেলে চলবে না পেট স্বাধীনতাও পেতে হবে। পেটের জ্বালা বড় জ্বালা। শুধু শাকসবজি নয় সকল খাদ্য পণ্যের দাম অস্বাভাকিভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অস্বাভাবিককে স্বাভাবিক করতে পারলেই সরকারের সফলতা আসবে। এছাড়া বিভিন্ন রুটে যানবাহন ভাড়াও অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্বাভাবিক ভাড়া বৃদ্ধির কারণে সকল পণ্যের দামও সমান তালে বেড়েছে, এটাও একটা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বড় কারণ বলে অনেকে মনে করছেন।আমরা কি মনে করতে পারি না যে, লাগামহীন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম উর্দ্ধগতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ?
৫ আগস্ট ২০২৪ ছিল ফ্যাসিবাদ সরকারের অভূত্থান ঘটিয়ে ছাত্র-জনতার একটি নতুন স্বাধীন দেশের জন্ম দেয়। সবার প্রত্যাশা ছিল একটু ভিন্ন ধরণের দেশ।সরকার যখন দুর্নীতিবার, রাষ্ট্রদোহিতা, হত্যা খুন, দেশের বাইরে টাকা পাচার অর্থাৎ ফ্যাসিবাদ সরকারের সকল অপকর্ম নিয়ে যখন ব্যাস্ত ঠিক তখনই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খাদ্রদ্রব্য মূল্য বাড়িয়ে দেশকে অশান্ত করে তোলার ঘৃন ষড়যন্ত্র করছে একটি মহল বলে অনেকের অভিমত।আসলে কি তাই, না দেশে খাদ্য ঘাটতির জন্য এরকম হচ্ছে। যদি তাই হয় সরকারকে অধিক পরিমাণে খাদ্র উৎপাদনে আরো সুনির্দিস্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সরকারকে মনে রাখতে হবে দেশে আবারো যেন ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ না আসে। তবে এমনটি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ও চেস্টা করছে কেউ কেউ। এজন্য সরকারকে সাবধানতা অবলম্বন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে এবং মনে রাখতেও হবে ফ্যাসিবাদ সরকারের প্রেতাত্মারা এখন সজাগ রয়েছে এসরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য,এমনটি হতেও পারে।
কেউ কেউ বলছেন এবারে দেশের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির কারণে এখনো নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে রয়েছে। একারণে ঐসব অঞ্চলে আবাদ কোন প্রকারের চাষাবাদ হচ্ছে না বলেই সারা দেশে খাদ্য ঘাটতির অন্যতম কারণ। আর এ কারণেই শাক্সবজির দাম চরম উর্দ্ধগতি হয়েছে, এমন অযুহাত একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। বন্যা দূর্গত এলাকার আবাদ যোগ্য জমি এখনও পানিতে তলিয়ে রয়েছে। তাছাড়া প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে আবাদযোগ্য জমিতেও শাকসবজির চাষ অনেকটা ব্যাহত হয়েছে। শুধু উঁচু জমিগুলোতে কিছুটা আবাদ হলেও নেহায়েত একেবারে প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য বলে মনে হয়। এসব শাকসবজি বাজারজাত হলেও চাহিদা ও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আশা করা হচ্ছে এ সংকট কাটিয়ে ঊঠার পরপরই শাকসবজির দাম আবার স্বাভাবিক এবং সহনীয় অবস্থায় ফিরে আসবে। আশা করা হচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে এ সংকট বাংলার মানুষ কাটিয়ে ঊঠতে পারবে ইনশাল্লাহ।
তবে শাক্সবজি উৎপাদনকারি বা চাষীদের অনেকেই বেশি দাম হওয়াতে বেশ খুশি। তাদের মনে প্রতি মওসূমে শাকসবজি বা অন্য ফসল উৎপাদন করে আশানুরূপ দাম পাওয়া যায়নি অতীতে। তবে এতটা দাম বৃদ্ধি পাবে সেটাও তারা আশা করেনি। তাদের মতে একদিকে বন্যা অন্যদিকে বর্ষায় অনেকটা সময় তারা আবাদ করতে পারেনি। সে ক্ষতির অনেকাংশে এবার তারা পুশিয়ে নিতে পারবে বলে তাদের বিশ্বাস। অন্যান্য বছরগুলোতে বীজ, সার, কীটনাশক ওষুধের দাম খুব চড়া থাকায় কৃষকরা আশাব্যঞ্জক লাভ করতে পারেনি। বর্তমান সরকারের কাছে তাদের দাবি কৃষি উপকরণসমূহের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। তাহলে শাকসবজির দামও নিম্ন পর্যায়ে থাকবে। বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম কমিয়ে দিতে হবে আর তানা হলে এ শ্রেণির কৃষকদের ভূর্তকী দেয়ার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। দেশের কোন মানুষকে যেন আর ১০০ টাকা কেজি দরে বেগুন, ৭০-৮০ টাকা দরে পটল, ৯০-১০০ টাকা দিয়ে লাউ, ৪০০ টাকা কেজি কাঁচা মরিচ আর ১৮০-২০০টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনে খেতে না হয়। এবার স্মরণকালের সবজির দাম দেশবাসিকে অবাক করেছে।শুধু তাই চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।
অয়থা সাধারণ ক্ষুদ্র সবজি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা হামলা করে ভয় দেখিয়ে পণ্যের দাম কতটুকু কমানো যাবে তা সবাইকে ভাবতে হবে। তারা গরীব, তাদেরকে অযথা হয়রানি করে জীবন দুর্বিসহ করে তুলবেন না। কেননা ব্যবসা বাণিজ্য করে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে, অধিকার হরণ করবেন না বাজার নিয়ন্ত্রণের নামে। তবে কারা দাম বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করছে তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে, ভাঙ্গতে হবে সিন্ডিকেট। আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে তেমন ফায়দা হবে বলে মনে হয় না। এমন তো হতে পারে তারা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছে।ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পেটে লাথ্থি মারার কোন যৌক্তিকতা নেই । তবে আলু এবং ডিম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে সচেতন মহলের অনেকেই মত দিয়েছেন। শুধু ডিম, আলু, চাল, ডাল, তেল নয় সকল সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে পারলে আর যায়হোক সাধারণ মানুষ একটু ভাল ধাকবে, ভাল খাবে, ভাল ঘুমাবে। আমরা এমনই আশা করছি। আর এজন্য সরকার তথা প্রশাসনকে আরো কঠোর, সচেতন এবং তৎপর হতে হবে।#