আবুল কালাম আজাদ………………………………………………………….
এটিএন নিউজে লাইভ চলাকালীন দুই সাংবাদিককে পেটানোর মামলায় কারাগার থেকে গত সোমবার জামিনে মুক্ত হন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) বরখাস্ত হওয়া ভাণ্ডাররক্ষক মো. জীবন। এর পর ওইদিন কার ফটকেই তাঁকে বিএমডিএ’র কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী গলায় ফুলের মালা পরিয়ে শুভেচ্ছা জানান। আজ জীবন মঙ্গলবার রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলার অন্তত ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জোর করে নিয়ে এসে মামলার প্রতিবাদে কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিএমডিএ ভবনে।
এ সময় রাজশাহীর সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া একজন কর্মচারীর এই ধরণের ঘটনার পর রাজশাহীর সাংবাদিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এঘটনার প্রতিবাদে বুধবার রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
বিএমডিএ’র একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, বরখাস্ত হওয়া ভান্ডাররক্ষক জীবনের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল সকাল নয়টার দিকে শুরু হয় বিএমডিএ’র প্রধান কার্যালয় চত্তরে। মিছিলটি ভবনের বিভিন্ন চত্তর পরিদর্শন করে প্রধান ফটকের সামনে এসে থামে। এরপর সেখানে সমাবেশ করা হয়। এ সময় রাজশাহীর সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন জীবনসহ এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কয়েকজন।
এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কয়েকজন কর্মচারী বলেন, ‘ভান্ডাররক্ষক জীবন মোবাইল ফোনে কল করে চার জেলার প্রত্যেক জোন থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মঙ্গলবার সকাল নয়টার মধ্যে প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলেন। এর পর কিছু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী বাধ্য হয়ে ওই কর্মসূচিতে যোগ দেন। কারণ; জীবন নির্বাহী পরিচালকের একান্ত কাছের লোক হিসেবে পরিচিত। তাই তার জন্য মিছিল করতে চার জেলার বিভিন্ন জোন থেকে প্রধান কার্যালয়ে এসে প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেন সবমিলিয়ে শ’দুয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারী। পরে তারা বিএমডিএ কার্যালয়ে ভুরিভোজেও অংশ নেন।
সূত্র মতে, বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশের পর জীবন তাঁর দল-বল নিয়ে বিএমডিএর চেয়ারম্যান আখতার জাহান ও নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদও দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার এক নম্বর আসামি। তিনি গত কয়েকদিন আগে জামিন নেন আদালত থেকে।
এদিকে গতকাল বিএমডিএ কার্যালয়ে মিছিল থেকে সাংবাদিকদের গালিগালাজ ও মারপিটের হুমকি দেওয়ার বিষয়ে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিএমডিএ প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এ কারণে সেখানে সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেই অংশ হিসেবে এটিএন নিউজের দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা করা হয়েছে। আবার সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত জীবনসহ অন্যদের গ্রেপ্তার এবং অফিস সময়ে কাজ ফেলে বিক্ষোভ মিছিলকারীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর বিএমডিএ কার্যালয়ের সামনে সরাসরি সম্প্রচারের সময় হামলায় আহত হন এটিএন নিউজের রাজশাহী প্রতিনিধি বুলবুল হাবিব ও ক্যামেরাপার্সন রুবেল ইসলাম। এ ঘটনায় বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদকে প্রধান আসামি করে থানায় মামলা করেন বুলবুল হাবিব। এ মামলায় গ্রেপ্তার দুজনই জামিন পেলেন। এছাড়া সম্প্রতি আদালতে হাজির হয়ে নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদও জামিন নিয়েছেন।#