বিশেষ প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায় ভয়ভীতি দেখায়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে নেওয়ার অভিযোগে প্রতিষ্টান প্রধানের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডাইরি (যার ডাইরি নম্বর ১১৯৬)সহ উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভ’ক্তভোগী শিক্ষক। এ ছাড়াও রোববার(২৭ জুলাই) রাজশাহী জেলা প্রশাসক,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। উপজেলার বাউসা ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট অ্যান্ড বি.এম কলেজের শিক্ষক বিপুল কুমারকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হুমকি-ধামকিসহ অশ্লিল কথা বার্তা বলে মারধর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে নেওয়ার অভিযোগে প্রতিষ্ঠান প্রধান রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠান প্রধান রেজাউল করিম। শিক্ষক বিপুল কুমারের দাবি ধান বীজ এনে না দেওয়ার কারণে তাকে মারধর করে পদত্যাপত্রে স্বাক্ষর করে নেওয়া হয়েছে। বিপুল কুমার ওই প্রতিষ্ঠানের এগ্রোবেসড ফুট বিষয়ে ট্রেড ইন্সট্রাক্টর( শিক্ষক)পদে কর্মরত। তিনি নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার চংধুপইল ইউনিয়নের দেলুয়া গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র সরকারের ছেলে।
২০০৫ সালে যোগদান করে বাউসা ভোকেশনাল ইন্সটিটিউটে করে বর্তমানে আছেন। বাউসা ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট অ্যান্ড বি.এম কলেজের সুপারিনটেনডেন্ট রেজাউল করিম উপজেলার বাউসা পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আয়েজ উদ্দিনের ছেলে ও বাউসা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বলে জানা গেছে।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়,গত ২৮ জুন সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান রেজাউল করিম মুঠোফোনে শিক্ষক বিপুল কুমারকে বলেন, তিনি ১৫ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করবেন। এজন্য ১৬ হাজার ১৯ জাতের ৩০ কেজি ধান বীজ লাগবে। সেই ধান যেন তার এলাকা থেকে পরের দিন ( ২৯/০৬/২০২৫) সকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসেন। কিন্ত বাগাতিপাড়া বাজারে গিয়ে ধানের সন্ধান করেও ওই জাতের ৩০ কেজি ধান পাননি। পরে ৬০০ (ছয়শত) টাকা কেজি দরে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে অর্ডার করে মোবাইল ফোনে প্রধান শিক্ষককে জানিয়ে বাড়ীতে চলে আসেন বিপুল কুমার। ৩০ জুন প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পর প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম তাকে দেখে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন, বাগাতিপাড়া বীজ পাওয়া যায়নি, তুই রাজশাহী যাবি না হয় নাটোর যাবি, তোর কাজ তো এটাই। তুই কীভাবে চাকুরি করিস আমি দেখে নেব।
বিপুল কুমার ক্ষমা চেয়ে বীজ এনে দেওয়ার কথা বলে অফিস শেষে বাড়িতে চলে যান। বিপুল কুমার জানান, ১৭ জুলাই তিনি প্রতিষ্ঠানে যান। সকাল ১১টায় স্টাফ মিটিং কল করেন প্রধান শিক্ষক। সেখানে প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিমসহ সকল শিক্ষক কর্মচারীগণ মিটিং এ উপস্থিত ছিলেন। বিপুল কুমার তার সাধারণ ডাইরিতে উল্লেখ করেছেন,কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ও নোটিশ ছাড়াই প্রতিষ্ঠানের প্রধান তাকে বলেন, জীবন দিবি না পদত্যাগপত্র দিবে বলে আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং আমাকে দিয়ে জোর করে পদত্যাগপত্র লিখিয়ে নিয়ে স্বাক্ষর করে নেয়।এতে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও পরিবারের সদস্যগণ তাকে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
ঘটনার পর থেকে প্রতিষ্ঠানের প্রধান রেজাউল করিম বিভিন্ন ভাবে তাকে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে আসছে। ভবিষ্যতে তার আরও বড় ধরনের ক্ষতি করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি তার। বিষয়টি নিয়ে ২২ জুলাই বাঘা থানায় সাধারণ ডাইরিসহ উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি শাম্মী আক্তারের নিকটও অভিযোগ করেছেন শিক্ষক বিপুল কুমার। উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তার নিকট করা অভিযোগে ঘটনার দিন ৩টা ২০মিনিটে নতুন করে টিপসহি নেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন বিপুল কুমার।
এছাড়াও মারধরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পর তাকে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক রুহুল আমিনকে ডেকে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন। রুহুল আমিন প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলেছেন। পরে নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। বিপুল কুমার জানান, রোববার(২৭ জুলাই) রাজশাহী জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এর আগে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ ও থানায় সাধারণ ডাইরি করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে প্রতিষ্ঠান প্রধানের জাল সনদের অভিযোগে বেতন বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহের বিষয়ে বিপুল কুমারসহ কয়েকজন শিক্ষককে দোষারুপ করা হয়। তার ভয়ে অন্য শিক্ষকরা মুখ খুলতে পারেনা। অভিযোগ অস্বীকার করে রেজাউল করিম বলেন, কয়েকজন শিক্ষকের উপস্থিতিতে স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন শিক্ষক বিপুল কুমার। কেউ যদি জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার কথা বলে থাকে,তাহলে মিথ্যা বলেছে বলে দাবি তার।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আ ফ ম আছাদুজ্জামান বলেন, বিপুল কুমারের সাধারণ ডাইরি সংক্রান্ত বিষয়ে থানার সহকারি পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) সিফাত রেজাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সিফাত রেজা জানান, জিডি তদন্তের জন্য রোববার (২৭ জুলাই) আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালতের অনুমতি পেলে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি শাম্মী আক্তার বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#