বাকেরগঞ্জ প্রতিনিধি: অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,সমন্বয়হীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা বর্জন করেছেন ১২ ইউপি চেয়ারম্যান। এদিন উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মল্লিক ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান জাহানারা বেগমও অনুপস্থিত ছিলেন।
বিভিন্ন ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যানরা অভিযোগ করে জানান, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।কিন্তু নব-নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিব আহম্মদ তালুকদার তাদের সাথে কোন ধরনের আলোচনা ও সমন্বয় না করেই রবিবার (৯ জুন) এককভাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন আর এই কারনেই মাসিক সভা সহ উপজেলা প্রশাসনের সকল কাজ বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন ইউপি চেয়ারম্যানরা।
সোমবার (১০ জুন) সকালে সরেজমিনে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে গিয়ে দেখা যায়,সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কোরাম সংকটের কারণে মাসিক সভা হয়নি।বেলা ১২টায় উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিব আহম্মদ তালুকদারের সাথে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের পরিচিতি হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের সঞ্চালনায় পরিচিতি সভা দুপুর ২ টার দিকে শেষ হয়। উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র লোকমান ডাকুয়া, গারুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম কাইয়ুম খান, কলসকাঠীর ফয়সাল ওয়াহিদ তালুকদার মুন্না,বাকেরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুনিতি কুমার সাহা, উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান প্রমূখ।
এ প্রসঙ্গে দাঁড়িয়াল ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হাওলাদারের নিকট তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ করে জানান, নব-নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে কোন ধরনের আলাপ-আলোচনা ও সমন্বয় না করেই রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সেই দায়িত্বভার গ্রহন অনুষ্ঠানে সমন্বয়হীনতার অভিযোগে তিনিসহ উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের ১২ জন চেয়ারম্যান যথাক্রমে রঙ্গশ্রী ইউপি চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন সিকদার,ভরপাশা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আশরাফুজ্জামান খান খোকন,পাদ্রীশিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল হাসান বাবু,চরামদ্দি ইউপি চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন খোকন,দুধল ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোর্শেদ উজ্জল,দুর্গাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ তালুকদার,ফরিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান এস এম শফিকুর রহমান,কবাই ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল হক বাদল তালুকদার,নলুয়া ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম খান, চরাদি ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন ও নিয়ামতি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হুমায়ুন কবির উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা বর্জন করেছেন ও তাদের সাথে একাত্বতা পোষণ করে উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুস সালাম মল্লিক ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান জাহানারা বেগমও অনুপস্থিত ছিলেন। গত ৯ জুন নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ রাজিব আহম্মেদ তালুকদারের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মেজর জেনারেল (অবঃ) আবদুল হাফিজ মল্লিক এমপির বিরুদ্ধে পৌর মেয়র লোকমান ডাকুয়ার মিথ্যা,বানোয়াট,ভিত্তিহীন ও মনগড়া বক্তব্য প্রদানের জন্য তীব্র প্রতিবাদ জানায়।রঙ্গশ্রী ইউপি চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন সিকদার বলেন, উপজেলা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা। তাদেরকে না জানিয়ে সমন্বয় ছাড়াই নব-নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন,কোরাম সংকটের কারণে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা হয়নি। নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের পরিচিতি সভা হয়েছে। এমনকি কোরাম সংকটের কারণে মাসিক সভা হয়নি বলে উপজেলা পরিষদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। সভায় ১৮ জন সদস্যের মাত্র চার জন উপস্থিত ছিলেন। সভায় অধিকাংশ ইউপি চেয়ারম্যান অনুপস্থিত ছিলেন এটা সত্য। তবে কি কারণে দুইজন ভাইস-চেয়ারম্যানসহ ১২ জন ইউপি চেয়ারম্যান অনুপস্থিত ছিলেন সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিব আহম্মদ তালুকদার বলেন, জনপ্রতিনিধিদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া দরকার এবং উক্ত মাসিক সভায় ইউপি চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। নিজেদের মধ্যে কোন ভুল বোঝাবুঝি হলে,সেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। তাই স্মার্ট বাকেরগঞ্জ উপজেলা বিনির্মাণের লক্ষে্য আমাদের সকলকে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে দায়িত্বশীল হয়ে সভা বর্জন না করে সহনশীল থেকে আগামী মাসিক সভায় তারা উপস্থিত থাকবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।#