ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় নকল সোনার পুতুল ও রুপার মুদ্রা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে আটকের ঘটনায় চাঞ্চল্য তথ্য বেড়িয়ে এসেছে। ওই থানার ওসি আরশেদুল হক ও এসআই শহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে আটককৃত ব্যাক্তিদের কাছে থাকা ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করাসহ ক্রেতাদের বানানো হয় প্রতারক।
এ ঘটনার বিষয়ে তথ্য সরবরাহকারী আকাশ নামে এক ব্যাক্তির সাথে এসআই শহিদুল ইসলামের কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হওয়ার বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। যা এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। আইনের কর্তা ব্যাক্তিদের এমন কার্যক্রমে হতাশ সবাই। ফলে আইনের প্রতি আস্তা হারানোর শংকা রয়েছে। ঘটনার চার দিন পর বেড়িয়ে আসে আসল রহস্য। একটি কল রেকর্ডের মাধ্যমে জানা যায় কিভাবে পুতুলকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে পুতুলকাণ্ডের ঘটনার কল রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়ে। যা মুহূর্তেই নেট দুনিয়ায় ঝড় ওঠে। নেটিজেনদের কটু মন্তব্যে ভাড়ী হয়ে ওঠে সামাজিক মাধ্যম। অডিও কলে ওই ঘটনার তথ্য সরবরাহকারি আকাশ ও রাণীশংকৈল থানার এস আই শহিদুল ইসলামকে বলতে শোনা যায়। আকাশ-আমি আগে থেকেই জানতাম যাদের আটক করে জেলো দিয়েছেন তারা ক্রেতা হিসেবে না বুঝে নকল সোনা কিনতে এসে ছিল। তাদের কোন দোষ নেই। তাদের কাছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিল। আমার সাথে আপনাদের (পুলিশের সাথে) কন্ট্রাক হয় তাদের ধরিয়ে দিলে লাখে ত্রিশ হাজার টাকা দিবেন। কেন দিলেন না।
পুলিশের এস আই শহিদুল ইসলাম উত্তরের বলেন, স্যার (ওসি) সাহেব আমাকে নম্বর দিয়ে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে বলেছেন আপনি না আসলে লোক পাঠাবেন তাও পাঠান নি। কাউকে পাঠান। আকাশ: আপনারা কনফ্রাম না করলে বা না ডাকলে কিভাবে পাঠাবো। তাদের কাছে ৬ লাখ ৮০। শহিদুল: না তাদের কাছে এতো টাকা ছিল না। পাওয়া গেছে ৩ লাখ। ওই টাকাও তাদের ফেরত দেয়া হয়েছে। তখন খুশি হয়ে স্যারকে ৫০ হাজার টাকা দেয় তারা। আকাশ: তারা কেউ টাকা ফেরত পায়নি। তারা সবাইতো জেলে। আর কাকে টাকা ফেরত দিলেন তা আমি দেখবো কেন সোর্সের সাথে যা কন্ট্রাক হয়েছে তা দিয়ে দিবেন। আর তারা তো নিরপরাধ মানুষ ছিল। তারা কিনতে আসছিল। শহিদুল: তারা সত্যি নির্দোষ ছিল। বড় স্যারও বলেছিল তাই তাদের মামলা দেয়া হলো। তবে ওসি স্যার সীদ্ধান্ত নিয়েছে কি করার। আর তাদের যে টাকা ফেরত দিয়েছে ওখানে সাংবাদিকরাও ছিল। আমিও আগে থেকে জানতাম এই ব্যবসা চলে সেখানে। যাক আপনি লোক পাঠান।
এর বাইরেও অর্থ লেনদেনসহ নানা বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায় অডিওতে। তবে অডিও পোস্টের কমেন্টে নেটিজনরা লিখেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলেও তার রেখে যাওয়া দোসররা এখনো বহাল তবিতে রয়েছে বিভিন্ন থানায়। তারা ৫ আগস্টের পর থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষদের জিম্মি করছে। ১৩ মিনিট ৪২ সেকেণ্ডের একটি ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড এর মাধ্যমে স্পষ্ট, পুলিশের অভিযানে যারা আটক হয়েছিল তারা নির্দোষ। তাদের ক্রেতা থেকে প্রতারক সাজিয়ে মিথ্যা মামালা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর এর পেছনে রাণীশংকৈল থানার ওসিসহ পুলিশের কিছু পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে।অবিলম্বে ওই থানার ওসি আরশেদুল হকসহ জড়িতদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে উর্ধতনদের প্রতি অনুরোধ জানান তারা।
থানার এস আই শহিদুল ইসলাম কল রেকর্ডের কথা স্বীকার করে বলেন, ওসি সাহেবের নির্দেশেই আকাশের সাথে কথা হয়। এখানে আমার কোন দোষ নেই।
এ বিষয়ে রাণীশংকৈল থানার সার্কেল (এসপি) শ্নেহাষীশ কুমার দাস জানান, বিষয়টি অবগত হয়েছি। তদন্ত করে পুলিশ সুপারের নির্দেশে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আর ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনার বিষয়টি নজরে এসেছে, তদন্ত করা হচ্ছে। এর সাথে জড়িত থাকলে ছাড় নয় তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ওই উপজেলায় নকল সোনার পুতুল ও রুপার মুদ্রা দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার (০১ সেপ্টেম্বর) প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সোনালি রঙের মূর্তি, পুরোনো নকশার রুপার মুদ্রা ও নগদ টাকাসহ আসামীদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরশেদুল হক।#