বিশেষ প্রতিনিধি…………………………………………………………..
স্বামীর মৃত্যুর পর ১৫ বছর ধরে আড়ানি স্টেশন এলাকায় হোটেল খুলে ব্যবসা করছিলেন ৬৫ বছর বয়সী বুলু বেওয়া। হোটেলের সঙ্গে চায়ের দোকানও করেছেন। এই ব্যবসা চালিয়ে সন্তানদের মানুষ করেছেন। সন্তানদের কেউ কেউ মায়ের সঙ্গে হোটেলে কাজ করেন। আড়ানি স্টেশনের ৩ নম্বর লাইন দিয়ে সকালে ট্রেন যায়না জেনে ৪ বছর বয়সের নাতনিকে সাথে নিয়ে স্টেশনের ৩ নম্বর লাইন পার হয়ে স্টেশন এলাকার সেই হোটেলে যাচ্ছিলেন বুলু বেওয়া। এসময় ওই লাইনে ঢুকে পড়া ট্রেনের ধাক্কায় নীচে পড়ে দুই পা কাটা পড়ে তার। আহত হয় ৪ বছরের শিশু রাবিয়া খাতুন। শনিবার (২৭-০১-২০২৪) সকালে বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলওয়ে স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।
৮সন্তানের জননী বুলু বেওয়া আড়ানী নুরনগর গ্রামের মৃত রব্বেল আলীর স্ত্রী। তার স্বামী রব্বেল আলী আড়ানি স্টেশনে কুলির কাজ করতেন। পারিবারিক ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ২০ বছর আগে বুলু বেওয়ার স্বামী রব্বেল আলী মারা যান। ১৫ বছর ধরে আড়ানী স্টেশন এলাকায় খাবার হোটেল খুলে ব্যবসা করছিলেন। হোটেলের সঙ্গে চায়ের দোকানও করেছেন।
শনিবার সন্ধ্যার আগে কথা হলে বুলু বেওয়ার ছেলে জুয়েল রানা জানান, আশংকাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। জরুরি বিভাগের অপারেশন থিয়েটরে দু’ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাঁর মায়ের অস্ত্রোপচারের পর নিবির পরিচর্যায় আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার আগে রাবিয়া খাতুনকেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জুয়েল রানা জানান, দীর্ঘদিন স্টেশন এলাকায় ব্যবসা করার সুবাদে তার মা জানেন, সচারচার ৩ নম্বর লাইন দিয়ে কোন ট্রেন চলাচল করেনা। তাই নাতনিকে সাথে নিয়ে ৩ নম্বর লাইন পার হয়ে স্টেশন এলাকার হোটেলে যাচ্ছিলেন। এসময় ওই লাইনে ঢুকে পড়া ট্রেনের ধাক্কায় নীচে পড়ে মাজার নীচ থেকে দুই পা কাটা পড়ে। আহত হয় ৪ বছরের রাবিয়া খাতুন।
তিনি জানান, শুক্রবার তার ছোট ভাই রুবেল আলীর বিয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার বাড়িতে বৌ ভাতের ছোট আয়োজন ছিল। দুর্ঘটনার কারণে সেই আনন্দ বিষাদে পরিনত হলো। আড়ানি স্টেশনে সকালে তিন নম্বর লাইনে কোনো ট্রেন যায় না। ব্যতিক্রম বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে আড়ানি স্টেশনমাস্টার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রতিদিন সাড়ে সাতটার মধ্যে রাজশাহী ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আড়ানি স্টেশনে আসে।
শনিবার সকালে রাজশাহী থেকে আসতে দেরি করে। বিলম্বের কারণে তাঁদের বার্তা দেওয়া হয়েছিল, রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে আড়ানিতে রেখে বনলতাকে পার করে দিতে হবে। একই সময়ে ঈশ্বরদী থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহী গামী কমিউটার ট্রেনটি আড়ানি স্টেশনে পৌঁছানোর সিগন্যাল পায়। যার জন্য সিল্কসিটিকে এক নম্বরে, বনলতার জন্য দুই নম্বর ফাঁকা রেখে কমিউটারকে তিন নম্বরে নেওয়া হয়। সাধারণত তিন নম্বরে এই ট্রেন যায় না। এই জন্য সকালে কয়েক দফা মাইকে বলা হয়েছে যে কমিউটার ট্রেনটি তিন নম্বর লাইনে ঢুকছে।
স্টেশনমাস্টার মোশাররফ হোসেন বলেন, বুলুকে খুব ভালো করেই চেনেন তিনি। শুক্রবার বুলুর এক ছেলের বিয়ে ছিল। এই জন্য সকালে ভাতের হোটেল খোলেননি। শনিবার হয়তো অন্য কোনো কাজে স্টেশনে এসেছিলেন। ঘটনাটি স্টেশন থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ১০০ হাত দূরে ঘটেছে। কমিউটার ট্রেনটি স্টেশনে পৌঁছানোর মুহূর্তে অসাবধনতায় রেললাইন পারাপার হওয়ার সময় নুরনগর গ্রামের ওই নারী ট্রেনে কাটা পড়ে দু’ পা হারান বলে জানতে পেরেছেন।#