# চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি……………………………………………
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় আইসক্রিম এবং বিভিন্ন ধরণের কোল্ড ড্রিংকস অবাধে তৈরী হচ্ছে এবং বাজারজাতও হচ্ছে।অথচ এসব কারখানার কোন বৈধ লাইসেন্স নেই। এ সব কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের উপাদান ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন নামে আইসক্রিম ও পেপসি।
যে সব উপাদান এসব আইসক্রিম বা পেপসিতে ব্যবহার করা হয় তা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশুদের অস্থিমজ্জার ক্ষতি হতে পারে বেশি। এ থেকে ব্লাড ক্যানসার, কিডনি ও লিভারের ক্ষতি হতে পারে। শিশুদের মানসিক বিকাশে এ ধরণের রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে ব্যাপক। এসব অবৈধ কারবার করে কারখানার মালিকরা অল্প দিনেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেলেও প্রশাসন অথবা সংশ্লিষ্ট দপ্তর এদিকে এতটুকু নজর দিচ্ছে না, কিন্তু কেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলার দাদনচক হাটখোলা বাজারে অধিকাংশ কারখানার মাত্র ২০ থেকে ২৫ ফুটের একটি টিনসেড রুম। রুমের মধ্যে ভেজা এবং স্যাঁতসেঁতে নোংরা। যার একপাশে শীতলীকরণ যন্ত্রে তৈরি হচ্ছে আইসক্রিম,আইসবার আর বাকী পাশে পেপসি তৈরির মেশিন, ঘনচিনি, স্যাকারিন, খাওয়ার অনুপযোগী রঙ, অ্যারারুট, সুইটিক্স ও ফ্লেভার রয়েছে। তাও রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে উৎপাদিত আইসবার, আইসক্রিম ও পেপসিগুলো দৃষ্টিনন্দন করতে ব্যবহৃত হয় অন্য কোনো নাম করা কোম্পানির মোড়ক। যার মধ্যে নরসিংদীর কিরণমালা, কিরণমালা কুলফি, নোয়াখালীর ইত্যাদি কোয়ালিটি আইসক্রিম, ক্যাটবেরী, স্পেশাল চকবার, অরেঞ্জ লোলি অন্যমত।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরের বিভিন্ন মার্কেটে এ ধরণের মোড়ক অনায়াসে কিনতে পাওয়া যায়। মোড়কের গায়ে রয়েছে উৎপাদিত পণ্যের উপকরণের নাম। যার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি কারখানাগুলোতে। মোড়কের গায়ে উৎপাদিত পণ্যের মেয়াদ ও মূল্য নেই। দেশের বিভিন্ন স্থানের নামীদামী কোম্পানির নামের দৃষ্টিনন্দন মোড়কের জালে আটকে যাচ্ছে নানা বয়সী মানুষ। উপজেলায় ইতোমধ্যে অনেক আইসক্রিম কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেছে। তারপরও বন্ধ হয়নি সে সব কারখানা।
শিবগঞ্জ উপজেলার দাদনচক হাটখোলা বাজার সংলগ্ন বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেমন স্কুল, মাদ্রাসা, কেজি স্কুল ও কলেজ। আর এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যখানে রয়েছে দাদনচক হাটখোলা বাজার। আর এই বাজারেই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধভাবে তিনটি বিভিন্ন ধরণের আইসক্রিম ও পেপসির কারখানা। তবে এ কারখানাগুলোর নিজস্ব কোনো নাম নেই। সকলেই চলে বাজার থেকে কিনে আনা মোড়কের ওপর নির্ভর করে।
দাদনচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে ছেলে মেয়েরা আইসক্রিম বা পেপসি কিনে খাচ্ছে। ওরাতো বাচ্চা। বাড়িতে ফিরতেই পেটে সমস্যা হয়। অনেক সময়ই সেই বাচ্চাদের পেটের সমস্যার কারণে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। আইসক্রিমগুলোর যে রঙ তা হাতে লাগলে সহজে উঠতে চায় না। এমন কি ব্যবহার করে আইসক্রিমে যা খেয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
এই উপজেলায় অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা থাকেন কিন্তু কেউ কোনো উদ্যোগ নেয় না। এলাকার রফিকুল ইসলাম জানান, এ ধরণের অবৈধভাবে গড়ে উঠা আইসক্রিম ও পেপসি কারখানাগুলি বন্ধ করে দেয়া উচিত। এরা যে ধরণের কেমিক্যাল ব্যবহার করে তা যদি কেউ জানে এবং দেখে তাহলে আর কোনোদিন এই ধরণের আইসক্রিম বা পেপসি খাওয়া তো দুরের কথা হাতে ছুঁয়ে ও দেখবে না। মোবাইল কোর্টে শুধুমাত্র জরিমানা করলে হবে না। এ ধরণের কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হবে।
দাদনচক হাটখোলা বাজার এলাকার হেলাল সুপার আইসক্রিম এর স্বত্বাধিকারী হেলাল জানান, আমরা মফস্বল এলাকায় পেপসি, আইসক্রিম তৈরি করি। আমরা এই বাজারে তিন ভাই তিনটি কারখানা দিয়ে সবাই একই ব্যবসা করছি। আজ ১৩ বছর ধরে আমাদের এই ব্যবসা চলছে। আমার বা আমার ভাইদের আইসক্রিম কারখানার বিএসটিআই’র অনুমোদন নেই, ট্রেডলাইসেন্স ও নেই। এগুলো নিয়ে কোন দিন কেউ কিছুই বলেনি। তাই কোন ধরণের কাগজপত্র করা হয়নি। আমরা সবাই একই রকম রঙ এবং ফ্লেভার ব্যবহার করি। আর সকল ধরণের আইসক্রিম বা পেপসির মোড়ক, কাঠি, ফ্লেভারসহ সকল উপাদান জেলা সদরের বাজারে পাওয়া যায়।
নোংরা পরিবেশ এবং ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করে তৈরি আইসক্রিম স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে জানান শিশু ডাক্তার মোঃ মাহফুজ রাইহান। তিনি জানান, যেসব উপাদান এসব আইসক্রিমে ব্যবহার করা হয় তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশুদের অস্থিমজ্জার ক্ষতি হতে পারে। এ থেকে ব্লাড ক্যানসার, কিডনি ও লিভারের ক্ষতি হতে পারে। শিশুদের মানসিক বিকাশে এ ধরণের রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে ব্যাপক। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরী বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন, জ্ঞাণী অভিজ্ঞমহল।#