মোঃ আলফাত হোসেন
বেড়িবাঁধ ধসে সরু হয়ে যাওয়ায় নদীর পানি বেড়ে লোকালয় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা
বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমে,উপকূলবাসীর কাছে মে মাস আতঙ্ক,প্রতিবছর এই মাসের শেষে সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়ে আইলা, ফণী, ইয়াস ও আম্পানের মতো প্রলয়ংকরী সব ঘূর্ণিঝড়। দুর্যোগ মৌসুম শুরু হলেই ভাঙন ধরে সুন্দরবন–সংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর, আশাশুনি, কালীগঞ্জের বিভিন্ন বেড়িবাঁধে। প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। ইতিমধ্যে, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাঁচ নম্বর পোল্ডারের আওতাভুক্ত সিংহড়তলী অংশের উপকুল রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দেয় নদের বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ধস দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন উপকূলের লক্ষ লক্ষ বাসিন্দা।কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী রায়মঙ্গল-কালিন্দী নদীসহ খুলনা, বরিশাল এবং চট্টগ্রাম বিভাগের মোট ১৯টি জেলা নিয়ে এদেশের উপকূলীয় অঞ্চল। যেখানে দেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী বসবাস করে।
সাতক্ষীরা উপকূলের বাসিন্দারা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের বিষয়টি জনপ্রতিনিধিদের জানালেও তাঁরা শুধু আশ্বাস দেন। বাঁধ মেরামতে কেউ উদ্যোগ নেন না। বর্ষায় যখন জোয়ারের পানি বাঁধ উপচে পড়ার উপক্রম হয়,তখন মেরামতে উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। এতে একদিকে কাজের ব্যয় বাড়ে, অন্যদিকে কাজ হয় নিম্নমানের। প্রায় সময় বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। জনপ্রতিনিধিদের দাবি, পরিকল্পিত ও স্থায়ী বাঁধ নির্মিত না হওয়ায় প্রতিবছর ভাঙন দেখা দেয়। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের গাফিলতিই দায়ী।
মানুষের প্রাণহানি আগের তুলনায় এখন অনেক কম, কিন্তু বাড়িঘর, ফসল, সম্পদের যে ক্ষতি হয় তা উদ্বেগজনক। বিশেষ করে উপকূল রক্ষার জন্য নির্মিত বেড়িবাঁধ বহু জায়গায় ভেঙে গেছে, এতে উপকূল অঞ্চলের হাজার হাজার গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছে, নোনাপানিতে ফসলের জমির ক্ষতি হয়েছে। হাজার হাজার চিংড়ির খামার, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
বাস্তহারা হয়েছে উপকূলে বসাবসকারী অনেকেই,এতে শুধু উপকূলবাসী মানুষের ক্ষতি হয়নি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের অর্থনীতি।
উপকূলে মানুষ ও সম্পদ রক্ষার লক্ষ্যে জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে বেড়িবাঁধ রয়েছে। প্রয়োজনীয় মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেড়িবাঁধ এখন জরাজীর্ণ ও দুর্বল। এই বেড়িবাঁধ যদি মজবুত হতো,তা হলে জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধ করতে পারত। সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিও হতো না, হলেও অনেক কম হতো। শুধু মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধের অভাবে লক্ষ লক্ষ শ্যামনগর উপকূলবাসী আজ সর্বস্বান্ত,অসহায়।
বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় নতুন কিছু নয়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় প্রতিবছর এ দেশের উপকূলে আঘাত হানে। সাগর থেকে আসা ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গী হয়ে আসে জলোচ্ছ্বাস। কখনো প্রবলবেগে, ভয়ঙ্কররূপে, কখনো অতটা নয়। জলোচ্ছ্বাসে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়, মানুষের প্রাণহানি হয়, গবাদিপশু ও ফসল বিনষ্ট হয়। জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষার জন্য তৈরি করা হয় বেড়িবাঁধ। বাংলাদেশের উপকূলে বেড়িবাঁধ তৈরির কাজ শুরু হয় ষাটের দশকে। সাতক্ষীরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত উপকূল ঘেঁষে নির্মিত এই বাঁধের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার।
দীর্ঘদিনের পুরনো এই বাঁধের অবস্থা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখন জরাজীর্ণ, বিশেষ করে সাতক্ষীরা ও খুলনার উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে।
বেড়িবাঁধসহ দেশের সব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সময়মতো সঠিকভাবে হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। সে কারণেই বেড়িবাঁধের এই দুরবস্থা। জরাজীর্ণ বাঁধ জলোচ্ছ্বাসের চাপ ঠেকাতে পারে না।
প্রতিবছরই ঘূর্ণিঝড়ের সময় উপকূলের মানুষ জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতীতে জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটত। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় দশ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় দেড় লাখ মানুষ মারা যান। এভাবে বারবার ঘূর্ণিঝড় আসে উপকূলে প্রকৃতির নিয়মে। ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে আসা জলোচ্ছ্বাস, তা দুর্বল বা শক্তিশালী যাই হোক না কেন, প্রথমেই আঘাত করে বেড়িবাঁধকে।
বেড়িবাঁধ নতুন অবস্থায় মজবুত ছিল, তাই জোয়ারের ধাক্কা সামলাতে পেরেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাঁধ ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে। পানির ধাক্কায় বাঁধ অনেক জায়গায় ভেঙে বা ক্ষয়ে যাচ্ছে।
সাতক্ষীরার উপকূলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলার,কলিন্দীনদীর তীরবর্তী কৈখালী আরবিজিবি সংলগ্ন,দক্ষিণ কৈখালী আদম গাজীর বাড়ি সংলগ্ন,পরানপুর,কাটামারী,নিদয়া গ্রাম, রমজাননগর ইউনিয়নের মাদার নদী তীরবর্তী সোরা স্লুইসগেট সংলগ্ন, সুন্দরবন কোঁল ঘেঁষে পাঁচ নদীর মোহনার তীরবর্তী গোলাখালী গ্রাম মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চুনকুড়ি নদীর তীরবর্তী সিংহড়তলী গ্রাম,আটুলিয়া ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর তীরবর্তী বড়কুপট, কাশিমারি ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর তীরবর্তী ঝাপালী গ্রাম ঘোলা গ্রাম।পদ্মপুকুর ইউনিয়নের কপোতক্ষ নদীর তীরবর্তী খুঁটিকাটা,পাতাখালী।
কালীগঞ্জ উপজেলার ইছামতী নদীর তীরবর্তী সাতপুকুর,ছুলপুর।আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন। ৩৩ দশমকি ৮৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ ইউনিয়নের লোকসংখ্যা ৩৬ হাজার ৫১৯। উপকূলীয় এ ইউনিয়নের তিন দিকে পাউবোর বেড়িবাঁধ দিয়ে ঘেরা। প্রতিবছর একাধিকবার বেড়িবাঁধ ভেঙে ইউনিয়নের কোনো না কোনো এলাকা তলিয়ে থাকে লবণপানিতে। মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই আবার বাঁধ ভাঙে।
২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় ঘরবাড়িহারা তিন শতাধিক পরিবার এখনো বাড়িঘরে ফিরতে পারেনি।আশাশুনির ঝুঁকিপূর্ণ বেঁরিবাঁধ প্রতাপনগর ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর তীরবর্তী শ্রীপুর কুড়িকাউনিয়া,আনুলিয়া ইউনিয়নের কপোতক্ষ নদীর তীরবর্তী বিছট গ্রাম।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,এসব এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীর পানি বাড়লে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশের শঙ্কা তৈরি হয়।
সাতক্ষীরা উপকূলীয় বেড়িবাঁধ কেন জরাজীর্ণ ও দুর্বল? কারণ একটাই। দীর্ঘকাল আগে নির্মিত বেড়িবাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত ঠিকমতো হয়নি বা একেবারেই হয়নি। এ কারণে ক্রমাগত জোয়ারের ধাক্কায় বাঁধ ক্ষয়ে গেছে, উচ্চতাও কমে গেছে। ফলে জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কায় বেড়িবাঁধের দুর্বল স্থান ভেঙে যায়। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা যদি বেশি হয়, তা হলে তা সহজেই বাঁধ উপচিয়ে লোকালয়ে বা ফসলের জমিতে চলে আসে।
বাঁধের দুর্বল অংশ মেরামতের প্রয়োজনীয়তা স্থানীয় জনগণ ঠিকই বুঝতে পারেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অফিসকে বলেন। কিন্তু কাজ হয় না, পাউবো কর্মকর্তাদের ঘুম ভাঙে না। এমনো দেখা যায়, পাউবোর লোক না আসায় স্থানীয় মানুষ নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে বাঁধের ফাটল বা ভাঙ্গা অংশ মেরামত করছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে মেরামত ঠিকমতো হয় না। জনগণ কোথায় পাবেন বালির বস্তা, জিও ব্যাগ, ইট, পাথর, সিমেন্ট ব্লক, বাঁশের খাঁচা ইত্যাদি। বাধ্য হয়ে জনগণ কোদাল দিয়ে মাটি কেটে, গাছের ডালপালা দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের চেষ্টা ফলপ্রসূ হয় না। জলোচ্ছ্বাসের পানি ঠিকই চলে আসে বাঁধ পেরিয়ে। জনগণের হতাশা ও ক্ষোভ বাড়তেই থাকে।
কেন পাউবো সময়মতো বেড়িবাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করে না? এর উত্তরও একটাই। পাউবো কর্মকর্তাদের কর্তব্যে অবহেলা এবং নজরদারির অভাব।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানাযায়, গত এক দশকে মে মাসে আটটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ৪ মে ঘূর্ণিঝড় ফণী, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান, ২০২১ সালের ২৬ মে ইয়াসে সুন্দরবন-সংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলার সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও খুলনার কয়রায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ছাড়া ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা, ২০১৬ সালের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরা ও ২০১৩ সালের ১৬ মে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আঘাত হানে।
প্রশ্ন হচ্ছে, উপকূলীয় এলাকা সুরক্ষা দিতে যে নদী-বাঁধ, তা দুর্বল ও নিচু হবে কেন? সাধারণভাবে বাঁধগুলোর উচ্চতা ১৫ ফুট হয়ে থাকে। জোয়ারের উচ্চতা ১২ ফুট হলেও সেই পানি বাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে আসার কথা নয়।
আর বাঁধ দুর্বল, কাটা-ছেঁড়া হলেই ভেঙে যায়। আরো একটি বিষয় তা হচ্ছে, বাঁধ যখন তৈরি করা হয়েছিল বা এখনো তৈরি করা হয়, নদীর পার থেকে বেশ খানিকটা ভূমি (বাফার জোন) রেখেই তৈরি করা হয়, যাতে নদীর জোয়ারের চাপ সরাসরি বাঁধের ওপর না পড়ে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, বর্তমানে সুন্দরবন উপকূলের বাঁধগুলোর গা ঘেঁষে নদীগুলো বয়ে চলেছে, এর প্রতিক্রিয়ায় নদীভাঙনের সরাসরি আঘাত পড়ছে বাঁধের ওপর। ফলে বাঁধ ভাঙছে।
বাঁধ দুর্বল, নিচু হওয়ার প্রধান কারণ, অপরিকল্পিত চিংড়ী চাষ যত্রতত্র বেঁরিবাঁধ ছিদ্র করা অন্যদিকে বাঁধ দীর্ঘদিন সংস্কার করা হয় না।
রমজাননগর ইউনিয়নের গোলাখালী সুন্দরবনের কুল ঘেঁষা এই গোলদীপ শেষ প্রান্তে পাঁচ নদীর তীরে বেড়িবাঁধে বসবাস করেন সেলিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর নদীতে বিলীন হয়ে যায় আমাদের ভিটামাটি। স্থায়ী মেরামত না হওয়ায় এখনো সেখানে জোয়ার ভাটা চলছে। তখন থেকে আমরা বেড়িবাঁধের পাশে একটি ঘর তৈরি করে বসবাস করছি।
তিনি আরও বলেন, ‘এখানেও শান্তিতে নেই,রাতে ঠিক মত ঘুম আসেনা, গেলো কয়েক বছরে ফণী, বুলবুল, আম্পানসহ একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশ্রয়স্থলটি।
আবার না জানি কখন নতুন ঝড় আসবে এতে আবারও ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কায় আছি। সেলিনার মতোই আতঙ্কে দিন পার করছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসরত হাজারো পরিবার। দুর্যোগ এলেই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন এখানকার মানুষ। দুর্বল বেড়িবাঁধ উদ্বেগের প্রধান কারণ। দুর্যোগে নদীতে জোয়ারের পানি বাড়লেই বারবার বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় লোকালয়। লবণ পানি ঢুকে বিপর্যস্ত হয় জীবনযাত্রা। নষ্ট হয়ে যায় খাবার পানির উৎসসহ, সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। তাই দুর্যোগে সবসময় বাঁধ ভেঙে প্লাবন আতঙ্কে দিন কাটান এখানকার মানুষ। এছাড়া উপকূলে বসবাসরত বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য নেই পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টারও।
সুন্দরবন ইয়ুথ ফ্রেন্ডশীপের সভাপতি মোঃ সোহেল রানা বলেন, ঘূর্ণিঝড় আইলার ক্ষত এখনো দগদগে। এতকাল যত দুর্যোগ এসেছে, অধিকাংশই মে মাসে।এ জন্য মে মাস এলেই আতঙ্কে থাকেন উপকূলবাসী। ঘূর্ণিঝড় না হলেও এর প্রভাবে নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়।
উপকূলে বসবাসকারী পরানপুর গ্রামের জব্বার গাজী(৭৫) ‘সময়ের কাজ সময়ে করলি আমাগে এত ভুগতি হয় না। গাঙের পানি যখন চরের নিচে থাকে, তখন কারও দেখা পাওয়া যায় না। গাঙের পানি যখন বাঁধের কানায় আইসে ঠেকে, তখন শুরু হয় মিয়া সাহেবগের তোড়জোড়।
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের চুনকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা মাজিদা বেগম (৪৫) বলেন, ‘ঝড় এলেই সবাই সাইক্লোন শেল্টারে যেতে বলে। কিন্তু বাড়িতে হাস, মুরগি, গরু, ছাগল ফেলে রেখে যেতে পারি না। অনেক সময় জীবন বাজি রেখে বাধ্য হয়ে বাড়িতে পড়ে থাকতে হয় ।
সাহেবখালী সিদ্দিক গাজী মাধ্যমিক শিক্ষক একে,এম আরিফ বিল্লাহ বলেন, আশার কথা হলো—দুর্যোগ প্রশমন এবং ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বে সমাদৃত; কিন্তু তা সত্ত্বেও বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের মতো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বয়ে আনা প্রাকৃতিক দুর্যোগের করাল গ্রাস থেকে এখনো মুক্তি মেলেনি উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর। দেশের অর্থনীতিতে উপকূলের অবদানকে যেহেতু এড়িয়ে চলার সুযোগ নেই; তাই দেশের এই প্রান্তিক, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমানের পরিবর্তনে শুধু দুর্যোগকালেই নয়, সারা বছরই সচেতন দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (শ্যামনগর পওর উপ-বিভাগ)মো: ইমরান সরদার জানান শ্যামনগরে সাড়ে আঠারো কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বেঁরিবাঁধ এর ভিতরে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনগর চুনকুড়ি নদীর বেঁরিবাঁধ সেখানে আমাদের কাজ চলমান, এছাড়া কৈখালী আর বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন প্রায় ১ কিলোমিটারের মত দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া ধসে যাওয়া ব্লক ও মাটির কাজের জন্য আমরা বিজিবি কর্তৃপক্ষ সাথে আলাপ আলোচনা করে কর্তৃপক্ষের কাছে যাতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় সেই প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি, এবং শৈলখালী পরানপুর কিছু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে আমাদের কাজের অনুমতি আছে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করব বলে আশাবাদী।
রমজাননগর ইউনিয়নের সোরা সুইচগেট সংলগ্ন আমাদের সংস্কার কাজ চলমান,আপাতত শ্যামনগরে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের তালিকা করা হয়েছে। কিছু এলাকায় সংস্কার কাজও শুরু হয়েছে। বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ না এলে কোনো সমস্যা হবে না। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গাবুরা ইউনিয়নে বেঁরিবাঁধের মেগা প্রকল্পের কাজ শেষের পথে তাই কোনোরকম ঝুঁকি নেই।#