লিয়াকত হোসেন : রাজশাহীতে সংবাদ প্রকাশের জেরে শাহমুখদুম থানার ওসি ও প্রতারক আক্তারুল ইসলামের যোগসাজশে ৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দেওয়া হয়েছে। ওই ছয় সাংবাদিক হলেন, রাজশাহীর আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আজিবার রহমান ও সিনিয়র ফটো সাংবাদিক ফায়সাল আহম্মেদ, আরটিভি’র ক্যামেরাম্যান আরিফুল হক রনি, কালের কণ্ঠের মাল্টিমিডিয়া প্রতিনিধি নাঈম হোসেন, গণমুক্তি পত্রিকার ব্যুরো প্রধান মাজহারুল ইসলাম, আজকের প্রত্যাশা পত্রিকার নাজমুল হক।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আরএমপি শাহমুখদুম থানা চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনায় সাংবাদিকদের ভুক্তভোগী না মেনে উল্টো এক সপ্তাহ পর প্রতারকের পক্ষে মামলা রেকর্ড করেছে পুলিশ। গত ২৬ আগস্ট অগ্রণী ব্যাংক রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) শাখায় একটি জমি নিলামকে কেন্দ্র করে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এসময় পেশাগত দায়িত্ব পালনে সেখানে পৌঁছান স্থানীয় সাংবাদিকরা। পরে কথিত পত্রিকার মালিক পরিচয় দেওয়া প্রতারক আক্তারের সঙ্গে সাংবাদিকদের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আক্তার একজন সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
সাংবাদিকরা এ ঘটনায় মামলা করতে চাইলে শাহমুখদুম থানার অফিসার ইনচার্জ মাছুমা মুস্তারী মামলা না নিয়ে কেবল একটি লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেন। এতে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তারা ধারাবাহিকভাবে প্রতারক আক্তারের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করতে থাকেন। পরে ওসি’র বিরুদ্ধে নানা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে প্রতারক আক্তারুল ইসলাম আক্তারকে বাদী করে চাঁদাবাজি মিথ্যা মামলা নেয় ওসি। সাংবাদিকদের দেওয়া অভিযোগে ওই প্রতারক আক্তারকে গ্রেফতার না করে পুলিশই তাকে দিয়ে উল্টো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করায়। গত ২ সেপ্টেম্বর ভাইরাল হওয়া সেই প্রতারক আক্তারের দায়ের করা মামলা (নম্বর-২/২০২৫) শাহমুখদুম থানায় রেকর্ড করেন ওসি মাছুমা মুস্তারী। মামলায় ৬ জন সাংবাদিকসহ একজন ঠিকাদারকে আসামি করা হয়েছে। ওসি ও প্রতারক আক্তারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের ৬ দিন পর এমন মামলায় রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকরা বিব্রত।
প্রতারক আক্তার অভিযোগ করেছেন, সাংবাদিকরা তার কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার চালানো হয়েছে। অথচ ঘটনার পূর্ণ ভিডিও প্রমাণ হিসেবে সবার কাছে রয়েছে, যা পুলিশও দেখেছে। সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার নেপথ্য ঘটনায় ওসি’র নানা অপকর্মের সংবাদ প্রকাশ।
দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ আরএমপিতে কর্মরত ওসি মাছুমা মুস্তারী। অনিয়ম দূর্নীতি, মামলাবানিজ্যসহ মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ আছে ওসির বিরুদ্ধে। সাংবাদিক সমাজের ক্ষোভ এই ঘটনায় রাজশাহীতে কর্মরত সাংবাদিকরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা গ্রহণ করে পুলিশ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করেছে এবং ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনও যৌথভাবে বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, “সংবিধানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। অথচ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্ব হওয়া উচিত ছিল সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেওয়া। সেখানে উল্টো ভুক্তভোগী সাংবাদিকরাই এখন আসামি। এটি শুধু সাংবাদিক সমাজকেই নয়, গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থাকেও হুমকির মুখে ফেলছে।” এ ঘটনায় বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। গণমাধ্যম আইন ও স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ গণমাধ্যমকর্মী সুরক্ষা আইন এবং সংবিধানে থাকা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এখানে চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, এ ধরনের মামলা গণমাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং সত্য প্রকাশের পথ রুদ্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরএমপি’র মিডিয়া মুখপাত্র গাজিউর রহমানকে (এডিসি) একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কথা বললে আরএমপি’র কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি’র মামলা সম্পর্কে আমি জানি। ঘটনার তদন্ত চলছে। কেউ নির্দোষ হলে তার নাম তদন্ত শেষে বাদ দেওয়া হবে।#