পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর ২০২৪উপলক্ষে অতিদরিদ্র, দুঃস্থ, অসহায় ও কর্মহীনদের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র উপহার বিতরণে বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদে ব্যাপক দুর্নীতি অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল ২০২৪)চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়ন ভিজিএফ এর খাদ্য বিতরণে নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে গরীব দুঃস্থ অসহায় অতিদরিদ্রের বঞ্চিতো করে স্বজন প্রীতি কার্ড বিতরণ ও ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মেম্বার, মহিলা মেম্বার ,চেয়ারম্যান সহ যে বালতিতে ওজন করা হয় সেই বালতি সহ সবাই এর সাথে জড়িত। নীতিমালা অনুযায়ী ভিজিএফ বরাদ্দের ক্ষেত্রে দুঃস্থ, অতিদরিদ্র ব্যক্তি বা পরিবারকে এ সহায়তা প্রদান করতে বলা হয়েছে। ভিজিএফ কার্ডপ্রতি মিলবে ১০ কেজি চাউল। সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ দুঃস্থ ও অতিদরিদ্র পরিবারকে অগ্রাধিকার দিতে বলা হয়েছে।
আমাদের অনুসন্ধান টিম সরজমিনে গিয়ে প্রত্যেকটা ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে অনুসন্ধান চালায়। ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ থাকায় গোপনে ওজন দেওয়া মিটারের উপর ভিডিও ধারণ করা হয়।ধারণকৃত ভিডিও ক্লিপে দেখা যাচ্ছে প্রথম ব্যক্তি ১০ কেজি চাউল পাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে তাকে দেয়া হয়েছে (৯কেজি ৮০ গ্রাম) যে বালটিতে ওজন করা হয় বালটির ওজন বাবদ বিয়োগ হবে ২৫০ কিলোগ্রাম। তাহলে সে পেল ৯০৮০-২৫০=৮৮৩০ কিলোগ্রাম গ্রাম।
দ্বিতীয় ব্যক্তিকে ৮৮১০-২৫০=৮৫৫০কিলোগ্রাম, তৃতীয় ব্যক্তিকে ৯১৪০-২৫০=৮৮৪০কিলোগ্রাম দেওয়া হয়েছে। এমনই এক বিরল চিত্র উঠে এসেছে ভিডিও চিত্রে।এমনকি মানুষের ফ্রেশ দেখে পূর্ণ (৯ কেজি) চাউলের ওজন দেয়া হয়েছে এমন ও অভিযোগ করেছে অনেকে। ধারণকৃত ভিডিওতে অনেকেই বলতে শোনা যাচ্ছে (৭-৯ কেজি )পর্যন্ত চাউল দেওয়া হয়েছে। আবার অনেককে বলতে শোনা যাচ্ছে তারা নিজের চোখের সামনে ওজন করে নিয়ে আসছে ৯কেজি বাইরে ওজন করতে গিয়ে সেখানে দেখাচ্ছে ৮ কেজি ৭৫০ কিলোগ্রাম ।এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয়, যে বালতি দ্বারা চাল ওজন করে দেওয়া হয়েছে। সে বালটির ওজন প্রায় ২৫০ কিলোগ্রাম । তাহলে দেখা যাচ্ছে বালতিও ২৫০কিলোগ্রাম দুর্নীতি করছে। যদি কার্ড প্রতি প্রায় ২৫০ গ্রাম চাউল কম দেওয়া হয় তাহলে ৫ হাজার ৬৬১টি কার্ডে কি পরিমান চাল দুর্নীতি হয়েছে ভাবতেই অকল্পনীয় মনে হয়।
বেশ কয়েকজনের কাছে সাক্ষাৎকার নিলে সবাই সব অভিযোগের তীর ছুড়ে দেয় মেম্বার ,চেয়ারমানের দিকে। এমনকি কয়েক জনকে বলতে শোনা যাচ্ছে ইউপি সদস্য তো দূরের কথা ইউনিয়ন পরিষদের যে বালতি দ্বারা ওজন করা হয়, সে বালতি ও প্রায় ২৫০ কিলোগ্রাম চাউল দুর্নীতি করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি বলেন: আমরা গরীব দুঃস্থ অসহায় অতিদরিদ্র মানুষ আমাদের শরীরে তেমন শক্তি নেই এমনকি পকেটে টাকা পয়সা নেই তাই আমরা ১টি ও ভিজিএফর কার্ড পায় না।
সমাজে যারা আর্থিক ভাবে সচল মোটরসাইকেলে গিয়ে দুই তিন বস্তা করে চাউল নিয়ে আসতে পারবে ,তাদেরকেই দশটা করে কার্ড দেয়া হয় ।আর আমাদের মত গরিব অসহায় অতি দরিদ্রদের কপালে একটাও জুটে না। যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজে গরীব দুঃস্থ অসহায় সাধারণ মানুষের জন্য ১০ কেজি বরাদ্দ দিয়েছে। সেখানে চেয়ারম্যান গণ কিভাবে ৮/৯ কেজি দিতে পারে? বেশি স্মার্ট হতে গিয়ে এক বালতি বা প্লানসিটের তৈরী ডামে করে চাউল দিয়ে দিচ্ছে । ইউনিয়ন পরিষদের বাইরে ওজন মাপলে দেখা যায় ৮/৯কেজি হয় । গরীব মানুষ দেখে ও না দেখার ভান করে নিয়ে চলে আসছে। প্রতিবাদ করার সাহস থাকলেও, আগামীতে মেম্বার ,চেয়ারম্যান দ্বারা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছে না।
এ বিষয়ে: বিনোদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহুল আমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন: গত বছর ৯ কেজি ৫০০ গ্রাম করে দেয়ার কারণে ৪০ মণ চাউল শট পড়েছিল। আমি ৪০ মণ চাউল ক্রয় করে এনে বিতরণ করেছিলাম । সেই জন্যই এবারের ভিজিএফ চাউলের ওজন ৯ কেজি দেওয়া হয়েছে। অল্প কিছু চাউল বেশি হয়েছিল সেগুলো গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
একজন ব্যক্তি ১০ থেকে ২০ টি চাউলের স্লিপ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন : আমি দিয়েছি ১টি, মেম্বার দিয়েছে ৫টি ,মহিলা মেম্বার দিয়েছে ৭টি ,দলীয়ভাবে পেয়েছে ৫টি এভাবেই তারা ১০থেকে ২০টি স্লিপ সংগ্রহ করে। উক্ত বিষয়ে : উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোহা আরিফুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।#