চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি……………………………………..
বাংলাদেশ গণআজাদী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দুইবার অংশ নিয়েছেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। দু’বারই হয়েছেন পরাজিত। তবে পরাজিত হলেও তিনি নিজেকে পরিচয় দেন এমপি হিসেবে। এই পরিচয় বহন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জোরপূর্বক জমি দখল, অবৈধ বালুমহল, সুদের কারবারের মাধ্যমে হয়রানী, মাদক ব্যবসা ও নর্তকী নিয়ে নানা কুকর্মসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে এক গণআজাদী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া গণআজাদী লীগ জেলা শাখার সভাপতি বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করতে পারেন না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে বা প্রতিবাদ করলেই বজলুর রহমানের বাহিনী দিয়ে হামলা ও মিথ্যা মামলার শিকার হতে হয় স্থানীয়দের। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে অভিযোগ দিয়েও মেলেনা সুরাহা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুইবার অংশ নিয়ে পরাজিত হয়েছেন গণআজাদী লীগ নেতা সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের দক্ষিণচরী মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা বজলুর রহমান। নির্বাচনে পরাজিত হলেও এমপি পরিচয় ব্যবহার করে হয়েছেন অপরাধ জগতের সম্রাট।
২০১৮ সালে ২ হাজার বোতল ফেনসিডিলসহ আটক হয়ে জেলে থাকলেও জামিনে ফিরে এসে আবারও শুরু করেন নানা অপকর্ম। জাতীয় দিবসের নামে প্রতিবছর ভাড়াটে নর্তকী দিয়ে অশ্লীল নৃত্যের আসর বসান বজলুর রহমান। বজলুর রহমানের এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়ির সামনের মূলফটকেও লেখা রয়েছে বজলুর রহমান এমপি। এই এমপি পরিচয়ে নিজের মাস্তান বাহিনী দিয়ে এলাকায় জোরপূর্বক জমি দখল করেন বজলুর রহমান। এমনকি এই তালিকায় বাদ যায় না ভাই, ভাবীসহ আত্বীয় স্বজনদের জমি দখলও। বজলুর রহমানের এমন অপকর্ম ও অপরাধের কারণে লজ্জিত তার আত্বীয় স্বজনরাও।
স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম বলেন, এলাকায় তার ব্যাপক প্রভাব। কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারে না। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই হতে হয় মামলা-হামলার শিকার। এলাকায় তার গুন্ডা বাহিনী দিয়ে জোরপূর্বক জমি দখল ও অবৈধ বালুমহল পরিচালনা করে বজলু। কয়েক বছর আগে প্রায় দেড় হাজার বোতল ফেনসিডিলসহ আটকের পর জেল থেকে বেরিয়ে এসে আবারও তার কার্যক্রম শুরু করেছে।
স্থানীয় কলেজ শিক্ষক তারেক রহমান বলেন, সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া ব্যক্তি নি:সন্দেহে সম্মানিত লোক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু বজলুর রহমান যেসকল কাজ করে তা খুবই দু:খজনক ও অপ্রত্যাশিত। এতোবড় একজন মানুষ জাতীয় দিবসগুলোতে এলাকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে বাইরে থেকে নর্তকী নিয়ে অশ্লীল বেহায়াপনা নৃত্য করে। এসব অসামাজিক কাজে অনেকেই বাধা দিলেও তার তোয়াক্কা করে না বজলুর রহমান। সুদের টাকা দিতে না পারায় জমি দখল করেন এক স্বামী পরিত্যক্তা নারীর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী বলেন, পারিবারিক অনটনের কারণে বজলুর রহমানের কাছে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলাম। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকাগুলো পরিশোধ করতে পারিনি। পরে লোকজন নিয়ে এসে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দখলে নেয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে বলেও কোন লাভ হয়ন, তারা কিছুই করে দিতে পারেনি। অভিযোগ রয়েছে, বজলুর রহমান তার আপন ভাই জাব্বার আলীর স্ত্রী নারগিস বেগমের জমি জোরপূর্বক দখল করেছেন। এমনকি বাধা দিতে গেলে মারধর ও মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন ভাই-ভাবীসহ আত্নীয় স্বজনদের। বজলুর রহমানের ভাবী নারগিস বেগম বলেন, বাড়ির পাশেই পৈত্রিক সূত্রে সাড়ে ৮ কাঠা ফসলী জমি পায়। সেই জমির দু’ দিকেই জমি রয়েছে। তাই পুরোটাই তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে নিয়ে দখল করেছে। কাগজপত্র কিছুই না থাকলেও শুধুমাত্র পেশিশক্তির উপর ভর করে এসব করছে। বাড়িতে লোকজন নিয়ে হামলা করেছে, ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
বলজুর রহমানের ভাতিজা ওবাইদুল হক জানান, পারিবারিকভাবেই আমাদের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। তবে আমার চাচার অশ্লীল গানবাজনা, সুদের কারবার, জোরপূর্বক জমি দখল, মাদকের কারবার করার কারণে আমাদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। আমরা বারবার বললেও তাকে সংশোধন করাতে বর্থ্য হয়েছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকেও পাত্তা দেন না বলজুর রহমান। এমনকি তার ভয়ে থাকেন স্থানীয় চেয়ারম্যান-ইউপি সদস্যরা।
গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা জনপ্রতিনিধি হলেও নানাভাবে আমাদেরকেই হয়রানী করে বজলুর রহমান। তার বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেয়ার সক্ষমতা নেই আমাদের। সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে গেলেও সে পরিচয় দেয় এমপি হিসেবে। এমনকি তার বাড়ির সামনেও লেখা রয়েছে বজলু এমপি। গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম টিপু এবিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে তিনি জানান, বজলুর রহমান একজন ভন্ড প্রকৃতির লোক। সে জীবনেও কোনদিন নির্বাচনে জয়ী হতে পারেনি। অথচ এমপি পরিচয় দিয়ে এলাকায় নানা অপকর্ম করে।
সকল অভিযোগ অস্বীকার করে এমপি পরিচয় নিয়ে কোন সমস্যা নেই বলে জানান, গণআজাদী লীগ নেতা বজলুর রহমান। তিনি বলেন, আমি দু’বার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। পরাজিত হলেও জনগণ আমার নামের শেষে এমপি লাগিয়ে বজলু এমপি নামে চেনে। অন্যদিকে, মাদক, সুদ, অবৈধ বালুমহল, জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। বাড়ির গেইটে এমপি লেখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষ যাতে সহজেই বাড়ি চিনতে পারে তাই টাইলস দিয়ে নামের শেষে এমপি ব্যবহার করেছি। এতে কোন সমস্যা নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পুলিশের দাবি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই নেয়া হবে ব্যবস্থা। সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, এমপি না হয়েও এমপি পদ ব্যবহার করলে তা মারাত্মক অপরাধ হিসেবে গন্য হবে। এমন কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এনিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে নারাজ জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন। তবে তিনি জানান, এটি কেউ করতে পারেনা। এতে সম্মানজনক একটি পদের অবমাননা হয়। এমনটি হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, এর আগেও বজলুর রহমানের নর্তকী নিয়ে নৌকায় ও জাতীয় দিবসের অশ্লীল নাচের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।#