বিশেষ প্রতিনিধি…………………………………………………
মরদেহ দাফনের জন্য কবর খনন করা হলেও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে দেওয়া মৃত্যু সনদ আর পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে মিল না পাওয়ায় মৃত্যু রহস্য নিয়ে সন্দেহ হয়। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বাঘা উপজেলার হরিরামপুর গ্রামে।
শুক্রবার(১৮ আগষ্ট) সকালে শর্মিলী খাতুন মিলির মরদেহ নিজ বাড়িতে এনে কবর খনন করে দাফনের প্রস্তুতি নেয় পরিবার। অস্বাভাকি মৃত্যুটি রহস্যজনক বলে জানতে পারে বাঘা থানা পুলিশ। পরে মরদেহ দাফনে বাঁধা দিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য রামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে দেয়।
জানা যায়, ঢাকার দোহার থানার “জয়পাড়া ক্লিনিক ’’ এ সেবিকা(নার্স) হিসেবে কর্মরত ছিলেন,উপজেলার হরিরামপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুস এর অবিবাহিত মেয়ে শর্মিলী খাতুন মিলি (২৪)। থাকতেন সেই ক্লিনিকের ৫ম তলার একটি কক্ষে। বৃহস্পতিবার(১৭ আগষ্ট) রাত সাড়ে ৭টায় ধানমন্ডির সুপারমাক্স হেলথ কেয়ার নামের একটি বেসরকারী হাসপাতালে সে মারা যায়। এর আগে বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে তার কর্মরত ক্লিনিক থেকে সুপারমাক্স হেলথ কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে “জয়পাড়া ক্লিনিক ’’ এ কর্মরত ছিলেন শর্মিলী খাতুন মিলি।
পুলিশ জানায়, মরদেহ বাড়িতে আনার পর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহৃ দেখতে পান স্থানীয়রা। তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে কিনা এমন সন্দেহে পুলিশকে জানান তারা। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তেও গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহৃ পাওয়া গেছে।
মৃত সেবিকা (নার্স) মিলির দুলাভাই মোতালেব হোসেন জানান,বৃহসপতিবার রাতে মুঠোফোনে ক্লিনিক থেকে খবর দেওয়া হয় শর্মিলী খাতুন মিলি আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে রাতেই সেখানে পৌঁছেন। শুক্রবার সকালে মরদেহ নিজ বাড়িতে এনে দাফনের প্রস্তুতি নেন। তবে আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই শর্মিলী খাতুন মিলির মরদেহ নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয় বলে জানান মোতালেব হোসেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মান্নান আলী জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন তার গলায় ও শরীরে দাগ ছিল। পরে বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানান এবং পরিবারের সাথে কথা বলে বাঘা থানাকে অবগত করান । ক্লিনিক কর্র্তপক্ষের ভাষ্য, তার কক্ষে গলায় উড়না প্যাঁচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় শর্মিলী খাতুন মিলিকে উদ্ধার করে জরুরি চিকিৎসার জন্য বেসরকারি ওই হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে হার্ট এ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। ক্লিনিকের পরিচালক দেলোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ঘটনার সময় ঢাকায় ছিলাম। স্টাফের মাধ্যমে জানেন, শর্মিলী তার ঘরে গলায় ফাঁস দিয়েছেন। তখন তার চিকিৎসার জন্য ভালকোন হাসপাতালে নিতে বলি এবং তার দুলাভাই মোতালেবকে মুঠোফোনে কল করে বিষয়টি জানান । ক্লিনিকে চাকুরি কালে প্রবাসির সাথে শর্মিলীর প্রেমের কথা শুনেছেন বলে জানান তিনি। ছাড়পত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, যেখানে মারা গেছে, সেখান থেকে দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে ধানমন্ডির সুপারমাক্স হেলথ কেয়ার হাসপাতাল থেকে মৃত্যু সনদ দেওয়া প্যাডের নম্বরে কল দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায় ।
বাঘা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সবুজ রানা বলেন, হাসপাতালের ছাড়পত্র ও প্রাথমিক তদন্তে মিল পাওয়া যায়নি। এতে মৃত্যু রহস্য নিয়ে সন্দেহ হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ বিষয়ে ইউডি মামলা দায়ের করা হয়েছে।#